চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে প্রাইভেটকারে করে হাটহাজারী যাচ্ছিলেন ব্যবসায়ী নুর উদ্দিন আশরাফী। এ সময় তার সঙ্গে ছিল প্রবাসী স্বজনদের পাঠানো ৩০০ গ্রাম সোনার অলংকার, তিনটি ল্যাপটপসহ আরও কিছু মূল্যবান উপহারসামগ্রী।
আবুধাবিফেরত তিন যাত্রীর মাধ্যমে এসব ‘উপহারসামগ্রী’ পাঠান আশরাফীর স্বজনরা। পথে বায়েজিদ থানার রিংরোড এলাকায় কয়েকজন মিলে আশরাফীর গাড়ির পথরোধ করে।
নিজেদের কাস্টমস কর্মকর্তা ও ডিবির সদস্য পরিচয় দিয়ে তারা আশরাফীকে জানায়, তাদের কাছে চোরাই মালামাল বহনের গোপন তথ্য আছে।
এরপর আশরাফীর কাছে থাকা সব মালামাল নিজেদের হেফাজতে নিয়ে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়ার কথা বলে আশরাফীর প্রাইভেটকারের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের কাছে নেয় তারা।
পরে কোতোয়ালি থানা এলাকায় টাইগারপাস মোড়ের কাঠের বাংলোর সামনে এনে আশরাফীকে দাঁড় করায় তারা। একপর্যায়ে আশরাফীকে সেখানে রেখে সটকে পড়ে ডিবি সদস্য পরিচয় দেওয়া ব্যক্তিরা।
গত ২৫ মার্চ ঘটা এই ঘটনার তিন দিন পর ২৮ মার্চ কোতোয়ালি থানায় অজ্ঞাতনামা তিন ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করেন আশরাফী। মামলার এজাহারে এসব তথ্য উল্লেখ করেছেন নুর উদ্দিন আশরাফী।
সেই মামলার তদন্ত করতে গিয়ে একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সন্ধান পেয়েছে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। বিমানবন্দরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এই চক্রের প্রধান টার্গেটই হলো বিদেশফেরত প্রবাসীরা।
একদম বিমানবন্দর থেকে যাত্রীকে টার্গেট করে অনুসরণ করে নির্জন জায়গায় আটকে ডিবি পরিচয়ে সব হাতিয়ে নেয় এই চক্রের সদস্যরা। পুলিশ বলছে বিমানবন্দর থেকে সোর্সের মাধ্যমে টার্গেট নির্ধারণ করে দীর্ঘদিন এভাবে বিদেশফেরত যাত্রীদের সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে এই চক্র। আর প্রাথমিকভাবে তথ্যদাতা হিসেবে বিপ্লব নামে একজনকে শনাক্ত করেছে পুলিশ।
এর মধ্যে বিপ্লবসহ এই চক্রের মোট পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ছিনতাইকৃত দুটি মোবাইল, ল্যাপটপ, ৮৮.১৯ গ্রাম স্বর্ণসহ স্বর্ণ বিক্রির নগদ দুই লাখ ৪৩ হাজার টাকা।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- সাজ্জাদ হোসেন সিফাত, মুজিবুল হাসান তাসির, মো. শাহাদাত হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম, মো. হানিফ ওরফে আসাদ, মির আহম্মদ বিপ্লব।
পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী মো. শাহাদাত হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম, মো. হানিফ ওরফে আসাদ তিনজনই বিবিসি প্লাস নামে একটি পোর্টালের সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দেয়।
এর আগে, তারা স্বাধীন সংবাদ নামে একটি নিউজ পোর্টালের সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দিত। তাদের মধ্যে শাহাদাত আগেও ২০ হাজার ইয়াবাসহ কোতোয়ালি থানার গোলাম রসুল মার্কেট থেকে গ্রেপ্তার হয়েছিল।
হানিফ বিমানবন্দর থেকে বিদেশফেরত যাত্রীকে অপহরণ ও ডাকাতির দায়ে গ্রেপ্তার হয়েছিল পতেঙ্গা থানায়। তাদের দুজনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় মাদক মামলা আছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মেহেদি হাসান শুভ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘চক্রটি দীর্ঘদিন বিমানবন্দর থেকে বিদেশফেরত যাত্রীদের টার্গেট করে ডিবি পরিচয়ে ছিনতাই করে আসছে।
তারা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের কর্মী হিসেবে পরিচিত। বিপ্লব বিমানবন্দরে সোর্স হিসেবে কাজ করে। সে বাকিদের তথ্য দেয়। বিপ্লবের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গ্রুপের তিন-চারজন মোটরসাইকেলযোগে টার্গেট করা ব্যক্তিকে অনুসরণ শুরু করে।
বিপ্লব একাই এই ধরনের ছয়-সাতটি চক্রের সঙ্গে কাজ করে বলে আমাদের কাছে স্বীকার করেছে। এটি অনেক বড় একটি চক্র।’
বিপ্লব যাত্রীদের তথ্য কীভাবে পায়, এর সঙ্গে বিমানবন্দরের কেউ সম্পৃক্ত আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মেহেদি হাসান বলেন, ‘এই বিষয়ে এখনও নির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাইনি। তবে আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি।’
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post