প্রবাস থেকে নিঃস্ব হয়ে ফিরছে নারীরা। গত ৬ মাসে সুন্দর ও একটু সুখের আশায় প্রবাসে গিয়ে আদম বেপারিদের কারণে নানা হয়রানি, নির্যাতন, আর বিড়ম্বনায় পড়ে সহায় সম্পদ বিক্রির টাকা আর স্বপ্ন হারিয়ে ৩০ নারী দেশে ফিরে।
সেই নারীদের মুখে শুধুই ফেলে আশা দিনের করুন কাহিনী আর আর্তনাদ। শুধু শূন্য হাতেই নয় শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে অনেকেই এখন অসুস্থ হয়ে আছেন নিজ বাড়িতেই,অনেকেই অর্থের অভাবে চিকিৎসাও নিতে পারছেন না। আবার ফেরত আসা অনেক নারীরাই এখন বাগানে কৃষি কাজ আর সংসার সামলাচ্ছেন।
এদিকে, গাজীপুর ইউনিয়নের ৫টি গ্রামের বহু নারী উন্নত জীবন ও একটু সুখের আশায় স্বপ্নে বিভোর হয়ে সহায় সম্পদ বিক্রি করে দালাল চক্রের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমান।
তবে সেখানে কয়েকদিন থাকার পর নানা নির্যাতন আর কঠোর পরিশ্রম সহ্য করতে না পেরে দেশে ফিরতে মরিয়া হয়ে আছেন। আবার কেউ কেউ নামের বিড়ম্বনা, দালালদের করা জন্মনিবন্ধন ও এনআইডিতে নামের ভুল, সচেতনতার অভাব, মিথ্যা প্রলোভন ও দক্ষতার অভাবসহ নানা কারণে দেশে ফেরত আসতে পারছেন না।
এর আগে, গাজীপুর ইউনিয়নের দুধপাতিল গ্রামের শাহনাজ বেগম সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে বছর চারেক আগে দালালের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে দেশ জর্ডানে যান। কিন্তু পাসপোর্টে লিপিবদ্ধ করা নামের সাথে তার জাতীয় পরিচয়পত্রে নামের মিল না থাকায় দেশে ফিরতে পারছেন না।
আর যদি এ জটিলতা নিয়ে দেশে ফিরলেও দ্বিতীয়বার বিদেশ যাওয়া কঠিন হয়ে পরবে। জর্ডানে জীবনের নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কায় আছেন শাহনাজ বেগম। অথচ দেশে তার ছয় বছরের মেয়ে রোজিনার বিশ্বাস তার মা চকলেট আর পোশাক নিয়ে শিগগিরই বাড়ি ফিরবেন। শিশু রোজিনা মায়ের জন্য অপেক্ষায় থাকে প্রতিদিন।
আর এদিকে, শাহনাজের স্বামী ফারুক মিয়া বলেন, আমি ও আমার মেয়ে তাকে দেশে ফেরত চাই। তবে এখন এ অবস্থায় দেশে ফিরলে দ্বিতীয়বার আবার যেতে চাইলে যেতে পারবে না। আবার যদি ফিরতে হয়, তাহলে জর্ডানে কয়েক মাসের পারিশ্রমিক জামানত রেখে তাকে ফিরতে হবে। তাই ফিরতে পারছে না।
কারন হিসেবে ফারুক মিয়া বলেন, স্থানীয় আদম বেপারি ভুয়া জন্ম নিবন্ধনের মাধ্যমে জোসনার পাসপোর্টে তার নাম লিখিয়েছিলেন পলি আক্তার। এমনকি অন্যান্য তথ্যও জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে মিলছে না। ফলে তিনি এক বছর প্রবাস সৌদি আরবে থাকার পর দেশে এসে দ্বিতীয়বার আর ফিরতে পারেননি।
এদিকে জোসনা জানান, পাসপোর্ট তৈরিসহ সৌদি আরব যাওয়া পর্যন্ত দালালরা আমার কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা নিয়েছিল। সৌদিতে এক বছর গৃহকর্মীর কাজ করে প্রায় ৯০ হাজার টাকা জমাতে পেরেছি, বাকি টাকা লোকসান হয় দ্বিতীয়বার সৌদি আরব ফেরত যেতে না পারায়।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গাজীপুর ইউনিয়নের উসমানপুর, মানিকভান্ডার, দুধপাতিল, বাল্লা ও টেকেরঘাট গ্রামের প্রায় ৬০০ জন নারী মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতে পাড়ি দিয়েছেন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই নারীই সৌদি আরব, দুবাই, ওমান, কাতার ও জর্ডানে থাকেন।
অন্যদিকে জর্ডানে পাঁচ বছর ধরে গৃহকর্মীর কাজ করে আসা রহম আলীর স্ত্রী রাফিয়া আক্তার এখন নানা সমস্যায় ভুগছেন। তিনি জানান, বাংলাদেশী টাকায় ২৫ হাজার টাকা বেতনে একটি বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করতেন। তাকে দিয়ে ঘরের সব কাজ ও বাগান পরিচর্যা করানো হতো। দুপুর ২টার আগে খাবার দেওয়া হতো না, কাজে কোনো ত্র“টি বা ভুল হলে চরমভাবে অপমান করা হতো।
এর আগে, চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মাহবুবুল আলম মাহবুব বলেন, কাগজপত্রের জটিলতার ব্যাপারে প্রবাসী নারীরা উপজেলা প্রশাসনে এলে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে। তাদের দক্ষতা বাড়ানোর ব্যাপারেও আলোচনা চলছে। তবে আদম বেপারিদের প্রতারণার ব্যাপারে নিজেদের সতর্ক থাকা জরুরি।
উল্লেখ্য নামের বিড়ম্বনা, দালালদের করা জন্মনিবন্ধন ও এনআইডিতে নামের ভুল, সচেতনতার অভাব, মিথ্যা প্রলোভন ও দক্ষতার অভাবসহ নানা কারণে মধ্যপ্রাচ্য থেকে নিঃস্ব হয়ে দেশে ফিরছে চুনারুঘাটের অসংখ্য নারী।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post