মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য ভুয়া বাংলাদেশী জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মসনদ ও পাসপোর্ট তৈরি করে দেওয়ার অভিযোগে ২৩ জনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে তিনজন রোহিঙ্গা নারীও রয়েছেন। জব্দ করা আলামত বিশ্লেষণ করে গত তিন মাসে রোহিঙ্গাদের জন্য করা ১৪৩টি পাসপোর্টের সন্ধান পাওয়ার কথাও জানিয়েছে পুলিশ।
কয়েক বছরে হাজার হাজার রোহিঙ্গার ভুয়া পাসপোর্ট করা হয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। গতকাল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গণমাধ্যম শাখায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এ তথ্য জানান।
হারুন অর রশীদ বলেন, ‘শুক্রবার ও রোববার কক্সবাজার, টাঙ্গাইল এবং ঢাকার আগারগাঁও, মোহাম্মদপুর, যাত্রাবাড়ী ও বাড্ডায় ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের হেফাজত থেকে ১৭টি পাসপোর্ট, ১৩টি এনআইডি, ৫টি কম্পিউটার, ৩টি প্রিন্টার, ২৪টি মোবাইল ফোন এবং পাসপোর্ট তৈরির দলিলপত্র জব্দ করা হয়েছে। এ চক্রে রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশী দালাল ও আনসার সদস্যও রয়েছেন, যারা কয়েক দলে ভাগ হয়ে লাখ টাকার বিনিময়ে এ কাজ করতেন।
গ্রেফতাররা হলেন:-তিন রোহিঙ্গা নাগরিক উম্মে ছলিমা ওরফে ছমিরা, মরিজান, রশিদুল; রোহিঙ্গা দালাল আইয়ুব আলী, মোস্তাকিম, মো. রায়হান; বাঙালি দালাল রাজু শেখ, শাওন হোসেন নিলয়, ফিরোজ হোসেন, মো. তুষার মিয়া, মো. শাহজাহান শেখ, মো. শরিফুল আলম, জোবায়ের মোল্লা, শিমুল শেখ, আহমেদ হোসেন, মো. মাসুদ আলম, মো. আব্দুল আলিম, মো. মাসুদ রানা, ফজলে রাব্বি শাওন, রজব কুমার দাস দীপ্ত, আল-আমিন ও মো. সোহাগ এবং আনসার সদস্য জামসেদুল ইসলাম।’
ডিবিপ্রধান বলেন, ‘গ্রেফতার হওয়া দালালদের মোবাইলে পাসপোর্ট তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় সফট ডকুমেন্টস, ডেলিভারি স্লিপ পাওয়া গেছে। সেসব বিশ্লেষণ করে গত তিন মাসে রোহিঙ্গাদের জন্য করা ১৪৩টি পাসপোর্টের সন্ধান পাওয়া গেছে। আমরা ধারণা করছি, গত কয়েক বছরে হাজার হাজার রোহিঙ্গার ভুয়া পাসপোর্ট করা হয়েছে। এ চক্রের আরেকটি কাজ ছিল গ্রামে গ্রামে এমন সব মানুষের নাম-ঠিকানা খুঁজে বের করা, যাদের পাসপোর্ট করার সম্ভাবনা কম।’
সেই সব মানুষের নাম-ঠিকানা দিয়ে তারা রোহিঙ্গা বা দাগি আসামিদের পাসপোর্ট বানিয়ে দিত এবং ইচ্ছামতো বয়স পরিবর্তন করে দিত। শক্তিশালী এ চক্র মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা শিশু, নারী ও পুরুষদের লক্ষাধিক টাকায় জন্মসনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট বানিয়ে দেয়।’
তিনি আরো জানান, চক্রটির একটি দল কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি থেকে রোহিঙ্গাদের ঢাকায় নিয়ে আসে। আরেকটি দল তাদের জন্য বাংলাদেশের জন্মসনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্র বানিয়ে দেয়। আরেকটি দল ঢাকাসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে আনসার সদস্যদের মাধ্যমে ব্যাংকে এক্সপ্রেস, সুপার এক্সপ্রেস পদ্ধতিতে টাকা জমা দেয়া, বায়োমেট্রিকস করা ও ছবি তোলার ব্যবস্থা করে দেয়।
৬ ঘণ্টার মধ্যে জন্মসনদ তৈরি করে দেয়া হতো জানিয়ে হারুন অর রশীদ বলেন, ‘৬ ঘণ্টার মধ্যে জন্মসনদ তৈরি করে দিতে তারা ৫ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা নিত। তিনদিনের মধ্যে এনআইডি করে দেয়ার জন্য ২৫ হাজার টাকা এবং পাসপোর্ট তৈরি করার জন্য ১ লাখ ২০ হাজার টাকা নিত বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে।’
ওই চক্র ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, রংপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ ও বরিশাল জেলার ঠিকানা ব্যবহার করে জন্মসনদ ও এনআইডি বানিয়ে তার ভিত্তিতে পাসপোর্ট বানিয়ে দিত বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post