বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোনো ইসলামী ব্যাংককে ক্লিয়ারিং হাউস বা নিকাশ ঘর থেকে বিরত বা বিচ্ছিন্ন রাখার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। কয়েকটি জাতীয় দৈনিক এবং অনলাইন পোর্টালে এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশের পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এতে বলা হয়, বেশ কয়েকটি পত্রিকা ও অনলাইন পোর্টালে শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কয়েকটি ইসলামী ব্যাংককে ক্লিয়ারিং হাউস বা নিকাশ ঘর থেকে বিরত বা বিচ্ছিন্ন রাখার খবর প্রকাশ করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকাশ ঘর পরিচালিত হয় পেমেন্ট সিস্টেমস বিভাগের তত্ত্বাবধানে এবং পেমেন্ট সিস্টেমস বিভাগ থেকে এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকে সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের চলতি হিসাবে ক্লিয়ারিং সেটেলমেন্ট ছাড়াও অন্য সব ধরনের লেনদেন যেমন: সরকারি সিকিউরিটিজ, কলমানি ইত্যাদি সম্পন্ন হয়। ফলে দিনশেষে যে কোনো ব্যাংকের স্থিতি ঋণাত্মক হতে পারে এবং সে ক্ষেত্রে বিডি ম্যানুয়াল ১৯৪৫-এ বর্ণিত নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংকগুলো দিনশেষে বা পরবর্তী সময়ে সমন্বয় করে থাকে। এটি একটি চলমান এবং নিয়মিত প্রক্রিয়া যা বহুদিন থেকেই অনুসৃত হয়ে আসছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক গণমাধ্যমকে জানান,
“ইসলামী ব্যাংকগুলোর লেনদেন কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হবে, এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। আগামী রোববার (১৭ ডিসেম্বর) এ বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা গণমাধ্যমের কাছে উপস্থাপন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।”
এদিকে এ বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি
এক বিজ্ঞপ্তিতে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক জানায়, সম্প্রতি কিছু পত্রিকায় ব্যাংকের তারল্য পরিস্থিতি নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, যা বাস্তবতাবিবর্জিত এবং দেশের অর্থনৈতিক গতিশীলতাকে বাধাগ্রস্ত করার অপপ্রয়াস ছাড়া কিছুই নয়। এসব নেতিবাচক সংবাদে গ্রাহকদের বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে ব্যাংকটি।
ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি
এক বিজ্ঞপ্তিতে ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি জানায়, শুক্রবার দেশের কয়েকটি সংবাদপত্রে শরিয়াহভিত্তিক পাঁচ ব্যাংকের তারল্য সংকট সংক্রান্ত যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে সেটি ইউনিয়ন ব্যাংকের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। প্রকাশিত সংবাদে বাংলাদেশ ব্যাংকের কথিত চিঠির উদ্ধৃতি দিয়ে ইউনিয়ন ব্যাংক সম্পর্কে যেসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে, তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে। প্রকাশিত প্রতিবেদনে বাস্তবতাবিবর্জিত, অপ্রাসঙ্গিক ও অতিরঞ্জিত অনেক বক্তব্য লেখা হয়েছে, যা সত্যের অপলাপমাত্র।
দেশের ব্যাংক খাত তথা অর্থনীতিকে অস্থিতিশীল করে তোলার হীন চক্রান্ত থেকেই এসব অসত্য ও বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে বলে মনে করে ইউনিয়ন ব্যাংক। বেশ কিছু দিন ধরে একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী দেশের শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে ধারাবাহিক মিথ্যাচার করে আসছে। তারল্য সংকট সংক্রান্ত প্রকাশিত সংবাদ সেসব মিথ্যাচার ও ষড়যন্ত্রমূলক নীলনকশারই অংশ।
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি
এক বিজ্ঞপ্তিতে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ জানায়, কয়েকটি পত্রিকা ইসলামী ব্যাংকের তারল্য পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে যা অসত্য, বিভ্রান্তিকর, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং দেশের ব্যাংকিং খাত তথা অর্থনীতি অস্থিতিশীল করার অপপ্রয়াস ছাড়া আর কিছুই নয়। সংবাদটি বাস্তবতাবিবর্জিত ও অশুভ চক্রান্তের নগ্ন বহিঃপ্রকাশ মাত্র।
সংবাদে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চিঠি পাঠানোর যে তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। বরং বাংলাদেশ ব্যাংকের সব বিধিবদ্ধ নিয়ম মেনে ইসলামী ব্যাংক সব কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক
এক বিজ্ঞপ্তিতে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক জানায়, কয়েকটি পত্রিকা গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের তারল্য পরিস্থিতি নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশ করেছে; যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং বিভ্রান্তিকর। গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকে বর্তমানে কোনো তারল্য সংকট নেই এবং সংবাদে উল্লিখিত এ সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ২৮ নভেম্বর কোনো চিঠি দেয়া হয়নি। যেহেতু গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি তারল্য সংকটে নেই, তাই সংবাদে উদ্ধৃত ২০ দিন সময়সীমা বেঁধে দেয়ার কোনো বিষয়ই নেই।
দেশের অর্থনীতির সুসংহত ধারা বজায় রাখা এবং জীবনযাত্রার উন্নত মান রক্ষার্থে সরকার, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যখন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে তখন এরূপ বিভ্রান্তিকর এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত সংবাদ প্রকাশ ব্যাংকিং খাতের শৃঙ্খলা নষ্ট করে দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করবে।
উল্লেখ্য, এর আগে শুক্রবার বেশ কিছু গণমাধ্যম জানায়, সংকটে থাকা শরিয়াহভিত্তিক পাঁচ ব্যাংককে (ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক) ২৬ ডিসেম্বরের মধ্যে চলতি হিসাবের টাকার ঘাটতি পূরণ করতে বলেছে বাংলাদেশে ব্যাংক। না হলে এই ব্যাংকগুলোর লেনদেন কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হতে পারে। পাশাপাশি দীর্ঘদিন চলতি হিসাবের স্থিতি ঋণাত্মক থাকায় এসব ব্যাংককে ২০ দিনের মধ্যে অর্থ সমন্বয়ের সময় বেঁধে দিয়ে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post