জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোর কারণে হামাস এবং ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতির এক প্রস্তাব ভেস্তে গেছে। শনিবার (৯ ডিসেম্বর) যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোর পর জাতিসংঘকে সতর্ক করে দিয়ে ইরান বলেছে, মার্কিন এমন পদক্ষেপের কারণে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে এমন বিস্ফোরণ ঘটবে; যা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে।
ইরানের শীর্ষ কূটনীতিক হোসাইন আমির আব্দুল্লাহিয়ান টেলিফোনে আলাপকালে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেসকে বলেছেন, ‘‘আমেরিকা ইহুদিবাদী শাসকের (ইসরায়েল) অপরাধ এবং যুদ্ধের প্রতি যদি ধারাবাহিকভাবে সমর্থন জানিয়ে যায়… তাহলে এই অঞ্চলের পরিস্থিতিতে এক অনিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।’’
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে আমির আব্দুল্লাহিয়ানের সাথে জাতিসংঘ মহাসচিবের টেলিফোনে আলোচনার তথ্য জানানো হয়েছে। এ সময় অবিলম্বে গাজায় হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানান ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
একই সঙ্গে জাতিসংঘ সনদের ৯৯ নম্বর অনুচ্ছেদের ব্যবহারে অ্যান্তনিও গুতেরেসের সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেন তিনি। ওই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য জাতিসংঘ মহাসচিব সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছেন বলেও মন্তব্য করেছেন আমির আব্দুল্লাহিয়ান। যদিও ইসরায়েল জাতিসংঘ প্রধানের এই পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে।
শুক্রবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় দ্বিতীয় দফা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবটি উত্থাপন করেছিল পরিষদের অন্যতম অস্থায়ী সদস্য সংযুক্ত আরব আমিরাত। সেই প্রস্তাবে উপত্যকায় দ্বিতীয় দফা যুদ্ধবিরতির পাশাপাশি দু’টি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করেছিল আমিরাত— (১) আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের সব বেসামরিক লোকজনের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং (২) শিগগিরই এবং শর্তহীনভাবে সব জিম্মিকে মুক্ত করতে হবে।
পরিষদের বৈঠকে প্রস্তাবটি পেশ করার পর সেটি গৃহীত হয় এবং সদস্যরাষ্ট্রগুলোর ভোটের জন্য উত্থাপন করা হয়। ভোটে পরিষদের স্থায়ী-অস্থায়ী ১৫ সদস্যরাষ্ট্রের মধ্যে ১৩টিই এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়। বাদ ছিল কেবল দুই স্থায়ী সদস্যরাষ্ট্র যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাজ্য ভোটদান থেকে বিরত থাকে এবং যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাবটির বিরুদ্ধে সরাসরি আপত্তি বা ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করে।
জাতিসংঘের যুক্তরাষ্ট্র মিশনের উপ রাষ্ট্রদূত রবার্ট উড নিজ বক্তব্যে সরাসরি বলেন, ‘‘এই প্রস্তাব বাস্তবতা বিচ্ছিন্ন এবং এর মাধ্যমে আসলে গঠনমূলকভাবে সেখানে বিদ্যমান সংকটের সমাধান সম্ভব নয়।’’
‘‘আমরা এখন, এই পরিস্থিতিতে এমন কোনো অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি আর সমর্থন করতে পারি না— যা আসলে সেখানে পরবর্তী যুদ্ধের বীজ রোপন করবে।’’
জাতিসংঘের যুক্তরাজ্য মিশনের প্রধান ও রাষ্ট্রদূত বারবারা উডওয়ার্ড বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আমিরাতের প্রস্তাবে গাজা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের হামলার বিরুদ্ধে নিন্দা না জানানোয় সেটির পক্ষে ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিল যুক্তরাজ্য।
গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা ইসরায়েলের ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালানোর পর ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী। পরে ১৬ অক্টোবর থেকে অভিযানে যোগ দেয় স্থল বাহিনীও। ইসরায়েলি বাহিনীর টানা দেড় মাসের অভিযানে কার্যত ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে গাজা উপত্যকা; নিহত হয়েছেন ১৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। নিহত এই ফিলিস্তিনিদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা ১২ হাজারেরও বেশি।
অন্যদিকে, হামাস যোদ্ধাদের হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয়েছিলেন ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিক। পাশাপাশি, ইসরায়েলের ভূখণ্ড থেকে ২৪২ জন ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিকদের ধরে নিয়ে যায় হামাস যোদ্ধারা। ২৫ নভেম্বর চার দিনের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে ইসরায়েল। পরে যুক্তরাষ্ট্র, কাতার, মিসর, ইউরোপ ও অন্যান্য মধ্যস্থতাকারীদের তৎপরতায় যুদ্ধবিরতির মেয়াদ আরও তিন দিন বাড়ানো হয়। যুদ্ধবিরতির ৭ দিনে (২৫-৩০ নভেম্বর) মোট ৯৪ জন জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। বিপরীতে ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগার থেকে ১৮০ জনকে ছেড়ে দিয়েছে ইসরায়েলও।
১ ডিসেম্বর ভোর থেকে হামাস ও ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা-পাল্টা হামলার মধ্যে দিয়ে শেষ হয় এক সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি। ইসরায়েলি হামলায় গত ৮ দিনে গাজায় নিহতের সংখ্যা বেড়েছে আড়াই হাজারের বেশি এবং হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের ভাগ্যে কী ঘটবে তা এখনও অজনা।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post