ভয়াবহ যাত্রা থেকে প্রাণে বেঁচে ফিরলেন ২ শতাধিক অভিবাসী। গ্রিস এজিয়ান সাগরের পূর্বাঞ্চল থেকে তাদেরকে উদ্ধার করেছে। দেশটির উপকূলরক্ষীরা জানিয়েছেন যে, গেল বছরের মতো চলতি বছরেও অব্যাহত আছে এজিয়ান সাগরীয় গ্রিক দ্বীপগুলোতে অভিবাসীদের আগমন।
এদিকে উপকূলরক্ষীরা জানিয়েছে, ২৫ ফেব্রুয়ারি গতকাল ক্রিতির দক্ষিণ দিকের গাভদোস দ্বীপ থেকে এজিয়ান সাগরে বিপদগ্রস্ত অবস্থায় ১১৪ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করা হয়েছে। ক্রিতিতে নিয়ে আসা পর্যন্ত অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মধ্যে কোন কোন দেশের নাগরিকেরা রয়েছেন, তা জানা যায়নি।
কস দ্বীপের পাশ দিয়ে অনেক অভিবাসনপ্রত্যাশী নিয়ে একটি স্পিডবোটকে লাইট বন্ধ করে ছুটে যেতে দেখেছেন টহলরত উপকূলরক্ষীরা। তারা আরও জানিয়েছেন, বোটটিকে থামানোর চেষ্টা করা হলেও তারা তা অমান্য করে ছুটে যায়। এতে বোটে থাকা যাত্রীদের জীবন ঝুঁকিতে পড়বে বলে শঙ্কা করেন উপকূলরক্ষীরা।
গত শুক্রবার ক্রিতি থেকে ৯৫ কিলোমিটার দূরে দুর্দশাগ্রস্ত ৮৫ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করেছে একটি পণ্যবাহী জাহাজ। অভিবাসীবাহী নৌকাটির ইঞ্জিন বিকল হয়ে গেলে তারা সাহায্যের আবেদন জানায়।
অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মধ্যে ৩৫ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিলেন। উদ্ধারের পর তাদের গ্রিক উপকূলরক্ষীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পরে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিয়ে আসা হয় ক্রিতির রাজধানী হেরাকিলনের কালন লিমননে।
এদিকে, এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গ্রিক উপকূলরক্ষীরা জানিয়েছেন, তাড়া করে ওই স্পিডবোটটিকে থামানোর পাশাপাশি বোটটি চালানোর দায়িত্বে থাকা দুই ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। উপকূলরক্ষীরা আরও জানান, গত বৃহস্পতিবার লিবিয়ার তবরুক থেকে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিয়ে নৌকাটি ছেড়ে আসে। ইউরোপে পৌঁছাতে নৌকাটিতে থাকা যাত্রীদের প্রত্যেকে তিন হাজার সাতশ থেকে চার হাজার ছয়শ ইউরো করে দিয়েছেন মানবপাচারকারীদের।
জার্মান বার্তা সংস্থা ডিপিএ জানিয়েছে, লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে গ্রিসমুখী অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সংখ্যা সম্প্রতি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। সম্প্রতি তবরুক হয়ে ক্রিতিতে আসার রুটটি ব্যবহার করছে মানবপাচারকারীরা। এ বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৬১২ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী গ্রিসের ক্রিতিতে ও গাভদোস দ্বীপে পৌঁছেছেন। তাদের সবাই লিবিয়ার তবরুক থেকে যাত্রা করেছেন।
বিচ্ছিন্ন দ্বীপেও আসছেন অভিবাসনপ্রত্যাশীরা
দেশটির উপকূলরক্ষীরা এজিয়ান সাগরীয় গ্রিক দ্বীপ বারবালিয়াস থেকেও ৪২ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করেছেন। রোববার একটি ভিডিও প্রকাশ করে তারা। সেখানে দেখা গেছে লেসবসের কাছের ছোট্ট এবং বিচ্ছিন্ন দ্বীপ বারবালিয়াস থেকে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের উদ্ধার করা হয়। সেদিন নিয়মিত টহলে এসে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সন্ধান পায় তারা। পরে তাদের লেসবসের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়।
অপর একটি ভিডিওতে দেখা যায়, শিশুসহ ২৫ অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করা হয় একটি ছোট্ট নৌকা থেকে। গাভদোস দ্বীপের কাছ থেকে তাদের উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছে উপকূলরক্ষীরা।
হিসাবের তারতম্য
অভিবাসী অধিকার রক্ষায় কাজ করা আঞ্চলিক এনজিও এজিয়ান বোট রিপোর্ট (এবিআর) জানিয়েছে, সম্প্রতি গ্রিস ও বিভিন্ন গ্রিক দ্বীপমুখী অভিবাসনপ্রত্যাশীদের চাপ বেড়েছে।
এদিকে গ্রিক উপকূলরক্ষীরা বলছে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের উদ্ধারে তারা বেশ তৎপর রয়েছেন। কিন্তু এনজিওটি বলছে, উপকূলরক্ষীদের হাতে ধরা পড়ার ভয়ে থাকেন অভিবাসনপ্রত্যাশীরা তাই বিপদসংকুল অবস্থায় অভিবাসনপ্রত্যাশীরা এনজিওটির কাছে সাহায্য চান। এবিআর আরও জানায়, গত চার দিনে এজিয়ান বোট রিপোর্ট ১৫টি দলের সঙ্গে যোগাযোগ করে জেনেছে অন্তত পাঁচশ অভিবাসনপ্রত্যাশী গ্রিসের বিভিন্ন দ্বীপে পৌঁছেছেন।
এবিআর আরও জানিয়েছে, নৌকা নিয়ে এজিয়ান সাগর পাড়ি দিতে চাওয়া দুই-তৃতীয়াংশ অভিবাসনপ্রত্যাশীকে তুরস্কের উপকূলরক্ষীরা আটকে দেয় অথবা তারা গ্রিক উপকূলরক্ষীদের পুশব্যাক বা জোর করে ফিরিয়ে দেওয়ার শিকার হন।
এদিকে, এআরবি শুধু জানুয়ারিতেই গ্রিক উপকূলরক্ষীদের ৩৫টি পুশব্যাকের ঘটনা রেকর্ড করেছে । তাদের দাবি অনুযায়ী, গ্রিক উপকূলরক্ষীরা এক হাজার ১৪৪ জন মানুষকে সুরক্ষা চাওয়ার অধিকার বঞ্চিত করেছে। উপকূলরক্ষীরা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করে তুরস্কের জলসীমায় পুশব্যাক করে। ইউরোপীয় আইন অনুযায়ী আশ্রয় চাইতে আসা মানুষকে পুশব্যাক করা নিষিদ্ধ। তবে গ্রিস পুশব্যাকের অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post