দুই বছর আগে প্রতি ডলারের দাম ছিল ৮৪ টাকার ঘরে। ২০২২ সালের শুরুর দিকেও ছিল ৮৫ টাকা ৭০ পয়সা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর ধারাবাহিকভাবে ডলারের দাম বাড়তে থাকে।
২০২৩ সালের শুরুর দিকে দাম শতক ছাড়ায়। এরপর টানা বাড়তে থাকে। বর্তমানে প্রতি ডলারের দাম প্রবাসী আয় ও রপ্তানির জন্য ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা। আর আমদানিতে খরচ পড়বে ১১০ টাকা। যদিও বাস্তবে ১২৩ টাকার কমে ডলার পাওয়া যাচ্ছে না।
ডলার-সংকট ও দর বৃদ্ধির কারণে উত্পাদন, বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শিল্পোদ্যোক্তারা। এ কারণে উচ্চ মূল্যস্ফীতি হচ্ছে। জিনিসপত্রের বাড়তি ব্যয় মেটাতে কষ্ট হচ্ছে মানুষের। সব মিলিয়ে নতুন ২০২৪ সালেও রিজার্ভ ধরে রাখার চাপ থাকছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিভিন্নভাবে ডলারের উত্সগুলো সংকুচিত করে ফেলা হয়েছে। বিদেশি ব্যাংকগুলোও আগের মতো সমর্থন দিচ্ছে না। ডলারের কম দামের কারণে সব প্রবাসী আয় বৈধ পথে আসছে না। আবার ডলারের দামও পুরোপুরি বাজারভিত্তিক হচ্ছে না।
অন্যান্য দেশ যেভাবে বৈদেশিক মুদ্রাবাজার পরিচালনা করে, বাংলাদেশকেও সেই পথে যেতে হবে। কারণ, ডলার বাজারের পরিস্থিতি অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্কিত। না হলে সংকট আরো দীর্ঘায়িত হবে, মূল্যস্ফীতি আরো বাড়বে। ডলারের প্রধান চাহিদা আমদানি দায় পরিশোধে। এর পাশাপাশি প্রযুক্তি, চিকিত্সা, বিমান পরিবহন, বিদেশি ঋণসহ নানা খাতে ডলার খরচ হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক শুধু আমদানি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ডলার-সংকট নিরসনের চেষ্টা করে যাচ্ছে। দেশে ডলারের সবচেয়ে বড় জোগান আসে প্রবাসী আয় থেকে। কারণ, প্রবাসীদের বৈধ পথে পাঠানো আয়ের পুরোটাই তাত্ক্ষণিকভাবে দেশে চলে আসে। আর রপ্তানি আয়ের বড় অংশই আমদানি দায় পরিশোধে খরচ হয়ে যায়।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের রেমিট্যান্স আনতে সরকারের ২.৫ শতাংশ প্রণোদনার পাশাপাশি ব্যাংকগুলো অতিরিক্ত দিচ্ছে আরো ২.৫ শতাংশ প্রণোদনা। অর্থাত্ বৈধপথে দেশে বৈদেশিক আয় পাঠালে মোট ৫ শতাংশ প্রণোদনা পাবেন তারা। কিন্তু লক্ষণীয় যে প্রণোদনা সত্ত্বেও প্রবাসীরা বৈধ পথে তথা ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ প্রেরণে কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে আকৃষ্ট হচ্ছেন না। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আশানুরূপ বৃদ্ধি পাচ্ছে না।
এদিকে ২০২৩ সাল জুড়েই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুত ধরে রাখা নিয়ে চাপে ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কারণ, আইএমএফের ঋণের শর্ত ছিল, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর শেষে অন্তত ২৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলারের নেট রিজার্ভ থাকতে হবে। তবে তা ধরে রাখা যায়নি। কারণ, সারা বছরই প্রতি মাসে গড়ে অন্তত ১ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করতে হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, বর্তমান বাজার দরের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেধে দেওয়া দামের কোনো মিল নেই। এ কারণে অনানুষ্ঠানিক মাধ্যমে বা হুন্ডিতে রেমিট্যান্স বাড়ছে। আনুষ্ঠানিক মাধ্যমে প্রবাসী আয় বাড়াতে হলে বাজার দর অনুযায়ী ডলারের বিনিময় হার ঠিক করতে হবে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post