দুই দশক ধরে প্রতি রমজানে হোয়াইট হাউজে বিশিষ্ট মুসলিম আমেরিকানদের জন্য ইফতারের আয়োজন করে আসছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টরা। এবারো ইফতারের প্রস্তুতি চলছিল, কিন্তু মঙ্গলবারই সেই আয়োজন বাতিল করা হয়।
হোয়াইট হাউজ বলেছে, ইফতারের পরিবর্তে তারা কেবল মুসলিম সরকারি কর্মচারীদের জন্য খাবারের আয়োজন করবে এবং মুসলিম আমেরিকান সম্প্র্রদায়ের কয়েকজন ব্যক্তিত্বের সাথে পৃথক বৈঠক করবে।
মুসলিম আমেরিকানরা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ইফতারের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করায় বাতিল হয়ে গেছে হোয়াইট হাউজের এবারের ইফতারের আয়োজন। গাজা যুদ্ধে ইসরাইলকে সমর্থনের প্রতিবাদেই প্রতিক্রিয়া এসেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুই ব্যক্তি জানান, মুসলিম সম্প্র্রদায়ের সদস্যরা হোয়াইট হাউজের আমন্ত্রণে অংশ নেয়ার বিরুদ্ধে নেতাদের সতর্ক করার পরে মঙ্গলবার এই আমন্ত্রণে অংশগ্রহণ করতে অস্বীকার করেন নেতারা।
কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনসের (সিএআইআর) উপপরিচালক অ্যাডওয়ার্ড আহমদ মিচেল বলেন, প্রাথমিকভাবে যেতে রাজি হওয়া আমন্ত্রিতরাসহ অনেকে ইফতারে অংশ নিতে অনাগ্রহ দেখানোর কারণে অনুষ্ঠানটি বাতিল করা হয়েছে।
আলজাজিরাকে তিনি বলেন, আমেরিকান মুসলিম সম্প্র্রদায় একেবারে শুরুতেই বলেছিল, যে হোয়াইট হাউজ গাজায় ফিলিস্তিনিদের অনাহারে মারতে ও হত্যা করতে ইসরাইলি সরকারকে সহায়তা করছে, সেই একই হোয়াইট হাউজের সাথে খাবার খাওয়া আমাদের জন্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না।
গত সোমবার সংবাদমাধ্যম সিএনএন এবং এনপিআরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, হোয়াইট হাউজ একটি ছোট পরিসরে ইফতারের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে গতকাল মঙ্গলবারই হোয়াইট হাউজ ঘোষণা করে, ইফতারের পরিবর্তে তারা কেবল মুসলিম সরকারি কর্মচারীদের জন্য খাবারের আয়োজন করবে এবং মুসলিম আমেরিকান সম্প্র্রদায়ের কয়েক ব্যক্তিত্বের সাথে পৃথক বৈঠক করবে।
ইফতার বাতিল হয়ে যাওয়ায় ইসরাইলের প্রতি নিঃশর্ত সমর্থনের কারণে মার্কিন আরব ও মুসলিম সম্প্র্রদায়ের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ থামাতে বাইডেনের ব্যর্থতা ফুটে উঠেছে। সমালোচকেরা সতর্ক করে বলছেন, আগামী নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় এই ক্ষোভ বাইডেনের জন্য ব্যালট বাক্সে বিপদ ডেকে আনতে পারে।
গত দুই দশক ধরেই মার্কিন প্রেসিডেন্টরা বিশিষ্ট মুসলিম আমেরিকানদের সাথে ইফতারের আয়োজন করে আসছেন। হোয়াইট হাউজের অন্যান্য ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রতিফলন করতে রমজানে ইফতার মুসলিম সম্প্র্রদায়ের উদ্যাপন হিসেবে কাজ করেছে।
হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র ক্যারিন জ্যঁ পিয়েরে নিশ্চিত করে বলেন, বাইডেন ও তার ভাইস প্রেসিডেন্ট কামলা হ্যারিস মুসলিম নেতাদের সাথে ইফতারের বদলে বৈঠক করবেন।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তারা জরুরি বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার সুযোগ নিশ্চিত করতে চেয়েছেন। তাদের কাছে ইফতারের চেয়ে এটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। আমরাও তা শুনেছি এবং ওই অনুসারে, আয়োজন করেছি।
