আজ কানাডা থেকে ওমানে আজ আসছেন নতুন রাষ্ট্রদূত মিজানুর রহমান। গত ২ সেপ্টেম্বর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী তিনি ওমানের নতুন রাষ্ট্রদূত হিসেবে যোগ দিবেন আজ। মিজানুর রহমান এর আগে কানাডার রাষ্ট্রদূত হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
এর আগে তিনি কলম্বো, মস্কো ও ম্যানচেস্টারে কূটনীতিকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি নেদারল্যান্ড ও মিশরের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তিনি সচিব দ্বিপক্ষীয়, মহাপরিচালক প্রশাসন হিসেবেও কাজ করেছেন। রাষ্ট্রদূত মিজানুর রহমান ১৯৮৫ ব্যাচের পররাষ্ট্র ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী মিজান দুই সন্তানের জনক।
নতুন এই রাষ্ট্রদূত ওমানে যোগ দেওয়ার সাথেসাথেই বেশকিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছেন। প্রথম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, অবৈধ প্রবাসীদের নিজ দেশে ফেরত যেতে দীর্ঘদিন পর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছে ওমান সরকার। পূর্বের হিসেবে এবারের সাধারণ ক্ষমার মেয়াদ খুবই অল্প সময়, সুতরাং এই অল্প সময়ের মধ্যেই অবৈধ প্রবাসীদের দেশে পাঠাতে বেশ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে তাকে।
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রম বাজার ওমান
বর্তমানে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রম বাজার হিসেবে দেখা হচ্ছে ওমানকে। সুতরাং এই শ্রম বাজারকে ধরে রাখতেও তাকে কাজ করতে হবে। যেহেতু ওমানে সরকারিভাবে শ্রমিক যাওয়ার তেমন সুযোগ নাই, তাই দালালদের দৌরাত্ম্য বেশি এই দেশে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিছু ভিসার দালাল দেশটিতে নতুন কোনো রাষ্ট্রদূত আসলেই তাকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন, সুতরাং শ্রমিকদের ভিসা ইস্যু নিয়ে তাকে বেশ কাজ করতে হবে।
অপরদিকে, ওমানে ছোট বড় মিলিয়ে উল্লেখ সংখ্যক বাংলাদেশী ব্যবসায়ী রয়েছেন। বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশী প্রবাসী বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (সিআইপি) রয়েছেন এই দেশটিতে। অথচ এই ব্যবসায়ীদের স্বার্থে দূতাবাসের কোনো বিজনেস উইং নেই।
যদিও প্রবাসী ব্যবসায়িদের দীর্ঘদিনের দাবী ছিলো এটি। কিন্তু নানা কারণে ইতিপূর্বের কোনো রাষ্ট্রদূত এই কাজটি করতে পারেননি, তাই ব্যবসায়ীদের স্বার্থে দূতাবাসের একটি বিজনেস উইং চালু করতে তাকে পদক্ষেপ নিতে হবে।
আরো পড়ুনঃ রাষ্ট্রদূতদের একহাত নিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ওমানে প্রবাসীদের শীর্ষে বাংলাদেশীরা রয়েছেন, নন অফিসিয়াল প্রায় ৭ লক্ষাধিক বাংলাদেশী রয়েছেন দেশটিতে। কিন্তু নেই কোনো নিজস্ব বাংলাদেশী বড় হসপিটাল এবং কোনো সুপার মার্কেট। ইতিপূর্বে বাংলাদেশ হাসপাতাল এবং বড় সুপার মার্কেট করতে উদ্যোগ নেওয়া হলেও অদৃশ্য ইশারায় তা আলোর মুখ দেখেনি।
যদিও দেশটিতে বাংলাদেশী ব্যবসায়িদের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়াও দেশটিতে বাংলাদেশী টুপির বিশাল একটি মার্কেট রয়েছে, এইসব সেক্টরে তার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা দেখতে চান ওমান প্রবাসীরা।
ওমানে অবস্থিত বাংলাদেশী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান “বাংলাদেশ স্কুল মাস্কাট” নিয়ে দূতাবাসের সাথে কমিউনিটির সম্পর্কে ফাটল ধরেছে। কমিউনিটির স্বার্থে এবং স্কুল গুলো টিকিয়ে রাখতে তিনি কি পদক্ষেপ নেন, সেই দিকে তাকিয়ে আছেন সকল অভিভাবকরা।
এছাড়া বাণিজ্য ও বিনিয়োগে ওমান বাংলাদেশের অন্যতম বড় পার্টনার হতে পারে। ইতিপূর্বে রোহিঙ্গা ইস্যুতে ওমান ব্যাপক সহযোগিতা করেছে বাংলাদেশকে। দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশ থেকে ব্যাপকভাবে পণ্য আমদানি বৃদ্ধি করতে এবং করোনা উত্তর বাণিজ্যিক সুবিধা আদায় করতে কতটুকু সক্ষম হবেন এটাই দেখার বিষয়।
আরো পড়ুনঃ প্রাকৃতিক সুন্দরের অপরূপ লীলাভূমি ওমান
সর্বশেষ ওমানে শ্রমিকদের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যাংকার সহ দেশটির বিভিন্ন বড় বড় প্রতিষ্ঠানে সফল প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশি রয়েছেন, যারা দেশের ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠায় সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। এইসব প্রবাসীদের সমস্যা ও সম্ভাবনা তুলে ধরতে মিডিয়ার প্রয়োজন অনস্বীকার্য। দূতাবাসে একটি মিডিয়া উইং চালু করা এখন সময়ের দাবী।
সুতরাং তাকে শুধু শ্রমিকদের দিকে নজর দিলেই হবে না। দূতাবাসকে উভয় দেশের সঙ্গে জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিক্ষা, সংস্কৃতির ক্ষেত্রে এবং কমিউনিটির উন্নয়নের দিকেও গুরুত্ব দিতে হবে। নতুন নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত গতদিনের অভিজ্ঞতা দিয়ে সকল ক্ষেত্রে ওমানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবেন এমনটাই প্রত্যাশা করছেন বিশিষ্টজনেরা।
আরো দেখুনঃ
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post