প্রেম প্রত্যাখ্যান করায় প্রেমিকের ওপর অভিমান করে নিজের শরীরে আগুন দিয়েছিলেন কলেজ শিক্ষার্থী। বর্তমানে তিনি ঢাকা শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) রাতে ভুক্তভোগীর বাবা আবদুল মালেক মুঠোফোনে এ দাবি করেছেন।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ওই শিক্ষার্থীর বাবা বলেন, গত বছরের অক্টোবর-নভেম্বর মাসে আমার মেয়ের বিয়ের জন্য একটি প্রস্তাব আসে। এতে আমার মেয়ে অসম্মতি জানিয়ে নাহিদ নামে এক সহপাঠীর সঙ্গে তার সম্পর্কের কথা জানায়। তখন থেকে আমি আর তাকে বিয়ের জন্য চাপ দেয়নি। গত বছরের নভেম্বর মাসে নাহিদের ভাই লক্ষ্মিয়ারা বাজারে আমার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেন। তখন তার ভাই নাহিদকে প্রবাসে পাঠিয়ে দেবেন এবং প্রবাস থেকে ফেরা পর্যন্ত আমার মেয়েকে তার জন্য অপেক্ষা করতে বলেন। এরপর এ বিষয়ে বিগত এক বছরে আর কোনো কথা বলিনি।
মেয়ের বরাত দিয়ে তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি আমার মেয়েকে নাহিদ প্রত্যাখ্যান করেছে বলে জানিয়েছে। আমার ধারণা, ওই অভিমানে আমার মেয়ে এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে। আমার মেয়ের শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন। এই মুহূর্তে আমরা তার সুস্থতা ছাড়া আর কিছুই ভাবছি না। এর আগে, গত সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুরে ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের লক্ষ্মিয়ারা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে নিজের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেন ওই শিক্ষার্থী।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, লক্ষ্মিয়ারা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে নাহিদ নামে এক ফল ব্যবসায়ীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল আগুনে দগ্ধ শিক্ষার্থীর। তাদের মধ্যে কিছুদিন ধরে সম্পর্ক নিয়ে টানাপোড়েন চলছিল। গত সোমবার সকালে লক্ষ্মিয়ারা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের ভেতরে নিজের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেন তিনি।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী লক্ষ্মিয়ারা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক মহিমা রাণী পাল বলেন, ‘বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে মিটিং চলাকালে একটি ফোনকল আসায় আমি বাইরে বের হই। ফোনে কথা বলা অবস্থায় স্কুল গেটের ভেতর ওই মেয়েকে ঘোরাঘুরি করতে দেখি। একপর্যায়ে গেটের ভেতরে বসা অবস্থায় তার শরীরের সামনের অংশে হঠাৎ আগুন জ্বলতে দেখি।
তখন মেয়েটি চিৎকার করে দৌড়ে ৬০-৭০ গজ সামনে স্কুলের টিউবওয়েলের কাছে এসে বসে পড়ে। পরে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বাজারের লোকজন ছুটে এসে মেয়েটির শরীরে পানি ঢালে আগুন নিভিয়ে ফেলেন। এ সময় আমার গায়ের চাদর দিয়ে দগ্ধের শরীর ঢেকে দিয়েছিলাম। তখন ঘটনাস্থলে দিয়াশলাই দেখতে পেয়েছি।’
একই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোপাল চন্দ্র দাস বলেন,
“বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে একটি সভা চলছিল। এমন সময় চিৎকার শুনে বের হয়ে দগ্ধ অবস্থায় তাকে (মেয়েটি) দেখতে পেয়েছি। আমরা সেখান থেকে দ্রুত তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠাই।”
বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. রুহুল আমীন বলেন, ‘সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার পর থেকে ওই মেয়েটি স্কুল ফটকের ভেতর ঘুরাঘুরি ও শহীদ মিনারে বসে থাকতে দেখেছি। দশম শ্রেণির ক্লাস করানোর সময় কেরোসিনের গন্ধ পেয়ে শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞেস করি। তখন বাইরের এসব বুঝিনি। দুপুর ১২টার দিকে অফিসকক্ষে মিটিং চলাকালে বাইর থেকে শোর চিৎকার শুনে বের হয়ে দগ্ধ অবস্থায় তাকে দেখতে পাই।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্কুল ফটকের সামনের এক ব্যবসায়ী বলেন, নাহিদের সঙ্গে দেখা করতে মেয়েটি লক্ষ্মিয়ারায় এসেছিলেন। এ ঘটনার সময় নাহিদও দোকানে ছিল বলে আশপাশের লোকজন থেকে জেনেছি। স্কুলের গেইট ও নাহিদের দোকানের অবস্থান মুখোমুখি হওয়ায় ওই মেয়ে গেটের ভেতর থেকে তার (নাহিদ) সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করছিল। গায়ে আগুন দেওয়ার একপর্যায়ে নাহিদ দোকান থেকে বের হয়ে দৌঁড়ে পালিয়ে যায়।
নাহিদের প্রেমের সম্পর্কের কথা জানতেন না দাবি করে তার ভাই নাসির উদ্দিন সোহেল বলেন, গত সোমবারের ঘটনার পরই আমাদের পরিবার সম্পর্কের কথা জেনেছে। তাদের প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে দুই পরিবারের পারিবারিক কথাবার্তার যে কথা ছড়িয়ে পড়েছে তা সত্য না। দগ্ধ মেয়ের বক্তব্য পাওয়া গেলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। এ সময় নাহিদ ও তার বাবার সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন সোহেল।
নাহিদের বড় বোন সালমা আক্তার বলেন, দগ্ধ মেয়েটি যদি আগে বিষয়টি আমাদের জানাতো তাহলে পারিবারিকভাবে বসে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া যেত। এমন ঘটনা কোনভাবেই কাম্য না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দগ্ধের ছবি দেখে কান্না করেছি। তার সুস্থতায় নফল নামাজ পড়ে দোয়া কামনা করেছি।
তিনি আরও বলেন, আমার ভাই (নাহিদ) ও মেয়েটি সহপাঠী ছিল। যদি তাদের প্রেমের সম্পর্ক থেকেও থাকে তবে এখনো বিয়ের বয়স হয়নি। অথচ মানুষ ঘটনাকে ভিন্ন দিকে নিতে বিভিন্ন ধরনের কথা রটাচ্ছেন।
ফেনী ন্যাশনাল কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল হালিম বলেন, মেয়েটি ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে মানবিক বিভাগে ভর্তি হয়েছিল। কলেজে এখন পর্যন্ত কোনো অস্বাভাবিক কিছু আমাদের চোখ পড়েনি। তার এমন ঘটনায় আমরা সবাই ভারাক্রান্ত।
ফেনীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) থোয়াই অংপ্রু মারমা বলেন, ঘটনাস্থল থেকে দিয়াশলাই উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনার রহস্য উদঘাটনে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post