সিঙ্গাপুরের সাবেক পরিবহনমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম ইশ্বরান দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন। এই মামলাটি দেশটির কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতি মামলাগুলোর মধ্যে একটি, যেখানে একজন মন্ত্রী জড়িত। বৃহস্পতিবার সিঙ্গাপুরের দুর্নীতি দমন সংস্থা করাপ্ট প্র্যাকটিসেস ইনভেস্টিগেইশন ব্যুরো (সিপিআইবি) জানিয়েছে, ইশ্বরানের বিরুদ্ধে আদালতে এই মামলাটি করা হয়েছে।
এক বিবৃতিতে সিপিআইবি বলেছে, ইশ্বরান (৬১) ধনকুবের ব্যবসায়ী অং বেং সেং-র ব্যবসায়ীক স্বার্থ দেখার বিনিময়ে ২ লাখ ৮৬ হাজার ১৮১ ডলার মূল্যের সমপরিমাণ সুবিধা নিয়েছেন।
সাবেক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে হওয়া অভিযোগ পত্রে দেখা গেছে, যেসব সুবিধা তিনি গ্রহণ করেছেন তার মধ্যে ফুটবল ম্যাচের, সঙ্গীতানুষ্ঠানের টিকেট, অংয়ের ব্যক্তিগত বিমানের ফ্লাইট, ফর্মুলা ওয়ান গ্রান্ড প্রিক্সের টিকেট রয়েছে। ইশ্বরান গ্রান্ড প্রিক্সের পরিচালনা পরিষদের উপদেষ্টা ছিলেন আর এই প্রতিযোগিতার স্বত্ত্বাধিকারী ছিলেন অং।
সিপিআইবি জানিয়েছে, ইশ্বরানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও বিচারের পথে বাধা সৃষ্টি করাসহ মোট ২৭টি অভিযোগ আনা হয়েছে। মঙ্গলবার পেশ করা নিজের পদত্যাগ পত্রে ইশ্বরান তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো প্রত্যাখ্যান করেছেন। এখন তিনি নিজেকে ‘নির্দোষ প্রমাণ করার দিকে মনোযোগ দেবেন’ বলে জানিয়েছেন।
সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে তার এই পদত্যাগ পত্রটি প্রকাশ করা হয়েছে। যদি দুর্নীতির দায়ে তিনি দোষী সাব্যস্ত হন, তাহলে তার সর্বোচ্চ এক লাখ সিঙ্গাপুর ডলার জরিমানা অথবা সাত বছর কারাদণ্ড হতে পারে।
ইশ্বরান ও অং, উভয়কেই গত বছর জুলাইতে গ্রেফতার করা হয়। তবে অংয়ের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনা হয়নি। এই মামলা নিয়ে সিঙ্গাপুরের সর্বত্র আলোচনা চলছে। এশিয়ার এই গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক কেন্দ্রটির রাজনীতিকরা খুব কমই দুর্নীতি বা কেলেঙ্কারির মতো অভিযোগে জড়িয়েছেন। দেশটির সরকারের একটি পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি আছে। দুর্নীতি নিরুৎসাহিত করার জন্য সিঙ্গাপুরে সরকারি কর্মচারীদের মোট অঙ্কের বেতন দেয়া হয়। দেশটির মন্ত্রীদের অনেকের বার্ষিক বেতন ১০ লাখ সিঙ্গাপুর ডলারেরও বেশি।
২০২২ সালে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল তাদের দুর্নীতির সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত পঞ্চম দেশ হিসেবে রেখেছিল এই নগর রাষ্ট্রটিকে। ইশ্বরান ২০০৬ সালে একজন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুংয়ের মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়েছিলেন। একসময় তিনি বাণিজ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
পরে ২০২১ সালের মে-তে তিনি পরিবহন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার মাধ্যমে মন্ত্রী হয়েছিলেন। এর আগে সিঙ্গাপুরে একজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল ১৯৮৬ সালে। ঘুষ গ্রহণ করেছেন, এমন অভিযোগে তৎকালীন জাতীয় উন্নয়নমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছিল। কিন্তু আদালতে মামলার মুখোমুখি হওয়ার আগেই তিনি মারা যান।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post