রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা ও বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম খান। সম্প্রতি মোবাইলে অপরিচিত নম্বর থেকে একটি ফোন পান। ফোন ধরতেই অপর প্রান্ত থেকে এক নারী ইংরেজি বলে তিনি কি ইংরেজি বোঝেন?
‘হ্যাঁ’ বললে তাকে ঘরে বসেই ভালো আয়ের চাকরির প্রস্তাব দিয়ে আগ্রহী কি না জানতে চাওয়া হয়। পরে অন্যদের জানালে তাদের কয়েকজনও একই প্রস্তাব পাওয়ার কথা জানান। তবে মোবাইল নম্বর ভিন্ন ভিন্ন। বিষয়টি পরীক্ষা করতে দুটি নম্বরে ফোন করলে বলা হয়, নম্বরটি ব্যবহার হচ্ছে না।
পুলিশ কনস্টেবল রাজু। একদিন তার হোয়াটসঅ্যাপে অপরিচিত নম্বর থেকে একটি অফার আসে। ১০০ টাকা বিনিয়োগ করলে মিলবে ৫০০ টাকা। ১০০ টাকা দিয়ে ৫০০ টাকা পেয়েও যান। এরপর কয়েকবার টাকা দিয়ে চার গুণ লাভ পান তিনি। শেষবার ১০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে কোনো টাকাই পাননি তিনি। তার নম্বরও ব্লক করা হলে বুঝতে পারেন, প্রতারক চক্রের ফাঁদে পড়েছেন।
শুধু জাহিদুল ইসলাম কিংবা রাজুই নন, মোবাইল ফোনে আসা উচ্চ আয়ের চাকরির প্রলোভনে পড়ে টাকা কিংবা তথ্য দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন অনেকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিজ্ঞাপন, এসএমএস (খুদে বার্তা) পাঠিয়েও ফাঁদে ফেলা হচ্ছে মানুষকে। হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে বিপুল অঙ্কের টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত মার্চের প্রথম সপ্তাহেই ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সাইবার শাখায় তিন শতাধিক ব্যক্তি এমন ফাঁদে পড়ে টাকা খোয়ানোর অভিযোগ করেছেন। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সাইবার শাখার কর্মকর্তারা বলছেন, এটি ‘টেলিগ্রাম স্ক্যাম’।
চীনা প্রতারকেরা এটি চালায়। বেশ কয়েকটি দেশে এরা এমন প্রতারণা করছে। বাংলাদেশে চক্রটির প্রতারণায় সহায়তা করছে এ দেশেরই কিছু প্রতারক। চক্রটির মূল কার্যালয় দুবাইয়েও কিছু বাংলাদেশি কাজ করেন। পুলিশ এই চক্রের ফাঁদ সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক থাকতে পরামর্শ দিয়েছে।
অভিযোগগুলো বিশ্লেষণ করে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সাইবার শাখা বলছে, প্রতারকদের প্রস্তাবে রাজি হলে মানুষকে টেলিগ্রাম গ্রুপে ঢুকতে বলা হয়। বলা হচ্ছে, চক্রের কথামতো মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে টাকা দিলে অতিরিক্ত মুনাফার লোভেও অনেকে বেশি টাকা বিনিয়োগ করেন।
ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান ও অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় কিংবা ঘরে বসে পাওয়া যেকোনো চাকরির প্রস্তাবই প্রতারণা। এমন প্রতারণায় জড়িত দেশি চক্রের বেশ কয়েকজনকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
পুলিশ সূত্র বলছে, টেলিগ্রাম অ্যাপের সঙ্গে নামে মিল থাকা টেলিগ্রাম স্ক্যামে ভয়েস কল, এসএমএস, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবারসহ কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতারণার জাল বিছানো হয়েছে। বিনিয়োগে কয়েক গুণ লাভ এবং চাকরির প্রলোভনে মানুষকে প্রলুব্ধ করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারকেরা।
ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, অন্যদের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে কেনা সিম এই প্রতারণায় ব্যবহার হয়। ফলে প্রতারকদের শনাক্ত করা যায় না।
সাইবার বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা গণমাধ্যমকে বলেন, শুধু টেলিগ্রাম স্ক্যাম না, অনলাইনে এমন কোনো প্রস্তাবের লোভে পড়া উচিত নয়। এমনকি কোনো প্রস্তারের নামে ফিশিং লিংকেও ক্লিক করা ঠিক নয়। ক্লিক করলেও পড়তে হবে প্রতারকদের ফাঁদে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post