ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়া জিম্মি কয়লাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর সাথে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুল করিম তথ্যটি নিশ্চিত করেন।
মেহেরুল করিম বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ভারতীয় নৌবাহিনীর দুটি যুদ্ধ জাহাজ পিছু নেয়ার পর সোমালিয়ান জলদস্যুরা এমভি আবদুল্লাহকে উপকূলের প্রায় ৪০ নটিক্যাল মাইল দূরে স্থানান্তর করে গভীর সাগরে নিয়ে যায়।
এরপর থেকেই জাহাজটির নাবিকেরা মালিকপক্ষের সাথে আর যোগাযোগ বা বার্তা পাঠায়নি, এমনকি পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারেননি। জাহাজের ফোন না আসায় জিম্মি হওয়া নাবিকদের স্বজনদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। জলদস্যুরা নিজেরাও কোনো দাবি নিয়ে ফোন না করায় নাবিকসহ জাহাজটি উদ্ধারের জন্য আলোচনা শুরু করা যাচ্ছে না।
এদিকে, মালিকপক্ষ তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে দস্যুদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে যাচ্ছে, তবে গতকাল রাত পর্যন্ত ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি। এমভি আবদুল্লাহর মুক্তিপণের ব্যাপার নিয়ে মধ্যস্বত্বকারীদের ভূমিকা এবং দাবির বিষয়টি ঠিক করতে তারা সময় নিচ্ছে মন্তব্য করে মেহেরুল করিম বলেন, জলদস্যুদের ফোন না আসা পর্যন্ত জাহাজটির মালিকপক্ষের তেমন কিছু করার নেই।
এর আগে, জাহাজটিতে ৫৫ হাজার টন কয়লা রয়েছে এবং কয়লা যে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ পণ্য, তা দস্যুদের বোঝানো সম্ভব হয়েছে। জাহাজটির হ্যাজে থাকা কয়লার তাপমাত্রা ঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। যা শুধু জাহাজ কিংবা জিম্মি হওয়া নাবিকদের নয়, দস্যুদেরও বিপদের কারণ হতে পারে। এজন্য জাহাজের নাবিকদের স্বাভাবিক কাজকর্ম করার ব্যাপারে দস্যুরা অনুমোদন দিয়েছে। এটি ভালো খবর যে, কয়লায় যাতে বিস্ফোরণ না ঘটে সেজন্য নাবিকদের কোনো ক্ষতি জলদস্যুরা করবে না।
এদিকে, চট্টগ্রামে অবস্থানকারী ক্যাপ্টেন আতিক খান জাহাজের এক নাবিকের ভয়েস মেসেজের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, এমভি আবদুল্লাহর নাবিকেরা সবাই সুস্থ আছেন এবং তারা সোমালিয়ার জলদস্যুদের অধীনেই রয়েছেন।
ক্যাপ্টেন আতিক জানান, সোমালিয়ার উপকূলে অগ্রসর হওয়ার সময় ইউরোপ ও ভারতীয় নেভির দুইটি যুদ্ধজাহাজ সোমালিয়ার জলদস্যুদের থামতে বলে, ওয়ার্নিং দিয়ে ইঞ্জিন বন্ধ করতে বলেছে এবং আশপাশের পানিতে গোলাগুলিও করেছে। কিন্তু জলদস্যুরা নেভির কথা শোনার প্রয়োজন মনে করেনি।
এদিকে, জলদস্যুরা মনে করে এমভি আবদুল্লাহর নাবিকরা তাদের ডেকে এনেছে, এতে তারা কিছুটা রাগ করে সবাইকে ব্রিজে ডেকে বন্দুকের মুখে রাখে। পরে ক্যাপ্টেন রেডিওতে ভারতীয় নেভিকে দূরে সরে যেতে বললে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
ক্যাপ্টেন আতিক আরো জানান, জলদস্যুদের দোভাষী হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তি বাংলাদেশের টিভি আর মিডিয়ার ওপর চোখ রাখছে। তাই গুজব রটানো বা নাবিকরা বিপদে পড়ে এমন কিছু যেন মিডিয়ার মাধ্যমে ছড়ানো না হয় সেদিকে সতর্ক থাকার জন্য জিম্মি ক্যাপ্টেন অনুরোধ জানিয়েছেন।
এদিকে, ইইউ ও ভারতীয় নৌবাহিনীর জাহাজ দুটি জিম্মি হওয়া জাহাজটির এক মাইলের মধ্যে থেকে সার্বক্ষণিক নজর রাখছে। যদিও জিম্মি হওয়া নাবিকদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে নৌবাহিনীর জাহাজ গুলো থেকে কোনো অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে, সোমালিয়ার যে উপকূলে এমভি আবদুল্লাহকে প্রথমে নোঙর করা হয়েছিল, সেখানকার শাসনে যারা জড়িত তাদের সাথে দস্যুদের সম্ভবত বনিবনা হয়নি। একই সাথে ইইউ ও ভারতীয় নৌবাহিনীর যুদ্ধ জাহাজ পিছু নেয়ায় এমভি আবদুল্লাহকে দূরে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
এমভি আবদুল্লাহকে স্থানান্তর করার পর থেকেই নাবিকদের আর কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেয়া হয়নি। ফলে জাহাজটির সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতে পারেননি।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post