ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি ইসলাম ধর্ম নিয়ে বিতর্কিত ও বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ইসলাম ও ইউরোপের মূল্যবোধের মধ্যে সামঞ্জস্যের সমস্যা রয়েছে। এমনকি তিনি আরও বলেছেন, ইতালিতে ইসলাম ধর্মের কোনো জায়গা নেই।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন মতে, রোববার (১৭ ডিসেম্বর) ইতালির রাজধানী রোমে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ক্ষমতাসীন কট্টর ডানপন্থি দল দ্য ব্রাদার্স অব ইতালি। ওই অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ও মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্কও উপস্থিত ছিলেন। সেখানে বক্তব্য দিতে গিয়ে ইসলাম নিয়ে বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য করেন মেলোনি।
ইসলাম নিয়ে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির মন্তব্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে। তাতে দেখা যায়, ইতালিয়ান ভাষায় বক্তব্য রাখছেন মেলোনি।
ইতালির প্রধানমন্ত্রীর মতে, ইসলামে বর্ণিত সংস্কৃতি ইউরোপীয় সভ্যতার মূল্যবোধ ও অধিকারের মধ্যে কোনো মিল নেই। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, ইসলামিক সংস্কৃতি আর আমাদের (ইউরোপের) নাগরিকদের আদর্শ ও অধিকার সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ইতালিতে শরিয়া আইন চালু করতে দেয়া যাবে না। আমাদের সভ্যতার আদর্শ সামান্য আলাদা।’
ইতালিতে যেসব ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র রয়েছে, সেগুলোর কর্মকাণ্ড ও অর্থায়ন নিয়েও প্রশ্ন তোলেন জর্জিয়া মেলোনি। এ সময় সৌদি আরব ও দেশটির শরিয়া আইনেরও সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘ইতালির ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলো সৌদির অর্থে পরিচালিত হয়। যে দেশটিতে শরিয়া আইন চালু রয়েছে। ইউরোপেও ইসলামিকরণ প্রক্রিয়া চলছে যার সঙ্গে আমাদের সভ্যতার মূল্যবোধের পার্থক্য রয়েছে।’
শরিয়া আইনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, শরিয়া অতি কঠোর। যা ধর্মত্যাগ ও সমকামিতাকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে দেখে। আমি মনে করি, এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন। ইউরোপের নানা প্রান্তে ইসলামের কিছু আদর্শ ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে, যা মোটেই আমাদের সঙ্গে মানায় না। আমাদের মূল্যবোধ একেবারেই আলাদা।’
ওই অনুষ্ঠানে অভিবাসনের বিরুদ্ধেও কথা বলেন মেলোনি। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক তার বক্তব্যে অবৈধ অভিবাসীর ঢল থামাতে ইতালির নতুন পদক্ষেপের প্রশংসা করেন। সম্প্রতি ইতালির মতোই অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে সুনাকের যুক্তরাজ্যও। এমনকি অভিবাসীদের তাড়াতে আফ্রিকার রুয়ান্ডার সঙ্গে বিতর্কিত একটি চুক্তির দ্বারপ্রান্তে রয়েছে তার দেশ।
অবশ্য ইসলাম ও মুসলিমদের ব্যাপারে মেলোনির এমন বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য নতুন নয়। গত বছরের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার আগে ও পরে অসংখ্যবার মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণার বিষ উগরে দিয়েছেন তিনি। সরকার গঠনের পর গত এক বছরে ইসলামবিরোধী অনেক পদক্ষেপও নিয়েছেন তিনি।
ইউরোপজুড়ে প্রথা বা প্রতিষ্ঠানবিরোধী রাজনীতির প্রতি জনসমর্থন বাড়ছে। এই অঞ্চলের দেশগুলোর জাতীয় নির্বাচনেও তার ফল দেখা যাচ্ছে। জনগণের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ এখন পপুলিস্ট বা জনতুষ্টিবাদ, কট্টর ডানপন্থি বা কট্টর বামপন্থি দলগুলোকে ভোট ক্ষমতায় আনছে। যা মূলধারার রাজনীতিকে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, ইউরোপে গত দুই দশক ধরে কট্টরপন্থা বা উগ্রপন্থা দ্রুতগতিতে বেড়েছে। যে ইউরোপকে এক সময় উদারপন্থি গণতন্ত্রের দুর্গ বলা হত, সেখানে এখন অভিবাসনবিরোধী, জাতীয়তাবাদী ও ইসলামবিদ্বেষী রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে ভালো করছে। ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানি বা সুইডেনের মতো বেশ কিছু দেশে এসব দল প্রধান রাজনৈতিক দলের কাতারে উঠে আসছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post