ক্যান্সার আক্রান্ত ইব্রাহিমের শেষ ইচ্ছাপূরণ করতে ফরাসি ডাক্তারের মানবিক উদ্যোগ। ফ্রান্সে ক্যান্সারে আক্রান্ত ইব্রাহিমের শেষ ইচ্ছা ছিল তার মা-বাবা এবং পরিবারকে একবার দেখা। কিন্তু তার বৈধ কাগজপত্র না থাকায় তাকে দেশে ফিরিয়ে নেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। ইব্রাহিমের এই দুঃখের কথা জানতে পেরে তার ফরাসি চিকিৎসক জামালো নিজেই তাকে নিয়ে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানিয়েছেন, ক্যান্সারের শেষ স্টেজ চলছে ইব্রাহিমের। ইব্রাহীমের বাড়ি ভোলার চরফ্যাশন থানার হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নে। দুই বছর আগে ফ্রান্সে আসেন ইব্রাহিম । তিনি এক বছর থেকে দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন । ফ্রান্সে তিনি নিয়মিত হতে পারেননি (কোনো বৈধ ডকুমেন্টস নেই) । তবে তাতে মানবতার তীর্থভূমি খ্যাত ফ্রান্সে চিকিৎসার কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি তার ক্ষেত্রে। জাফর হাওলাদার ইব্রাহীমের আপন ভাই।
যিনি ফ্রান্সে তাকে দেখাশুনা করছেন। বর্তমান পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে ইব্রাহিমের বন্ধু প্রবাসী শিহাব উদ্দিন বলেন, আমরা ২০১৮ সালে ইউরোপের জন্য একসঙ্গে ফাইল জমা দিলেও আমি ভিসা পাই। কিন্তু তিনি পাননি। তারপর তিনি অনেক অপেক্ষা শেষে প্রায় ২০ লাখ টাকা খরচ করে সুইডেন স্টুডেন্ট ভিসায় ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ফ্রান্সে আসেন। কিন্তু আসার এক বছরের মাঝেই তার মরণব্যাধি ক্যান্সার ধরা পড়ে। ৫টি কেমোথারাপি দিয়েও কোনো উন্নতি হয়নি তার।
চিকিৎসক পরামর্শ দিয়েছেন, রোগীকে দেশে পাঠিয়ে মা-বাবা বা পরিবারকে দেখার সুযোগ করে দিতে। কোনো নার্স দিয়ে ইব্রাহিমকে বাংলাদেশ পর্যন্ত পাঠানোর আবেদন জানানো হয় রোগীর তরফে। কিন্তু এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এরপর চিকিৎসক নিজ উদ্যোগে ঝুঁকি নিয়ে ইব্রাহিমের সঙ্গে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওয়া দেন। যা সত্যিই অবিশ্বাস্য, মানবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
আজ সন্ধ্যা ৬ টা ৩০ মিনিটে ডাক্তার এবং ইব্রাহিম বাংলাদেশের উদ্দেশ্য রওনা দিয়েছেন। কাল সকাল ৮ টার দিকে ঢাকা এয়ারপোর্টে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। ইব্রাহিমের ভাই জাফর হাওলাদার বর্তমান পরিস্থিতি বর্ণনা করে বলেন, অনেক আশা নিয়ে ছোট ভাইকে ফ্রান্সে এনেছিলাম। কিন্তু দুরারোগ্য ক্যান্সারের কারণে সে আশা পূরণ হলো না। ফরাসি চিকিৎসক জামালো যে অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন।
রোগীর প্রতি তার ভালোবাসার নিদর্শন রেখে চলছেন। রোগীকে সঙ্গে নিয়ে দেশে আসার আগ্রহ দেখিয়েছেন মানবিক সেই চিকিৎসক নিজেই। এটাই শেষ সান্ত্বনা।ডাক্তার জামালের মতো যদি বাংলাদেশে কোনো ডাক্তার বা বাংলাদেশের কোনো মানবিক ব্যক্তি এগিয়ে আসতেন, তাহলে আমার ভাইকে ইন্ডিয়ায় নিয়ে সুষ্ঠু চিকিৎসা দিলে আরো কিছুদিন এই পৃথিবীর আলো বাতাস নিতে পারত। আমাদের যতটুকু সামর্থ্য ছিল সবকিছু দিয়ে আমরা চেষ্টা করেছি।
ফ্রান্স প্রবাসী সিনিয়র সাংবাদিক লুৎফুর রহমান বাবু ও আইসার পরিচালক ওবায়দুল্লাহ কয়েছ এবং ইব্রাহিমের বন্ধু শিহাব সহ ফ্রান্স বাংলাদেশ কমিউনিটি ,বরিশাল কমিউনিটির সবাই এগিয়ে এসেছেন ইব্রাহিমের শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে। তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান জাফর হাওলাদার।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post