মিসওয়াক একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। মিসওয়াক করা মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত। তবে তার আগে যে নবী-রাসূলগণ পৃথিবীতে এসেছেন তারাও মিসওয়াক করতেন। হাদিসে মিসওয়াক করাকে অন্য নবীদের সুন্নত হিসেবেও উল্লেখ করা হয়েছে।
বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবু আইয়ুব আল-আনসারি রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, চারটি জিনিস নবীদের চিরাচরিত সুন্নত। লজ্জা-শরম, সুগন্ধি ব্যবহার, মিসওয়াক করা এবং বিয়ে করা। (তিরমিজি, হাদিস, ১০৮০)
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবসময় সময় মিসওয়াক করতেন, সাহাবিদেরকেও তিনি মিসওয়াক করার নির্দেশ দিয়েছেন।
আবু উমামাহ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা মিসওয়াক করো। কেননা মিসওয়াক মুখ পবিত্র ও পরিষ্কার করে এবং মহান প্রভুর সন্তুষ্টি লাভের উপায়। আমার কাছে যখনই জিবরাঈল আলাইহিস সালাম এসেছেন তখনই আমাকে মিসওয়াক করার উপদেশ দিয়েছেন।
শেষে আমার আশঙ্কা হয় যে, তা আমার ও আমার উম্মতের জন্য ফরজ করা হবে। আমি যদি আমার উম্মতের জন্য কষ্টকর হওয়ার আশঙ্কা না করতাম, তাহলে তাদের জন্য তা ফরজ করে দিতাম। আমি এত বেশি মিসওয়াক করি যে, আমার মাড়িতে ঘা হওয়ার আশঙ্কা হয়। (ইবনে মাজাহ, হাদিস, ২৮৯)
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কীভাবে মিসওয়াক করতেন- হাদিসে এ বিষয়ে স্পষ্ট বিবরণ রয়েছে। এ বিষয়ে আহমদ ইবনে আবদাহ রহিমাহুল্লাহ হজরত আবু মূসা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গেলাম, তখন তিনি মিসওয়াক করছিলেন। মিসওয়াকের এক পাশ তার জিহ্বার ওপর ছিল এবং ‘আ’ ‘আ’ করছিলেন। (নাসাঈ, ১/৩)
হজরত আবু মূসা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আমি একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এলাম, আমার সঙ্গে ছিল আশআর গোত্রের দু’জন লোক। তাদের একজন ছিল আমার ডানদিকে আর অন্যজন ছিল আমার বাঁদিকে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন মিসওয়াক করছিলেন।
তারা দুজন ( আশআর গোত্রের লোক) তার কাছে কাজ চাইল ৷ (এতে বিব্রত হয়ে) আমি (নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে) বললাম, যিনি আপনাকে সত্য নবী হিসেবে পাঠিয়েছেন তার শপথ! তাদের অন্তরে কি ছিল তা আমাকে অবগত করেনি আর আমিও বুঝতে পারিনি যে, তারা কাজ চাইবে।
আমি তখন তার (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) ঠোটের নিচে রাখা মিসওয়াকের দিকে লক্ষ্য করছিলাম। তার ঠোট তখন উঁচু ছিল। তিনি বললেন, যে ব্যক্তি কাজ চায় আমরা তাকে কাজ দিই না। তবে তুমি যাও, পরে আবু মুসাকে ইয়ামানে পাঠান আর মুয়ায ইবন জাবালকে তার অনুগামী করলেন। (নাসাঈ, ১/৪)
হাদিসের আলোকে আলেমরা বলেন, মিসওয়াক নিজ হাতের আঙুলের মতো মোটা এবং এক বিঘত পরিমাণ লম্বা হওয়া মুস্তাহাব, তবে জরুরি বা আবশ্যক নয়। এতে মিসওয়াক ধরতে ও করতে সুবিধা হয়।
মিসওয়াক করার সুন্নতসম্মত পদ্ধতি হলো ডান হাতে মিসওয়াক নিয়ে ডান দিক থেকে মিসওয়াক শুরু করা। দাঁতে প্রস্থে ও জিহ্বায় লম্বালম্বি মিসওয়াক করা সুন্নত।
(ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/৭; আল বিনায়াহ: ১/২০৪, আদ্দুররুল মুখতার: ১/১১৩, রদ্দুল মুহতার ১/১১৪, ফাতাওয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত: ৩/৪৪)
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post