ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের স্থাপনা লক্ষ্য করে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের হামলায় মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলাকে কেন্দ্র করে এই অঞ্চলে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
গতকাল শুক্রবার ভোরে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের যৌথ হামলায় হুতি বিদ্রোহীদের পাঁচজন নিহত হয়েছে। হামলার প্রতিশোধ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে হুতি যোদ্ধারা। এই পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যে আঞ্চলিক সংঘাতের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ২৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যুদ্ধবিরতির আন্তর্জাতিক চাপ উপেক্ষা করে সামরিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এই হামলায় সমর্থন দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা দেশগুলো।
গাজায় হামলার প্রতিবাদে আরব সাগর ও লোহিত সাগরে নানাভাবে জাহাজ চলাচলে বাধা দিচ্ছেন হুতি বিদ্রোহীরা। বিশেষ করে ইসরায়েল ও তার মিত্রদের জাহাজ চলাচলের ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখছে হুতি বাহিনী। কয়েকবার হামলাও চালিয়েছে। এতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ব্যাহত হচ্ছে। নৌপথে এশিয়া ও ইউরোপের বাণিজ্যের উল্লেখযোগ্য অংশ লোহিত সাগর দিয়ে হয়ে থাকে।
হুতি বিদ্রোহীদের মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারি যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের হামলা চালানোর বিষয়টি স্বীকার করেন। গতকাল এক্স (সাবেক টুইটার) বার্তায় তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ইয়েমেনে তাঁদের বিভিন্ন স্থাপনার ওপর ৭৩ বার বিমান হামলা চালিয়েছে। এ হামলায় তাঁদের পাঁচজন যোদ্ধা নিহত ও ছয়জন আহত হয়েছেন।
এর আগে গতকাল হোয়াইট হাউস থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, লোহিত সাগরে আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমায় চলাচলকারী জাহাজের ওপর হুতিদের হামলার জবাবে এসব হামলা চালানো হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক্সে দেওয়া এক বিবৃতিতে হুতিদের সর্বোচ্চ রেভল্যুশনারি কমিটির প্রধান মোহাম্মদ আলী আল-হুতি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের এ হামলা বর্বর ও অন্যায় আগ্রাসন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, এক্সে দেওয়া বার্তায় হুতি কর্মকর্তা আবদুল কাদের আল-মোরতাদা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র-জায়নবাদী-ব্রিটিশ আগ্রাসনকারীরা ইয়েমেনের রাজধানী সানা ছাড়াও হোদেইদাহ সাদা ও ধামার এলাকায় হামলা চালিয়েছে। রয়টার্সের খবরে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের যুদ্ধবিমান, যুদ্ধজাহাজ ও ডুবোজাহাজ নিয়ে হুতিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, ইয়েমেনের তৃতীয় বৃহত্তম শহর তায়েজ, হোদেইদাহ নৌঘাঁটিতে বিস্ফোরণের বিকট আওয়াজ পাওয়া গেছে। এ উপকূলীয় এলাকায় হাজ্জায় বিভিন্ন সামরিক স্থাপনায় বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে মনে হয়েছে।
রাজধানী সানার বাসিন্দা খেলৌদ বলেন, বিমানবন্দর এলাকার দিক থেকে বিস্ফোরণের বিকট আওয়াজ আসে, এতে তাঁর ঘুম ভাঙে। যেখানে হামলা চালানো হয়েছে, সেখানে বড় আকারে আগুন ছড়িয়ে পড়তে দেখেছেন তাঁরা। হামলার আধঘণ্টা পরও আগুন জ্বলছিল।
এদিকে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের এক বিবৃতির বরাতে এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদেশি জাহাজ লক্ষ্য করে ইরান-সমর্থিত হুতিদের রাডার, ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার সক্ষমতাকে খর্ব করতেই এ হামলা চালানো হয়েছে। বিবৃতিতে অস্টিন বলেন, হুতিদের মানুষবিহীন আকাশযান, ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, উপকূলীয় রাডার ও বিমান নজরদারি সক্ষমতার সঙ্গে যুক্ত স্থানগুলো এ হামলার লক্ষ্যবস্তু।
বিভিন্ন দেশের প্রতিক্রিয়া
ইয়েমেনে হুতিদের ওপর হামলার পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এ হামলা আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতায় ইন্ধন জোগাবে বলে আশঙ্কা করেছে। রাশিয়া এ হামলার নিন্দা জানিয়েছে।
আইন লঙ্ঘন করে ইয়েমেনে হামলা: ইরান বলেছে, আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ইয়েমেনে হামলা চালানো হয়েছে। এ হামলা মধ্যপ্রাচ্যে আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতাকে ইন্ধন দেবে। সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বাড়বে।
হামলার নিন্দা রাশিয়ার: ইয়েমেনে হুতিদের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়েছে রাশিয়া। এই হামলাকে ‘অবৈধ’ বলে উল্লেখ করেছে মস্কো। দেশটির পক্ষ থেকে এ হামলাকে বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি বলে অভিহিত করা হয়েছে। এ নিয়ে রাশিয়া জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছে।
সংযম প্রদর্শনের আহ্বান সৌদির: সংঘাত এড়ানো ও সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে সৌদি আরব।
চীনের উদ্বেগ: লোহিত সাগরে উত্তেজনা বৃদ্ধির ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে এ ব্যাপারে সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে চীন।
তুরস্কের হুঁশিয়ারি: তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেছেন, এভাবে হামলা চালিয়ে লোহিত সাগরকে রক্তের সাগরে পরিণত করার চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য।
এদিকে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হুতিদের ওপর হামলা নিয়ে সমালোচনা প্রত্যাখ্যান করেছে। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর একজন মুখপাত্র বলেন, হুতিদের আগ্রাসনের জবাবে সীমিত এবং নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়েছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post