বুলগেরিয়া, ইরাক, রোমানিয়া এবং বাংলাদেশিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি অভিবাসী পাচার চক্র ভেঙে দিতে অভিযান পরিচালনা করছে রোমানিয়া কর্তৃপক্ষ। এই অভিযানে রোমানিয়া কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করেছে বুলগেরিয়া এবং জার্মানির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
গত মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, সীমান্তরক্ষী ও অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড টেররিজম বিষয়ক অধিদপ্তর (ডিআইআইসিওটি) সীমান্তবর্তী ডলজ, তিমিস, আরাদ, কারাস-সেভেরিন এবং আর্জেস কাউন্টির ৩৩টি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে একটি সংগঠিত অপরাধী গোষ্ঠীর কার্যক্রম ভেঙে দিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, অভিযানে বর্ডার পুলিশের জেনারেল ইন্সপেক্টরেট এবং সংশ্লিষ্ট বিচার বিভাগীয় কাঠামোর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল রোমানিয়া সীমান্ত পেরিয়ে অভিবাসীদের পশ্চিম ইউরোপে পাচারকারী চক্রের কার্যক্রম অনুসন্ধান ও জড়িতদের আটক করা।
এদিকে তদন্তকারীরা বলেন, রোমানিয়া, বুলগেরিয়া, ইরাক এবং বাংলাদেশি নাগরিকদের নিয়ে গঠিত সংগঠিত অপরাধী গোষ্ঠীটি গত বছরের শুরুর দিক থেকে কার্যক্রম শুরু করে। মাথা পিছু মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে তারা অভিবাসীদের পাচার করেছিল। এই অবৈধ এবং সহজ উপায়ে চক্রটি এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ করছিল।
পুলিশি তদন্তে বলা হয়, এই চক্রটি মধ্যপ্রাচ্যের বংশোদ্ভূত অভিবাসীদের জার্মানিসহ বেশ কিছু পশ্চিম ইউরোপীয় দেশে পাচার করত। এই চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন স্তরে কাজ করত। তারা দানিউব নদীর বুলগেরিয়া অংশে অভিবাসীদের নৌকায় উঠিয়ে পরবর্তীতে অভিবাসীদের রোমানিয়ার ডলজ কাউন্টির এলাকায় নিয়ে আসত। সেখান থেকে দেশটির তিমিসুয়ার এবং আরাদ এলাকায় এক থেকে দুই দিন রেখে পশ্চিম ইউরোপের দিকে বিভিন্ন পণ্যবাহী গাড়িতে পাচার করত।
চক্রটি দানিয়ুব নদীর রোমানিয়ান অংশে বিভিন্ন যাত্রীবাহী গাড়িতে ২০ থেকে ৩০ জন অভিবাসীকে লুকিয়ে রাখত। এসব বেআইনি যাত্রার সময় অভিবাসীদের জীবন স্থায়ীভাবে বিপন্ন হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছিল বলে জানায় সীমান্ত পুলিশ।
তদন্তকারীরা আরো বলেন, নেটওয়ার্কটি মাথা পিছু চার থেকে পাঁচ হাজার ইউরোর বিনিময়ে অভিবাসীদের পাচার করেছে। এই অবৈধ মুনাফা তারা বিভিন্ন স্তরে বণ্টন করত। এমন পদ্ধতিতে উপার্জিত অবৈধ অর্থ বিলাসবহুল গাড়ি এবং আবাসিক ভবন ক্রয়ে বিনিয়োগ করেছিল সংঘবদ্ধ চক্রটি।
অভিযান শেষে প্রসিকিউশন জানায়, সীমান্তবর্তী জর্জ, ডলজ, মেহেদিনতি, তিমিস, আরাদ অঞ্চলের টেরিটোরিয়াল বর্ডার পুলিশ সার্ভিসের সহায়তায় এই চক্রটির মাধ্যমে সংগঠিত ২০টি পাচারের ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছে। যার মাধ্যমে এই গোষ্ঠীর সদস্যরা প্রায় ৫০০ জন অভিবাসীকে রোমানিয়ায় ও রোমানিয়ার বাইরে পাচার করার চেষ্টা করেছে।
কর্তৃপক্ষ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিচারিক তদন্ত শুরু করেছে। তবে ঠিক কতজনকে আটক করা হয়েছে এবং কতজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে সেটি নির্দিষ্ট করা হয়নি। অভিযুক্তদের শুনানি সংগঠিত অপরাধ ও সন্ত্রাসবাদ বিষয় অধিদপ্তরের সদরদপ্তরে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে সীমান্ত পুলিশের জনসংযোগ দপ্তর।
রোমানিয়া কর্তৃপক্ষের মানবপাচারবিরোধী এই অভিযানে সহায়তা করেছে বুলগেরিয়া এবং জার্মানির বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ। এছাড়া ইইউর পুলিশ সংস্থা ইউরোপোল থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে সহায়তা পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে মানবপাচারের দায়ে আটক ব্যক্তিরা রোমানিয়ার ফৌজদারি কার্যধারা অনুযায়ী আইনি লড়াই এবং আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ পাবেন।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post