বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এক কোটির ও বেশি বাংলাদেশী প্রবাসী জীবন যাপন করছেন। এদের মধ্যে অনেকেই নানা কারণে দীর্ঘদিন যাবত দেশে আসেন না। তাইতো বিদেশে বসে ওইসব উন্নত দেশের চিত্র দেখে অনেক সময় নিজের দেশকে ছোট মনে করেন অনেকেই। দেশের নানা অব্যবস্থাপনা এবং অনিয়ম নিয়েই বেশি সময় সমালোচনা করেন কিছু প্রবাসী। তবে কেউ কি ভেবে দেখেছেন, বর্তমান সময়ে দেশে কত উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে?
হয়তো অনেকেই দীর্ঘদিন বিদেশে থাকার কারণে দেশের বর্তমান চিত্রটি দেখেন নি। কিন্তু ইদানীং যারা দেশে এসেছেন, তাদের মধ্য থেকে মোহাম্মাদ আলী নামে এক ওমান প্রবাসী তুলে ধরেছেন দেশের বর্তমান সময়ের কিছু বাস্তব চিত্র। আমরা প্রবাস টাইমের পাঠকদের জন্য সেই ওমান প্রবাসী মোহাম্মাদ আলী’র লেখা হুবহু তুলে ধরলাম,
“ছুটিতে দেশে গিয়েছিলাম। গতকাল (১৯-নভেম্বর) ওমানে ফিরেছি। বিদেশ থেকে দেশে গেলে দেশের নানান চিত্র বিদেশের চিত্রের সাথে অজান্তেই তুলনায় মেপে ফেলে আমাদের মন। সেরকম কয়েকটি চিত্রের কথা বলতে যাচ্ছি আমি।
চিত্র-১
দেশে যাওয়ার আগে ওমানে কোভিড টেস্ট করতে হয়েছিল। স্যাম্পল দেয়ার জন্যে হাসপাতালে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। প্রায় তিন ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে স্যাম্পল দিয়েছি। পরদিন আবার দুই ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে হাসপাতাল থেকে রিপোর্ট নিয়েছি।
দেশে থেকে ফেরার জন্যে আবার কোভিড টেস্ট করতে হল। মহাখালী ডিএনসিসি করোনা আইসোলেশন সেন্টারে গেলাম স্যাম্পল দিতে। প্রচুর মানুষ এসেছে স্যাম্পল দিতে। ভয় পেয়ে গেলাম। স্যাম্পল দিতে পারব তো? চমকে উঠবেন না প্লিজ। মাত্র আধা ঘণ্টায় আমি স্যাম্পল দিয়ে বের হয়ে এলাম। পরদিন দুপুরের পরে অনলাইনে রিপোর্ট পেয়ে গেলাম। এই আইসোলেশন সেন্টারের ব্যবস্থাপনা সত্যিই আমাকে চমকে দিয়েছে। বাংলাদেশে এরকম ব্যবস্থাপনায় গর্বিত হব না?
চিত্র-২
সকাল পৌনে এগারোটায় আমার ফ্লাইট। আটটার আগে ঢাকা এয়ারপোর্টে ঢুকতে হবে। টাংগাইল থেকে কয়টায় রওয়ানা দিলে এয়ারপোর্টে আটটার আগে পৌঁছানো যাবে? আমার সকল সুহৃদরা পরামর্শ দিল, আগের দিন ঢাকায় গিয়ে থাকতে। কিন্তু ছেলেমেয়েদের সাথে আরেকটা সন্ধ্যা বেশী কাটানোর লোভে আমি টাংগাইলেই থাকলাম।
আরো পড়ুনঃ রাষ্ট্রদূতদের একহাত নিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
তবে সতর্কতা হিসেবে হাতে সময় রাখলাম বেশী। ভোর পৌনে পাঁচটায় গাড়িতে উঠলাম। পৌঁছুতে পারব কিনা ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করায় সে শুধু হাসল একবার। ভোরেও রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা প্রচুর। ভয় হচ্ছিল, জ্যাম না লেগে যায়। কিন্তু দুই লেনের রাস্তায় চলতে কোন অসুবিধা হল না।
সকাল সাতটায় পৌঁছে গেলাম এয়ারপোর্টে। ড্রাইভারকে বিদায় দিয়ে ভাবলাম, টাংগাইল টু ঢাকা আর ওমানের সোহার টু মাস্কাট এই দুই রাস্তার পার্থক্য কি? অজান্তেই ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠল। এটা নতুন বাংলাদেশ।
চিত্র-৩
দেশে গেলে প্রতিদিন সকালে তাজা সবজি আর মাছ কিনতে বাজারে যেতে ভাল লাগে আমার। এবার সেটা করা হল না। তাতে দুঃখ পাই নি। বরং আমার মিসেস কিভাবে অনলাইনে সবকিছু কেনাকাটা করছে, সেটা দেখে মুগ্ধ হয়েছি।
সংসারের যাবতীয় প্রয়োজনীয় জিনিস সে কিনে ফেলছে অনলাইনে। অনলাইনে বিক্রেতারা বাজারে গিয়ে ভিডিও কল করে দেখাচ্ছে কোন কোন সবজি নিতে হবে, কোন মাছটা কিনতে হবে। আধা ঘণ্টা পরে ঘরে চলে আসছে তাজা সবজি, তাজা মাছ।
আরো পড়ুনঃ প্রাকৃতিক সুন্দরের অপরূপ লীলাভূমি ওমান
ওমানে অনলাইনে আমিও কেনাকাটা করি। কিন্তু সাপ্লাই আসে শপিং মল থেকে। পুরনো সবজি আর হিমায়িত মাছ মাংস বাসায় দিয়ে যায় অর্ডার করার অনেক সময় পরে। নিজে পছন্দ করে কেনার কোন সুযোগের চিন্তাও করা যায় না। কিন্তু তা হচ্ছে টাংগাইলে। বদলে গেছে বাংলাদেশ।
হ্যাঁ, বাংলাদেশকে নিন্দা করবার মতো অনেক কথাই আছে। কিন্তু নিন্দার পাশাপাশি গর্ব করার বিষয় বেড়ে যাচ্ছে এখন। আরও অনেক চিত্রই দেখাতে পারতাম। কিন্তু ফেসবুকের লেখা বেশি বড় করা ঠিক হবে না। আরেকদিন বলা যাবে। আসুন গর্ব করে বলি, ‘বদলে গেছে বাংলাদেশ’।”
আরো দেখুনঃ
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post