গত ছয় মাসে মুসলিম সম্প্র্রদায় তাদের অবস্থান জানান দিয়ে দিয়েছে উল্লেখ করে বেশ কয়েকজন মার্কিন মুসলিম অধিকারকর্মী বলেন, এই বৈঠক হবে আরেকটি নিরর্থক ‘ফটোসেশন’।
আমেরিকান মুসলিমস ফর প্যালেস্টাইনের উন্নয়ন পরিচালক মোহাম্মদ হাব্বেহ বলেন, আমরা যতই বৈঠক করি, যতই আলোচনা করি হোয়াইট হাউজ তাদের অবস্থান বদলায়নি। ইসরাইলের প্রতি বাইডেনের সমর্থন যত দিন না বন্ধ হচ্ছে, তত দিন পর্যন্ত তিনি মুসলিম আমেরিকান সম্প্র্রদায়ের প্রতি যত্নশীল- এমন দাবি করতে পারবেন না।
হাবেহ আল জাজিরাকে বলেন, এসব ফটোসেশন ও আলোচনার মাধ্যমে তারা যেকোনোভাবে দেখাতে চায় যে মুসলিম সম্প্র্রদায় এখনো তাদের সমর্থন করে। এসব তাদের আসল রং বেরিয়ে আসার পর নিজেকে ভালো দেখানোর করুণ প্রচেষ্টা মাত্র। গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে আরব ও মুসলিম সম্প্র্রদায়ের সাথে বেশ কয়েকটি অব দ্য রেকর্ড বৈঠক করেছে বাইডেন প্রশাসন।
এ ধরনের বৈঠক নিয়ে আরো একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, বাইডেন প্রশাসন নির্দিষ্ট কিছু মানুষের সাথেই সাক্ষাৎ করছেন। প্রশাসনের সাথে ঘনিষ্ঠ এক মুসলিম অধিকারকর্মী হোয়াইট হাউজ বৈঠকের জন্য বিশ্বস্ত ফিলিস্তিনি আমেরিকান নেতাদের তালিকা দিলেও প্রশাসন তা প্রত্যাখ্যান করে।
২০২০ সালের নির্বাচনে বাইডেনকে সমর্থনকারী একটি মুসলিম রাজনৈতিক সংগঠন এমগেজ বলেন, তারা গতকাল মঙ্গলবারের বৈঠকের জন্য আমন্ত্রণ পেয়েছেন তবে ইসরাইলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নিঃশর্ত সমর্থনের কথা উল্লেখ করে অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
এমগেজের সিইও ওয়াএল আলজায়াত এক বিবৃতিতে বলেন, ‘প্রচণ্ড যন্ত্রণা ও দুর্ভোগের এই মুহূর্তে আমরা হোয়াইট হাউজকে এই সমাবেশ স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছি।
হোয়াইট হাউজের নির্বাচিতদের পরিবর্তে মুসলিম সম্প্র্রদায়ের পছন্দের প্রতিনিধিদের সাথে একটি যথাযথ নীতি সভার আহ্বান জানিয়েছি আমরা। বাইডেনের কাছে বেশ কয়েকটি দাবি উত্থাপন করেছে এমগেজ।
দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- গাজায় তাৎক্ষণিক ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, জাতিসঙ্ঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের সংস্থার অর্থায়ন পুনর্বহাল করা ও ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের জন্য বৈধ রাজনৈতিক পন্থা অবলম্বন করা।
আলজায়াত বলেন, এমগেজ উপরোক্ত দাবি পূরণে প্রচেষ্টাকে সমর্থন করতে প্রস্তুত। তবে আমরা বিশ্বাস করি না যে ফিলিস্তিনিদের মুখপাত্র এবং নীতি বিশেষজ্ঞদের ছাড়া আজকের বৈঠক এমন কোনো সুযোগ তৈরি হবে।
ফিলিস্তিনি আমেরিকান রাজনৈতিক কৌশলবিদ হেবাহ কাসেম একই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কাসেম আলজাজিরাকে বলেন, ‘প্রশাসন কৌশলে বাছাই করছে বৈঠকে কে কে থাকবেন। তারা এমন মানুষদের বেছে নিচ্ছে, যারা তাদের কর্মকাণ্ড এবং নীতির সমালোচনা করবেন না।
তিনি আরো বলেন, কে আমাদের প্রতিনিধিত্ব করে তা কেন আমরা তাদের বেছে নিতে দিচ্ছি? এসব বৈঠকের ফলে কোনো পরিবর্তন আসেনি। যা হয়েছে তা হলো- বাইডেন ইসরাইলের প্রতি তার সমর্থন দ্বিগুণ করেছেন এবং ইসরাইলে অস্ত্র সরবরাহ বাড়িয়েছেন।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post