চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে পাইকারি বাজারে কিছুটা কমেছে ভোজ্য তেল, চিনি ও ছোলার দাম। এই তিন পণ্যের দাম একলাফে কেজিতে কমেছে সর্বোচ্চ পাঁচ টাকা পর্যন্ত।
পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে বুকিং রেট কমায় দেশের বাজারে এই তিন পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। এ ছাড়া সরকার বাকিতে এসব পণ্য আমদানির সুযোগ দেওয়ায় আমদানিও হচ্ছে প্রচুর।
জানা যায়, গত বছর রমজানের দুই মাস আগে (ফেব্রুয়ারি) প্রতিকেজি অস্ট্রেলিয়ান ছোলা বিক্রি হয়েছিল সর্বোচ্চ ৭৫ টাকা। আর তানজানিয়া থেকে আমদানি হওয়া ছোলা প্রতিকেজি সাড়ে ৭৬ টাকা ছিল। তখন সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হয়েছিল ভারত থেকে আমদানিকৃত ছোলা ৮০ টাকা কেজি।
একই ছোলা গত ডিসেম্বরে মানভেদে বিক্রি হয়েছিল ৭৫ থেকে ৮৩ টাকা কেজি। ২০২৪ সালের শুরুতে এর দাম বেড়ে হয় ৯০ থেকে ৯৭ টাকা কেজি। এখন কেজিতে কমেছে পাঁচ টাকা।
খাতুনগঞ্জ বাজারের ছোলার আড়তদার পরিতোষ কুমার দে বলেন, ‘বর্তমানে বিভিন্ন দেশ থেকে ছোলা আমদানি করতে বুকিং রেট কিছুটা কমেছে। পাশাপাশি বাকিতে ছোলা আমদানির সুযোগ পাওয়ায় প্রচুর আমদানিও হচ্ছে। এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে পাইকারি বাজারে। বাজার নিয়ে কোনো কারসাজি না হলে ছোলার দাম আরো কমতে পারে।’
অপরদিকে গত সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করে ১৬৯ টাকা, আর পাম তেল ১২৬ টাকা। পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের বোতলের দাম ধরা হয় ৮২৫ টাকা। ওই দাম নির্ধারণ করা হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছিল বাড়তি দামে, সয়াবিন তেল ১৭৪ টাকা আর পাম তেল প্রতিলিটার ১২৮ টাকায়।
বিশ্ববাজারে বর্তমানে প্রতি টন সয়াবিনের বুকিং রেট ৯৫০ ডলার এবং পাম তেলের ৯১০ ডলার, যা গত সপ্তাহে ছিল যথাক্রমে এক হাজার ৫০ মার্কিন ডলার ও ৮৬০ মার্কিন ডলার। বুকিং রেট কমায় দেশের বাজারে সয়াবিন তেলের দাম কমছে। খাতুনগঞ্জে প্রতি লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৪৬ টাকা। অথচ নির্বাচনের আগেও ছিল ১৫০ টাকা। এখন পাম তেল বিক্রি হচ্ছে ১১৮ টাকা লিটার। নির্বাচনের আগে এর দাম ছিল ১১৩ টাকা।
খাতুনগঞ্জে আমদানি করা ভোজ্য তেল পাইকারি বিক্রি করে মেসার্স আবু তাহের ট্রেডার্স। এর কর্ণধার আলমগীর মাহমুদ বলেন, বিশ্ববাজারে বর্তমানে বুকিং রেট কম। এত দিন ডলার সংকেটের কারণেও পণ্যটি আমদানি কম হয়েছে। এখন সরবরাহ বেড়েছে। তাই দাম কমছে। তবে শীতে পাম তেল কম আমদানি হওয়ায় সেটির দাম কিছুটা বাড়ছে।’
খোলা চিনির দাম খাতুনগঞ্জে কমেছে কেজিতে তিন টাকা। প্রতিকেজি খোলা চিনি এখন বিক্রি হচ্ছে ১৩১ টাকায়। নির্বাচনের আগে ছিল ১৩৪ টাকা কেজি।
১৪০ টাকায়ও চিনি বিক্রি হয়েছে। চিনির পাইকারি বিক্রেতা এনএ চৌধুরী এন্টারপ্রাইজের মালিক কবির হোসেন বলেন, ‘বিশ্ববাজারে চিনির বুকিং রেট কমলেও দেশে এত দিন প্রভাব পড়েনি। তবে ভারত থেকে চোরাই পথে চিনি আসায় সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা দাম কমাতে বাধ্য হচ্ছেন।’
খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ছগির আহমেদ বলেন, “আন্তর্জাতিক বাজারে নিত্যপণ্যের দাম এখন নিয়ন্ত্রণে আছে। কিন্তু বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের এলসি খোলার সুযোগ কমে গেছে। এতে আমদানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে পারে। এ ছাড়া ডলারের দামও বেড়ে চলেছে। এ সমস্যার সমাধান না হলে আসন্ন রমজানে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হবে। এতে আমদানি খরচ আরও বাড়বে। তাই এলসি খোলার সুযোগ বাড়ানো এবং ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।”
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post