অ্যামাজন বনের সবুজের বুকে চাপা পড়েছিল এক প্রাচীন নগর। সম্প্রতি যার সন্ধান পাওয়া গেছে। হাজার হাজার বছর সবুজ অরণ্যের বুকে গোপন থাকা এই নগরটি অনেককে রীতিমতো বিস্মিত করেছে।
আর এই আবিষ্কারটি বদলে দিয়েছে আমাজনে বসবাসকারী মানুষ সম্পর্কে পাওয়া পূর্বের সব প্রচলিত ধারণা। পূর্ব ইকুয়েডরের উপানো এলাকার বাড়িগুলো এবং প্লাজাগুলো রাস্তাঘাট এবং খালের বিস্ময়কর নেটওয়ার্ক দ্বারা সংযুক্ত ছিল এই নগরে।
ওই এলাকাটি একটি আগ্নেয়গিরির ছায়ায় অবস্থিত। যার ফলে উর্বর হয়েছিল স্থানীয় মাটি। কিন্তু এই আগ্নেয়গিরির কারণেই সম্ভবত নগরটি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিলো।
এর আগে ধারণা ছিল, অ্যামাজনে মানুষ শুধু যাযাবর হিসেবে বা ছোট ছোট বসতিতে বসবাস করতো। তবে এবার সেই সমীকরণ পুরোটাই উল্টে যাচ্ছে। গবেষণায় নেতৃত্ব দেয়া ফ্রান্সের ন্যাশনাল সেন্টার ফর সায়েন্টিফিক রিসার্চের (তদন্ত) পরিচালক অধ্যাপক স্টিফেন রোস্টেন বলেছেন, ‘এ শহরটি আমাদের চেনা অ্যামাজনের অন্যান্য জায়গার থেকেও পুরোনো। সভ্যতা সম্পর্কে আমাদের মধ্যে ইউরোপকেন্দ্রিক এক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। কিন্তু এটি আমাদের দেখায় সংস্কৃতি ও সভ্যতা সম্পর্কে আমাদের ধারণা পরিবর্তন করতে হবে।’
গবেষণা দলের সহকারী লেখক অ্যান্টোইন ডরিসন বলেন, ‘এটি আমাদের অ্যামাজনী সংস্কৃতিকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গিকে পরিবর্তন করাচ্ছে। বেশিরভাগ মানুষ আমাজনের মানুষ বলতেই ছোট দলকে ভেবে নেয়। যারা সম্ভবত নগ্ন, কুঁড়েঘরে বসবাস করে এবং জমিজমা পরিষ্কার করে। এই আবিষ্কার দেখিয়ে দিয়েছে প্রাচীন মানুষেরা জটিল শহুরে সমাজে বাস করত।’
শহরটি প্রায় ২৫০০ বছর আগে নির্মিত হয়েছিলো। প্রত্নতাত্ত্বিকরা মনে করেন, এক হাজার বছর পর্যন্ত মানুষ সেখানে বসবাস করতো। এক সময়ে কত লোক সেখানে বাস করত তা সঠিকভাবে অনুমান করা কঠিন। তবে বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এক লাখ না হলেও ১০ হাজারের মত লোক সেখানে বসবাস করতো। প্রত্নতাত্ত্বিকরা লেজার সেন্সর ব্যবহার করে ৩০০ বর্গ কিমি (১১৬ বর্গ মাইল) এলাকায় খনন চালিয়েছেন। ঘন জঙ্গল এবং গাছপালার নিচে শহরের অবশিষ্টাংশ শনাক্ত করতে তারা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
শহরটিতে সোজা রাস্তা এবং পথের একটি নেটওয়ার্ক অনেকগুলি প্ল্যাটফর্মকে একত্রে সংযুক্ত করেছে যার মধ্যে একটি ২৫ কিলোমিটার (১৬ মাইল) পর্যন্ত প্রসারিত। বিজ্ঞানীরা দুপাশে খালসহ কিছু পথ চিহ্নিত করেছেন যা এই অঞ্চলে প্রচুর পানি সরবরাহ করার কাজে ব্যবহার করা হয়েছিল। কিছু খাদ বসতিগুলোর প্রবেশপথকে অবরুদ্ধ করেছিলো যা শহরগুলো এবং আশেপাশের লোকদের জন্য ক্ষতিকর ছিল। গবেষকেরা প্রথম এই অঞ্চলে ১৯৭০ এর দশকে একটি শহরের অস্তিত্বের প্রমাণ পেয়েছিলেন কিন্তু ২৫ বছর গবেষণার পর এই প্রথম একটি বিস্তারিত জরিপ করা সম্ভব হয়েছে।
গবেষকদের জন্য পরবর্তী ধাপ হলো আশেপাশের ৩০০ বর্গ কিলোমিটারের এলাকা। যেখানে এখনো জরি চালানো হয়নি। এখন খুঁজে বের করা সেখানে কি আছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post