যে দেশে মুসলিম আছে, সে দেশে মসজিদ থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। আল্লাহ বলেন, “মসজিদগুলোকে আবাদ রাখার জন্য তারাই যোগ্য, যারা আল্লাহ ও শেষ বিচারের দিনের প্রতি বিশ্বাসী, নিয়মিত নামাজ আদায় করে, যাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ভয় করে না।” -সুরা তাওবা : ১৮
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মসজিদ ইন্দোনেশিয়ায়, সংখ্যায় প্রায় আট লাখ। দ্বিতীয় অবস্থানে ভারত, সংখ্যায় তিন লাখ (News East West)। তৃতীয় অবস্থানে বাংলাদেশ, দুই লাখ ৫০ হাজার ৩৯৯টি (ইফাবা, জরিপ)। পাকিস্তানে মসজিদের সংখ্যা বাংলাদেশের চেয়েও কম। আবার ভারতে অনেক এলাকায় মাইকে আজান ও প্রকাশ্যে গরু জবাইয়ের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আছে।
পৃথিবীর সর্বত্র মুসলিম থাকলেও কয়েকটি দেশে মসজিদ নেই। তেমনি একটি দেশ ভুটান! ভুটান এশিয়ার সবচেয়ে সুখী দেশ। আয়তন ৪৬ হাজার ৫০০ বর্গকিলোমিটার। রাজধানী থিম্পু। ভুটানের নামকরণ সংস্কৃত ‘ভূ-উত্থান’ (উচ্চ ভূমি) থেকে।
অন্য মতে, ভুটান এসেছে ভোটস-আন্ত, অর্থাৎ তিব্বতের শেষ সীমানা। স্থলবেষ্টিত দেশ ভুটানের আকার, আকৃতি ও পার্বত্য ভূ-প্রকৃতি সুইজারল্যান্ডের সদৃশ। তাই অনেকে ভুটানকে এশিয়ার সুইজারল্যান্ড বলেন। ভুটানে ৭৪.৮ শতাংশ বজ্রযান বৌদ্ধধর্ম (রাষ্ট্রধর্ম), ২২.৬ হিন্দুধর্ম, ১.৯ বন ও অন্যান্য দেশজ ধর্ম, ০.৫ খ্রিস্টধর্ম, ০.৪ ইসলাম ও ০.২ শতাংশ অন্যান্য। ভুটানে মুসলমানের সংখ্যা প্রায় আট হাজার।
আশার কথা, ২০৩০ সালে এ সংখ্যা দাঁড়াবে ৯ হাজারে। এখানে মসজিদ স্থাপন ও প্রকাশ্যে নামাজের অনুমতি নেই। কর্র্তৃপক্ষের আতঙ্ক, মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হলে তা সেন্টারে পরিণত হবে এবং ইসলাম প্রচারে ব্যাপক অবদান রাখবে। এতে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা ইসলাম গ্রহণ করবেন। তবে ভুটানে মুসলমানের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে এখানে মসজিদ নির্মাণের দাবিও জোরালো হচ্ছে। ভুটানে মুসলমান পর্যটকদেরও নামাজ পড়তে হয় হোটেলে। ভুটানে বাংলাদেশ দূতাবাসে নামাজের ব্যবস্থা আছে। সেখানে জুমার নামাজও হয়।
মসজিদ নেই এমন তালিকায় স্লোভাকিয়া শীর্ষস্থানীয়। স্লোভাকিয়ায় অন্তত পাঁচ হাজার মুসলিমের বসবাস। মোট জনসংখ্যার প্রায় ০.১ শতাংশ। এখানকার মুসলমানরা বহুবার মসজিদের দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন। অথচ ২০১৬ সাল থেকে সেখানে ‘ধর্মীয় পরিচয় নির্দিষ্ট না করার’ একটি আইন বলবৎ হয়েছে।
মসজিদবিহীন আরেকটি দেশ এস্তোনিয়া। সেখানে দেড় হাজারের বেশি মুসলিমের বসবাস। জনসংখ্যার ০.১৪ শতাংশ। এ দেশেও মসজিদ নেই।
মসজিদবিহীন আরেকটি দেশ মোনাকো। এখানেও বিপুলসংখ্যক মুসলিম জনগোষ্ঠীর বসবাস। এটি পশ্চিম ইউরোপের একটি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ দেশ। আয়তন প্রায় ২.০২০ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা ৩৭ হাজার ৩০৮-এর মতো। জনসংখ্যার ৮৩ শতাংশ খ্রিস্টান। তিন দিকে ফ্রান্স আর অন্যদিকে ভূমধ্যসাগর। ইতালির খুব কাছাকাছি। মোনাকোতে ১২৫ দেশের মানুষ বসবাস করে। কিন্তু এখানেও মসজিদ নেই। কাজেই ওই সব দেশে ফ্ল্যাট, দোকান, গ্যারেজেই নামাজ আদায় করেন মুসলমানরা।
মসজিদবিহীন আরেকটি দেশ ভ্যাটিকান সিটি। এটি পোপের দেশ, ইউরোপিয়ান দেশ ইতালির রোম শহরের মধ্যস্থলে প্রাচীর দিয়ে বেষ্টিত স্বাধীন রাষ্ট্রের নাম ভ্যাটিকান সিটি। ছোট এ দেশটি পাহাড়ের ওপরে অবস্থিত। দেশটির আয়তন মাত্র ০.৪৪ বর্গকিলোমিটার বা ১১০ একর। এটি হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম রাষ্ট্র। এখানকার রাষ্ট্রনেতা হলেন পোপ। ১৯৮৪ সালে জাতিসংঘ ঘোষিত ‘বিশ্ব ঐতিহাসিক স্থান’ এবং খ্রিস্টধর্মের অন্যতম পবিত্র স্থান হিসেবে এটি বিবেচিত হয়। এই দেশে নেই কোনো মুসলমান, নেই কোনো মসজিদ।
মসজিদবিহীন আরেকটি দেশ উরুগুয়ে। উরুগুয়ে দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার মধ্যে অবস্থিত একটি দেশ। খ্রিস্টান অধ্যুষিত উরুগুয়েতে ৯০০ থেকে ১০০০ ইসলাম ধর্মাবলম্বী বাস করেন, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার ০.০২ শতাংশ। দেশটিতে নেই কোনো মসজিদ। তবে সেখানে তিনটি ইসলামিক সেন্টার আছে। এগুলো হলো- ১. মুসাল্লাহ আল হাজিমি। ২. ইজিপশিয়ান কালচারাল ইসলামিক সেন্টার। ৩. ইসলামিক সেন্টার উরুগুয়ে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post