হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, যেখানে নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে কঠোর নিয়মকানুন প্রণয়ন করা হয়েছে, সেখানেই ঘটে গেল চাঞ্চল্যকর ঘটনা।
শুক্রবার সকাল ৭টা থেকে সাড়ে ৭টার মধ্যে এক প্রবাসীর ১টি সোনার বার চুরি করে বাসায় চলে যান কাস্টমস কর্মকর্তা পিংকু রায়। যেখানে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং নিরাপত্তা বেষ্টিত বিমানবন্দরে যাদের কাছে রয়েছে দেশের জনগণের আমানত তারাই এখন রক্ষক যখন ভক্ষক হয়েছেন।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি শাহজালাল বিমানবন্দরের মূল্যবান গুদাম থেকে ৬১ কেজির বেশি সোনা চুরি হয়েছে। যেখানে কাস্টমসের ২ জন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা শহিদুল এবং শাহেদ নিজেরা সোনা চুরির ঘটনায় নিজের সম্পৃক্ততার কথাও বলেছেন। এই শহিদুল এবং শাহেদের কাস্টমসে নিয়োগ হয় রংপুরে।
একই সাথে ঢাকা কাস্টমস হাউসের শাহজালাল বিমানবন্দরের মূল্যবান গুদামে কর্মরত পিংকু রায়েরও নিয়োগ হয় রংপুরে। এ বিষয়ে কাস্টমসের একাধিক কর্মকর্তা জানান, শহিদুল ও শাহেদের খুব আস্থাভাজন এবং প্রিয় হচ্ছেন এই পিংকু রায়। ৬১ কেজি সোনা চুরির রেশ কাটতে না কাটতেই আবারও ঘটলো সোনা চুরির ঘটনা।
শুক্রবার সকাল ৬টা ২০ মিনিটে যাত্রী বেসরকারি ইউএস বাংলার বিএস-৩৪২ ফ্লাইট যোগে দুবাই থেকে শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছান। এরপর বিমানবন্দর থেকে সকল মালামাল সংগ্রহ করে সাথে গোল্ডবারের শুল্ক পরিশোধ করে (১১৬ গ্রাম সোনার বার) ক্যানোপি ২ নম্বর দিয়ে বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে যান।
অতপর যাত্রী মহিবুর রহমান (৩৩) বুঝতে পারেন তার সাথে প্যান্টের মধ্যে থাকা সোনার বারটি নেই। এরপর যাত্রী মহিবুর এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে একটি অভিযোগ দেন। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে এপিবিএন বিমানবন্দরের সকল সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে।
এক পর্যায়ে দেখা যায়, যাত্রী মহিবুরের সোনার বারটি কাস্টমসের গ্রীন চ্যানেলের স্ক্যানিং মেশিনের সামনে ফ্লোরে পড়ে ছিলো। এরপর কাস্টমস কর্মকর্তা পিংকু রায় সোনার বারটিতে ইচ্ছাকৃতভাবে পা দিয়ে লাথি মেরে একপাশে সরিয়ে রাখেন।
এরপর সুকৌশলে সোনারবারটি পকেটে তুলে নিয়ে কাস্টমস কর্মকর্তা পিংকু রায়, যিনি শাহজালাল বিমানবন্দরে মূল্যবান গুদাম কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তিনি দ্রুত বিমানবন্দর ত্যাগ করে বাসায় চলে যান। এরপর এপিবিএন কর্মকর্তারা কাস্টমস কর্মকর্তার পরিচয় নিশ্চিত হয়ে তাকে মোবাইল নাম্বারে ফোন দিলে কাস্টমস কর্মকর্তা পিংকু রায় এপিবিএন অফিসে আসেন।
অতপর এপিবিএনের জিজ্ঞাসাবাদে কাস্টমস কর্মকর্তা অভিযোগকারীর হারানো সোনার বারটি অসৎ উদ্দেশ্যে নেওয়ার কথা জবানবন্দিতে বলেন এবং লিখিত দেন। এরপর কাস্টমস কর্মকর্তা সরকারি চাকুরীজীবি হওয়ায় বিষয়টি কাস্টমসের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয় এবং ঢাকা কাস্টমস কমিশনারের পক্ষে ডেপুটি কমিশনার আলী রেজা হায়দারের জিম্মায় এপিবিএন অফিস থেকে সুস্থ শরীরে তার বিরদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নিমিত্তে হস্তান্তর করা হয়।
এরপর উদ্ধারকৃত সোনার বারটি অভিযোগকারীকে যাত্রী মহিবুর রহমানকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। যার ওজন ১১৬ গ্রাম। বাজার মূল্য প্রায় ১০ লাখ টাকা। তবে এপিবিন থেকে পিংকু রায়ের বিরুদ্ধে কাস্টমস ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানালেও এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়নি কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এপিবিএনের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, ঘটনাটি সত্য। কাস্টমস কর্মকর্তাকে শনাক্ত করে তার কাছ থেকে সোনার বারটি উদ্ধার করা হয়। এরপর অভিযোগকারী যাত্রীকে তার সোনার বারটি বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত পিংকু বলেন, সোনার বারটি আমার কাছে ছিলো। আমি অফিসে রাখি। এরপর এপিবিএন থেকে ফোন দিলে আমি এপিবিএনে সোনার বারটি হস্তান্তর করি। আপনি সোনারবারটি অসৎ উদ্দেশ্যে লাথি মেরে পকেটে তোলেন এবং বারটি নিয়ে বাসায় চলে যান, এই প্রশ্ন করলে তিনি ফোনটি কেটে দেন এবং ফোন বন্ধ করে রাখেন।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post