ইতিহাস সৃষ্টি করে বুদাপেস্ট থেকে উড্ডীন উইজ এয়ার এ৩২০ আল মাকতুম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে (যা দুবাই ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল নামে পরিচিত) অবতরণ করে। এটি ছিলো এই বিমানবন্দরে অবতরণকারী প্রথম বাণিজ্যিক যাত্রীবাহী ফ্লাইট, যা বিমানবন্দরটির উদ্বোধনের এক যুগান্তকারী মুহূর্ত হিসেবে চিহ্নিত করে।
দুবাই শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে প্রায় ২০ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে নতুন এই ‘গ্রিনফিল্ড’ বিমানবন্দরটিকে ভবিষ্যতে বিশ্বের বৃহত্তম এবং ব্যস্ততম বিমানবন্দর বানানোর জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। দুবাই ইন্টারন্যাশনাল (ডিএক্সবি) এবং নতুন বিমানবন্দরটি পরিচালনার দায়িত্বে আছে দুবাই বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। তারা জানিয়েছে, আল মাকতুম ইন্টারন্যাশনালের কাজ শেষ হয়ে গেলে এটি বছরে ১৬০ মিলিয়নেরও বেশি যাত্রীর পাশাপাশি ১২ মিলিয়ন টন মালামাল পরিবহন করতে পারবে।
এটি হবে বিশ্বের ব্যস্ততম বিমানবন্দর যেটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হার্টসফিল্ড-জ্যাকসন আটলান্টা ইন্টারন্যাশনালের তুলনায় প্রায় ৬৩ মিলিয়ন বেশি যাত্রী পরিবহনে সক্ষম হবে।
ভবিষ্যতের বিমানবন্দর
২০২৩ সালে আল মাকতুম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অনুষ্ঠিত ‘দুবাই এয়ার শো’ বিমানবন্দরটি সম্পর্ক কিছু চমকপ্রদ ধারণা দেয়ার পাশাপাশি এটার ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছুটা কৌতূহলও তৈরি করতে সক্ষম হয়।
দুবাই বিমানবন্দরের প্রধান নির্বাহী পরিচালক পল গ্রিফিথস সিএনএনকে বলেন, ‘আমরা আমাদের গ্রাহকদের প্রয়োজনীয়তা এবং পরিকল্পনা মেটাতে ডিএক্সবিকে সম্প্রসারণ এবং বিনিয়োগকে অগ্রাধিকার দিয়েছি। সকল সম্ভাব্যতা শেষ না হওয়া পর্যন্ত এটি চলতে থাকবে। ডিএক্সবির বর্তমানে ১০০ মিলিয়ন যাত্রী ধারণ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে সেটিকে ১২০ মিলিয়নে নেয়ার চেষ্টা চলছে।’
গ্রিফিথস বলেন, ২০২৩ সালে আমাদের ধারণা অনুযায়ী প্রায় ৮৬.৮ মিলিয়ন মানুষ এটি ব্যবহার করেছে। আমরা ধারণা করছি, ২০২৪ সালে প্রায় ৮৮.২ মিলিয়ন এবং ২০২৫ সালে প্রায় ৯৩.৮ মিলিয়ন যাত্রী এটি ব্যবহার করবে। গ্রিফিথস নির্দিষ্ট কোন সময়ের কথা না বললেও ২০৩০ সালের মধ্যে একটি সম্পূর্ণ নতুন বিমানবন্দরের প্রয়োজন হতে পারে অধিক ব্যস্ততার জন্য।
নতুন ব্যবসা মডেলের আবির্ভাব
বিমানবন্দরটি দুবাই সাউথ নামে একটি বড় প্রকল্পের কেন্দ্রবিন্দু হবে। প্রকল্প অনুযায়ী, দুবাইয়ের ঠিক দক্ষিণে মরুভূমির ১৪৫ বর্গকিলোমিটার জায়গাজুড়ে একটি সম্পূর্ণ নতুন শহর তৈরি করার কথা চিন্তা করা হচ্ছে। এরইমধ্যে এই নতুন পরিকল্পনার কিছু অংশ দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। এখানে আবাসিক এবং বাণিজ্যিক এলাকা মিলিয়ে আটটি অঞ্চল বানানো হবে যার প্রত্যেকটি নির্দিষ্ট ইন্ডাস্ট্রিসহ অন্য কাজের জন্য বরাদ্দ করা।
বিমানবন্দরটিকে পুরো পরিকল্পনার কেন্দ্রে রেখে একটি সম্পূর্ণ ‘অ্যারোট্রোপলিস’ বানানো হবে। সম্প্রতি ৯৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের এমিরেটস ইঞ্জিনিয়ারিং সেন্টারসহ দুবাইয়ের বিমান চলাচল এবং মহাকাশ শিল্প ইকোসিস্টেমের আয়োজক মোহাম্মদ বিন রশিদ (এমবিআর) এরোস্পেস হাব এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
স্থানীয় বৃহত্তর বিমান পরিবহন সংস্থা এমিরেটস এবং এটির ছোট অংশীদার ফ্লাইদুবাই পূর্বের দুবাই ইন্টারন্যাশনাল বিমানবন্দর থেকে নতুন বিমানবন্দরে স্থানান্তরিত হলেই বড় পরিবর্তন আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই পদক্ষেপটি দীর্ঘদিন ধরে বাস্তবায়নের কথা থাকলেও কবে সেটি ঘটবে তা এখনো অনিশ্চিত।
ইংল্যান্ডের সারে ইউনিভার্সিটির বিমান পরিবহন ব্যবস্থাপনার প্রোগ্রাম লিডার নাদিন ইতানির মতে, এমিরেটসের ডিডব্লিউসিতে স্থানান্তরিত হওয়া মানে এর সঙ্গে অনেক কিছু স্থানান্তর করা।
তিনি বলেন, এটি বৈশ্বিক বিমান ভ্রমণ এবং বৈশ্বিক বাজারের বদলে যাওয়া গতিশীলতার প্রতিক্রিয়া হিসেবে একটি কৌশলগত পুনর্বিন্যাস।বর্তমানে এই অঞ্চলে নতুন এবং বড় বিমানবন্দরগুলোতে বিনিয়োগ করার জন্য একটি প্রতিযোগিতা চলছে এবং এতে কেউ পিছিয়ে থাকতে চায় না।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post