সিটি সড়কে ধুলাবালুর যন্ত্রণায় নগরবাসী যখন অতিষ্ঠ, তখন রাস্তা পরিষ্কারের কাজে কোটি টাকায় কেনা রোড সুইপার ট্রাকগুলো (ঝাড়ু দেওয়ার যন্ত্র) অচল পড়ে আছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ধুলা পরিষ্কারের এসব যন্ত্রের গায়েই জমেছে ধুলার আস্তর।
ছোট, মাঝারি ও বড় মিলিয়ে ডিএনসিসিতে ধুলা পরিষ্কারের রোড সুইপার ট্রাক রয়েছে ১২টি। এর মধ্যে ৮টিই বর্তমানে অচল হয়ে পড়ে আছে ওয়ার্কশপে। অচল যন্ত্রগুলোর তিনটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া। বাকি পাঁচটির দুটি ঢাকা উত্তর সিটি নিজেদের টাকায় কিনেছে। তিনটি ডিএনসিসিতে বাস্তবায়িত একটি প্রকল্প থেকে পাওয়া।
সংস্থাটির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রকৌশলীরা বলছেন, ছোট আকারের তিনটি (৫০০ কেজি ধারণক্ষমতার) রোড সুইপার দিয়ে রাস্তা ঝাড়ু দিতে গেলে ধুলা পরিষ্কার হওয়ার বদলে বাতাসে ওড়ে। তাই ব্যবহার করা যাচ্ছে না। মাঝারি আকারের (৩ টনের) দুটি রোড সুইপারের ধুলা পরিষ্কারের ব্রাশ ক্ষয় হয়ে গেছে। বড় আকারের তিনটির যান্ত্রিক ত্রুটি আছে। যন্ত্রাংশ বাইরে থেকে আনতে হবে।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সাইফুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া ছোট রোড সুইপার দিয়ে পরিষ্কার হয় না। এটা ব্যবহার করলে আরও ঝামেলা হয়। অন্যান্য অচল যন্ত্রের বিষয়ে তিনি বলেন, নিজেদের কেনা দুটি সুইপারের বিষয়ে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা বাইরে থেকে যন্ত্রাংশ আমদানি করে সচল করে দেবে। আর প্রকল্প থেকে পাওয়া দুটি সচল করতে ব্রাশ কেনার বিষয়ে দরপত্র প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়ে গেছে।
সরেজমিনে গত শনিবার বিকেলে রাজধানীর গাবতলীতে ঢাকা উত্তর সিটির যান্ত্রিক শাখার ওয়ার্কশপে গিয়ে দেখা যায়, একটির পেছনে আরেকটি দাঁড় করিয়ে রাখা ছোট আকারের রোড সুইপার ২, ৩ ও ৪ নম্বরের তিনটি ট্রাকে ধুলা জমে আছে। ধুলার আস্তরে ঢেকে গেছে চালকের আসনের সামনের গ্লাসে থাকা ঢাকা উত্তর সিটির নাম লেখা স্টিকারও।
সেখানে বড় আকারের আরও ৫টি ধুলা পরিষ্কারের যন্ত্র। এগুলো রোড সুইপার ৮, ৯, ১০, ১১ ও ১২ নম্বরের। এর মধ্যে ১০ ও ১১ নম্বর বাদে বাকি তিনটিই দীর্ঘদিন অচল থাকায় যন্ত্রগুলোর ওপর ধুলা জমেছে। এ ছাড়া ঢাকা উত্তর সিটিতে থাকা আরও ৪টি রোড সুইপারের মধ্যে মাঝারি আকারের তিনটি রাখা হয়েছে মহাখালী আঞ্চলিক কার্যালয়ে, যার দুটি অচল। আর বড় আকারের সচল আরেকটি বেশির ভাগ সময় রাখা হয় ধলপুর ওয়ার্কশপে।
শুরু থেকেই অচল ৩টি
২০২০ সালের অক্টোবরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে ডিএনসিসিকে তিনটি রোড সুইপার ট্রাক দেওয়া হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল বড় সড়ক ও রাস্তার পাশাপাশি যন্ত্রগুলো অলিগলিসহ ছোট রাস্তায়ও ধুলা পরিষ্কারের কাজ করা। কিন্তু এই উদ্দেশ্য সফল হয়নি।
কর্মকর্তারাই বলছেন, মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া রোড সুইপার ট্রাকগুলো শুরু থেকেই অচল বলা চলে। কারণ, ওই যন্ত্র দিয়ে কাজ করলে রাস্তার ধুলা পরিষ্কারের বদলে উল্টো ধুলা বাতাসে ওড়ে।
মন্ত্রণালয় ওই সময় একই সঙ্গে এমন ২০টি রোড সুইপার ট্রাক ইতালি থেকে কেনে। এতে মোট ব্যয় হয়েছিল ২৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। একেকটি রোড সুইপারের পেছনে ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৪৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। এই হিসাবে ঢাকা উত্তর সিটিতে থাকা তিনটির পেছনে মন্ত্রণালয়ের ব্যয় হয় প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা।
অর্থের অপচয়
রাজধানীর বেশির ভাগ এলাকা ধুলাদূষণে আক্রান্ত। এই বায়ুদূষণে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন বয়স্ক, শিশু, অন্তঃসত্ত্বা ও জটিল রোগে ভোগা ব্যক্তিরা। জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) ২০২০ সালের এক গবেষণা অনুযায়ী, নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অভিভাবকেরা যত শিশুকে ঢাকা শিশু হাসপাতালে নিয়ে যান, তাদের ৪৯ শতাংশ শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত। এই সময়ে রাজধানীর বাতাসে ধুলা ও দূষণ বেড়ে যায়।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি আদিল মুহাম্মদ খান গণমাধ্যমকে বলেন, আধুনিক পদ্ধতিতে সড়ক পরিষ্কারের এসব রোড সুইপারের সঠিক ব্যবহার ও নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ না করায় অর্থের অপচয় হচ্ছে। এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের সর্বোচ্চ নজরদারি এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দায়বদ্ধ করা উচিত। না হলে জনগণের করের টাকা অপচয় হবে, নগরও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা যাবে না।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post