ধূমপায়ীদের মনে একটা প্রশ্ন সবসময় ঘুরপাক খায় – দীর্ঘদিন ধরে ধূমপান করার পর হঠাৎ করে কি তা ছেড়ে দেওয়া যাবে? আবার অনেকে মনে করেন, হঠাৎ করে ধূমপান ছেড়ে দিলে শরীরে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে এ বিষয়ে চিকিৎসকরা কী বলছেন, তা অন্তত আপনার জেনে নেয়া উচিত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কখনোই ধূমপান হঠাৎ করে ছেড়ে দেয়া উচিত নয়। এতে শরীরে উপকারের চেয়ে অপকারই বেশি হয়। শরীর হঠাৎ এ পরিবর্তন মেনে নিতেও পারে না। এ ক্ষেত্রে ধূমপায়ীদের যে বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে তা হলো, হঠাৎ করে ধূমপান বন্ধ না করে প্রথমে ধূমপানের পরিমাণ কমিয়ে আনা। এরপর ধীরে ধীরে এই বদভ্যাস থেকে নিজেকে মুক্ত করা।
চিকিৎসকদের মতে, দীর্ঘদিনের এই অভ্যাস চাইলেই ছেড়ে দেয়া যায়। তার জন্য ইচ্ছাশক্তিই যথেষ্ট। যারা কম বয়সে বা যেকোনো বয়সে এই বদভ্যাসে আসক্ত হয়ে পড়ছেন, তারা যদি এ বদভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসতে চান তবে তাদের জন্য সত্যি সুখবর অপেক্ষা করছে। কারণ, যে মুহূর্ত থেকে আপনি ধূমপান ছাড়বেন, তখন থেকেই শরীরের ভেতরের ক্ষয়গুলো রিকভার হওয়ার সুযোগ পাবে।
‘নেচার’ পত্রিকায় প্রকাশিত সাম্প্রতিক গবেষণা নিবন্ধ বলছে- যেসব মানুষ ধূমপান ত্যাগ করেছে, তাদের ফুসফুসের কোষের গঠন, কখনো ধূমপান না করা মানুষের ফুসফুসের মতো হয়ে যেতে পারে। ধূমপান ছেড়ে দেয়ার প্রথম মাসের মধ্যেই হার্ট ও ফুসফুসের কার্যকারিতা উন্নত হবে। বাড়বে রক্তসঞ্চালনও। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, ধূমপান ত্যাগের নয় মাসের মধ্যে সিলিয়া স্বাভাবিক কাজ করতে শুরু করে। কাশি, শ্বাসকষ্টের মতো লক্ষণগুলোও কম হয়।
ধূমপানমুক্ত হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যে মূত্রাশয়, কিডনি, ফুসফুস, মুখ এবং গলার ক্যানসারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমতে শুরু করে। এ ক্ষেত্রে ‘নিকোটিন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি’ (এনআরটি) ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করতে সাহায্য করে।
ধূমপান ছাড়ার জন্য প্রথমেই যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো, কঠোরভাবে এই বদভ্যাস ছাড়ার শপথ। কেননা, কোনো ব্যক্তি যদি একবার ধূমপান থেকে বিরত থেকে আবার পুনরায় শুরু করে, তবে তার জীবনে সমস্যা হবে আরও জটিল। এর জন্য নিজেকে কিছুটা সময় দিন। পছন্দের জায়গায় বেড়াতে যান, নিজের পছন্দমতো খাবার খান। একেবারে হালকা ফুরফুরে মেজাজে থাকার চেষ্টা করুন। ধূমপানের কথা মনে না আনার চেষ্টা করুন। এই সময়ে পরিবারের প্রিয় মানুষের কথা ভাবুন।
ধূমপান ত্যাগের জন্য যোগাসন, প্রাণায়াম, মেডিটেশন, গান শোনা প্রভৃতি অভ্যাস করার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। নিয়মিত শরীরচর্চা করলে এসব বদভ্যাস ত্যাগ করা সম্ভব। আপনার কাছের বন্ধু, পরিবারের সদস্য এবং ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে কথা বলুন। তাদের জানান যে আপনি ধূমপান ছেড়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন। এ বিষয়ে তারা আপনাকে উৎসাহিত করলে আপনি ধূমপান ত্যাগ করার মানসিক শক্তি পাবেন।
ধূমপান ত্যাগ করতে কোনো মনোবিদের শরণাপন্ন হতে পারেন। এ ছাড়া বিভিন্ন পরিষেবার সাহায্য নিন। কারণ, জোর করে ধূমপান ছাড়তে গেলে নানান মানসিক এবং শারীরিক সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হয় একজন ধূমপায়ীকে। যার কারণে মস্তিষ্কে নানা সমস্যা দেখা দেয়। ধূমপান ত্যাগের জন্য অনেক জায়গায় ক্লাস করানো হয়। কাউন্সেলিং করানো হয়। এর জন্য রয়েছে পুনর্বাসন কেন্দ্রও। প্রয়োজনে সেগুলোতে যোগ দিতে পারেন।
এ সময় নন-নিকোটিন ওষুধের সাহায্য নিতে পারেন। ধূমপান বন্ধ করতে যদি নন-নিকোটিন ওষুধ ব্যবহার করতে চান, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন এবং তার কাছ থেকে প্রেসক্রিপশন নিন।
যারা নিয়মিত ধূমপান করেন, তারা যদি হঠাৎ ধূমপান বন্ধ করে দেন, তাহলে তাদের নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। যেমন নিকোটিনের ব্যবহার বন্ধ হওয়ার কারণে মাথাব্যথা হতে পারে, বিরক্তি বা মেজাজ বিগড়ে থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে আপনি নিকোটিন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপির সাহায্য নিতে পারেন। পাশাপাশি নিকোটিন গাম, লজেন্স ব্যবহার করে ধূমপানের আসক্তি কমানোর চেষ্টা করতে পারেন।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post