দেশের অভ্যন্তরীণ গন্তব্যে যাত্রী কমে যাওয়ায় বহরের দুটি উড়োজাহাজ নেপালের ইয়েতি এয়ারলাইনসের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে বেসরকারি এয়ারলাইনস নভোএয়ার। এটিআর–৭২ মডেলের টার্বো প্রপেলার জাতীয় উড়োজাহাজ দুটি খুব শিগগির ইয়েতি এয়ারলাইনসের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান ইনডিপেনডেন্ট ডিজিটালকে বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রীর পরিমাণ প্রায় ৩০ ভাগ কমেছে। ফলে আমাদের বহরে থাকা সাতটি উড়োজাহাজের মধ্যে দুটি আমরা ইয়েতি এয়ারলাইনসের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছি। অবশিষ্ট ৫টি উড়োজাহাজ দিয়ে অভ্যন্তরীণ গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে।’
২০১১ সালে তিনটি এমবেরার ১৪৫ মডেলের জেট উড়োজাহাজ দিয়ে অভ্যন্তরীণ গন্তব্যে যাত্রা শুরু করে নভোএয়ার। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে এমবেরার উড়োজাহাজগুলো বাদ দিয়ে ফ্রান্সের তৈরি এটিআর–৭২ মডেলের উড়োজাহাজ দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু হয়।
দেশে বর্তমানে অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরের সংখ্যা সাতটি। নভোএয়ার ছাড়াও অভ্যন্তরীণ যাত্রীসেবা দেয় রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস এবং বেসরকারি ইউএস বাংলা এয়ার ও এয়ার অ্যাস্ট্রা।
দেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো পদ্মা সেতু চালুর পর বরিশাল ও যশোর বিমানবন্দরে যাত্রীচাপ অনেকটাই কমে আসে। ফলে এই দুই বিমানবন্দরে ফ্লাইট সংখ্যা দুই তৃতীয়াংশ কমিয়ে আনে দেশি এয়ারলাইনসগুলো।
নেপালের পোর্টাল এভিয়েশন নেপাল বলছে, এক বছর আগে পোখরায় ইয়েতি এয়ারলাইনসের একটি এটিআর–৭২ উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হলে সংস্থাটি জোর ধাক্কা খায়। একই মডেলের দুটি উড়োজাহাজ দিয়ে বাংলাদেশ থেকে যাত্রী আনা নেওয়া করতো এয়ারলাইনসটি। সম্প্রতি বহরে এই মডেলের উড়োজাহাজের সংখ্যা বৃদ্ধির চেষ্টা করছে ইয়েতি।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এয়ারস্ট্রিম ইন্টারন্যাশনালের কাছ থেকে সম্প্রতি দুটি এটিআর–৭২ উড়োজাহাজ কেনার চুক্তি পাকা করেছে ইয়েতি। নভোএয়ারের কাছ থেকেও একই মডেলের দুটি উড়োজাহাজ কেনা হচ্ছে। এর মধ্যে একটি আগামী সপ্তাহে এবং আরেকটি ফেব্রুয়ারি মাসে নেপালে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
ইয়েতি এয়ারলাইনসের মুখপাত্র সুদর্শন বার্তুলা বলেন, ‘আগামীতে আমরা মোট ১০টি এটিআর–৭২ মডেলের উড়োজাহাজ বহরে যুক্ত করতে চাই। নভোএয়ারের দুটি এটিআর যুক্ত হলে আমাদের উড়োজাহাজের সংখ্যা হবে সাত।’
এটিআর–৭২ হলো টার্বো প্রপেলার জাতীয় উড়োজাহাজ। সাধারণত কম দূরত্বের গন্তব্যে পরিচালনার জন্য এই উড়োজাহাজগুলো বেশ জনপ্রিয়। নভোএয়ারের এটিআরগুলোতে ৭৮ জন করে যাত্রী পরিবহন করতে পারে। এই ধরনের উড়োজাহাজগুলো জেট ইঞ্জিনের উড়োজাহাজের তুলনায় জ্বালানি সাশ্রয়ী।
ফ্রান্সের তৈরি এটিআর–৭২ পূর্ণ জ্বালানিতে ৫১০ কিলোমিটার বেগে ২৫ হাজার ফুট উচ্চতায় ছুটতে পারে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৬৫ কিলোমিটার। তবে আসন পূর্ণ থাকলে এটি যেতে পারে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৯৫২ কিলোমিটার।
অর্থাৎ পূর্ণ জ্বালানিতে উড়োজাহাজটি উড়তে পারে টানা প্রায় চার ঘণ্টা। আর আসন পূর্ণ অবস্থায় উড়তে পারবে প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা।
সুদর্শন জানান, উড়োজাহাজ সংকটের কারণে চাহিদা থাকলেও ফ্লাইট দিতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি। যে গন্তব্যগুলোতে ফ্লাইট চালু আছে সেগুলোতেই আপাতত মনোযোগ দিতে চায় ইয়েতি।
অন্যদিকে, নভোএয়ার মূলত দেশের অভ্যন্তরীণ সাতটি বিমানবন্দরে যাত্রীসেবা দিয়ে থাকে। এর বাইরে ভারতের কলকাতাতেও তাদের ফ্লাইট আছে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক গন্তব্যে ফ্লাইট বৃদ্ধির পরিকল্পনা করেছে এয়ারলাইনসটি। এর জন্য ইউরোপীয় নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এয়ারবাসের কাছ থেকে তিনটি এয়ারবাস এ–৩২১ মডেলের উড়োজাহাজ সংগ্রহের চেষ্টা করছে বেসরকারি এ এয়ারলাইনস।
নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা তিনটি এয়ারবাস সংগ্রহের চেষ্টা করছি। এগুলো গত বছরের সেপ্টেম্বরেই বহরে যুক্ত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনের কারণে আমরা কিছুটা সময় নিয়েছি। নির্বাচন শেষে আবারও প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আশা করছি, তিনটির প্রথমটি আগামী চার মাসের মধ্যে বহরে যুক্ত হবে। বাকিগুলোও ধাপে ধাপে দেশে আসবে।’
নতুন উড়োজাহাজগুলো দিয়ে প্রাথমিকভাবে ৬টি আন্তর্জাতিক গন্তব্যে ডানা মেলতে চায় নভোএয়ার। এর মধ্যে রয়েছে ব্যাংকক, কুয়ালালামপুর ও সিঙ্গাপুরের মতো জনপ্রিয় আন্তর্জাতিক গন্তব্য।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post