হার্টের রিংয়ের (স্টেন্ট) নতুন মূল্য নির্ধারণে চরম বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি কোম্পানির ক্ষেত্রে ‘মার্কআপ ফর্মুলা’ অনুসরণ করা হলেও ইউরোপের ২৪টি কোম্পানির ক্ষেত্রে এটি অনুসরণ করা হয়নি। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর দাম সামান্য কমে গেলেও ইউরোপের কোম্পানিগুলোর দাম কস্টিং খরচের চেয়েও কমে গেছে।
ইউরোপের দেশগুলো থেকে রিং আমদানিকারক ২৪ প্রতিষ্ঠান গত ১২ দিন ধরে এসব সরঞ্জাম বিক্রি বন্ধ রেখেছে। পুনরায় মূল্য সমন্বয় না হওয়া পর্যন্ত শুধু সংকটাপন্ন রোগী ছাড়া হাসপাতালগুলোতে রিং সরবরাহ ও অন্যান্য রোগীদের কাছে বিক্রি করা হবে না বলে জানিয়েছে তারা। মূল্য পুনর্নির্ধারণ করে দ্রুত সমাধান চেয়েছে আমদানিকারকরা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে হার্টের মূল্য নিয়ে কালোবাজারি চলছে। এটা নিয়ন্ত্রণ করতে প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে। নেপথ্যে অর্থের লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রোগীরা। লাগাম টানতে মূল্য নির্ধারণের নামে বৈষম্য সৃষ্টি করে রোগীদের নতুন করে ভোগান্তিতে ফেলেছে প্রশাসন। রিং বিক্রি বন্ধ থাকায় সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন রোগীরা।
হার্টের স্ট্যান্টের দাম পুনর্বিবেচনা করার দাবিতে ২৪টি কোম্পানির প্রতিনিধিদল মঙ্গলবার ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফের সঙ্গে দেখা করেন।
তারা জানান, ডলারের দাম বৃদ্ধিতে আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় আগের মূল্যে বিক্রি সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু আলোচনায় কোনো সুরাহা হয়নি। আরও আলোচনা করতে আগ্রহী ঔষধ প্রশাসন। ব্যবসায়ীরা জানান, সঠিক আশ্বাস না পাওয়ায় স্ট্যান্ট বিক্রি বন্ধ থাকবে। তবে মানুষের খুবই ইমার্জেন্সিতে বিক্রি করা হবে।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, জাতীয় মূল্য নির্ধারণ কমিটির পরামর্শেই হার্টের রিংয়ের নতুন দাম বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দাম নির্ধারণে কমিটির অর্ধেকের বেশি সদস্যের মতামতই নেওয়া হয়নি। এখন প্রশ্ন উঠেছে কার স্বার্থে এই বৈষম্যের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে?
ইউরোপের কোম্পানি থেকে হার্টের রিং আমদানিকারক শুভ বলেন, ইউরোপের ২৪ কোম্পানির মূল্য নির্ধারণে করা হয়েছে খরচের চেয়ে কম দামে। যেটার খরচ ১০০ টাকা, সেটা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে ৮০ টাকা। এটা হতে পারে না। তবে ইউএসএর তিন কোম্পানির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে আমদানি কষ্ট ঠিক রেখে। এজন্য তারা লাভবান হচ্ছে।
যারা মূল্য নির্ধারণ করেছেন, তারা স্বীকার করেছেন কোনো কোনো কোম্পানির রেট অনেক বেশি। তাই মূল্য পুনর্নির্ধারণ করা উচিত। ইউএসএ থেকে রিং আমদানিকারক ব্যবসায়ী ডালিম বলেন, আমাদেরও কমিয়েছে। ১৩ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি সবকিছু বিবেচনা করে মূল্য নির্ধারণ করেছে। ইউরোপের ২৪ কোম্পানি থেকে হার্টের রিং যারা আমদানি করে। তারা বলেন, রোগীদের বৃহত্তর স্বার্থে বিষয়টি দ্রুত সুরাহা করা উচিত। এ নিয়ে আদালতে রিটও করা হয়েছে।
এদেশে আলু, পেঁয়াজ, রসুনসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য ইচ্ছামতো বাড়ে। একশ্রেণির ডাক্তার কমিশন খেয়ে বলে দেন, কোন কোম্পানির রিং লাগবে। হার্টের রিংও ইচ্ছামতো বাড়ানোর পরিপ্রেক্ষিতে মূল্য নির্ধারণ কমিটি মূল্য ঠিক করে দিয়েছে। তবে তা সঠিকভাবে করা হয়নি। এদেশে যেসবই সম্ভব তার জ্বলন্ত প্রমাণ এটি। দেশে ওষুধের দামও প্রতি বছর বাড়ছে অস্বাভাবিকভাবে। এটা নিয়ন্ত্রণে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।
হার্টের রিংয়ের মূল্য নির্ধারণে ১৩ সদস্যের কমিটির প্রধান হলেন ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। হার্টের রিংয়ের মূল্য নির্ধারণ কমিটির সদস্য ও জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীর জামাল উদ্দিন বলেন, আবার যদি হার্টের রিংয়ের মূল্য নির্ধারণ করার বৈঠক হয়, তাহলে বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসা সরঞ্জাম হার্টের রিং সংকটে বহু মানুষের জীবন হুমকির মুখে পড়ছে বলে অভিযোগ করছেন অনেকে। সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এমন বাস্তবতায় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোও সমস্যা সমাধানে ঔষধ প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। দেশের একেক হাসপাতালে হার্টের রিংয়ের দাম ছিল একেক রকম।
২০১৭ সালের ১৮ এপ্রিলে দাম সমন্বয়ে মূল্য জাতীয় নীতিমালা বা মার্কআপ ফর্মুলা তৈরি করা হয়। সেই সময় ১৩ সদস্যের কমিটি করে সরকারের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। ঐ কমিটি ২৮ ধরনের রিংয়ের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করে দেয়। এ নির্ধারিত দামেই দেশের সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের রোগীর কাছে রিং বিক্রি করে আসছিলেন ব্যবসায়ীরা। তবে কয়েক দফায় ডলারের দাম বাড়ায় ঔষধ প্রশাসন নতুন করে রিংয়ের দাম সমন্বয়ের উদ্যোগ নেয়।
মার্কিন কোম্পানির হার্টের রিংয়ের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে মার্কআপ ফর্মুলা অনুসরণ করা হয়েছিল, কিন্তু ইউরোপীয় কোম্পানির ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। এতে ইউরোপীয় আমদানিকারকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা অভিযোগ করেছেন যে, মার্কআপ ফর্মুলা না মেনে দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে কিছু চিকিৎসক ও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের স্বার্থ জড়িত থাকতে পারে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post