সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু এখনও অনেকে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারছেন না। এতে করে তরুণ থেকে মধ্যবয়স্কদের মধ্যে মানসিক সমস্যা বেড়েই চলেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, বাংলাদেশে ৩ কোটি মানুষ মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। এতো গেলো খাতা-কলমের হিসাব। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ সংখ্যা এর চেয়েও তিন-চারগুণ বেশি। বিশেষ করে করোনা পরবর্তী সময়ে দেশের মানসিক স্বাস্থ্যের এমন পরিস্থিতি ইতিমধ্যে অনেকের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য কাউন্সিলিং-এর প্রয়োজনীয়তা অনেকেই এখনও বুঝতে পারেননি।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল হক জানান, ‘মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির সবচেয়ে বড় প্রমাণ আত্মহত্যা। অন্তত উপমহাদেশে আত্মহত্যা করলে অনেকেই বুঝতে পারেন লোকটি মানসিক সংকট বা বিষণ্নতায় ভুগছিলেন। এটি সাম্প্রতিক সময়ের সচেতনতা। আগে অনেকে সামাজিক সংকট, শারীরিক অবস্থা ও পারিবারিক অবস্থাকেই দায়ী করতেন। এখন সময় বদলেছে।
যারা আত্মহত্যা করেন কিংবা এ ধরনের প্রবণতায় ভোগেন তাদের একটি বড় অংশ দুশ্চিন্তা, বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডার, সিজোফ্রেনিয়া, সাইকোসিস ডিজঅর্ডার, সাবস্টেন্স অ্যাবিউজ, হেলথ অ্যাংজাইটি, আর্থিক সংকট, নিরাপত্তাহীনতার মতো মানসিক সমস্যায় ভোগেন।’
কাউন্সিলিংয়ের প্রতি মানুষের আগ্রহ কেন কম?
মানসিক সমস্যায় ভুগলে সচরাচর কাউন্সিলিংয়ে যাওয়াটাই ঠিক। কিন্তু আমাদের দেশে অনেকেই কাউন্সিলিং-এ যেতে চান না। এক্ষেত্রে সঠিক মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সম্পর্কে ভালোমতো না জানা অনেকটা দায়ী। অনেকে মনে করেন কাউন্সিলিং করাতে গেলে কাউন্সিলর একগাদা ঘুমের ওষুধ দিয়ে দেন। অনেকেই অভিযোগ করেন অ্যান্টি ডিপ্রেশন পিল হতাশা না কমিয়ে উল্টো বাড়ায়। কেননা ঘুমিয়ে থাকা তো কোনো সমাধান হতে পারে না। তাতে লাভ খুব হয় না।
আমাদের দেশে মানসিক সমস্যায় ভোগা সিংহভাগই তরুণ। তারা সিনথেটিক ড্রাগের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়লে নানা মানসিক সমস্যায় ভোগে। আর এই মানসিক সমস্যা নিরাময়ে কাউন্সিলিং করাতে গেলে ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয়। উপকার না পেয়ে অনেকেই কাউন্সিলিং থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন।
তাছাড়া আমাদের দেশে কাউন্সিলিং এর প্রতি আগ্রহ না থাকার বড় একটি কারণ হলো প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কাউন্সিলিংয়ের সুবিধা না থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি অফিস পর্যায়েও এমন সুবিধা নেই। যখন স্বাস্থ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে কারো ধারণাই থাকে না তখন সেই সেবা নেওয়ার ব্যাপারেও কারও আগ্রহ থাকবে না এমনটিই স্বাভাবিক।
কাউন্সিলিং ব্যবস্থার দিকে মনোযোগ বাড়াতে হবে
মন খারাপ, হতাশা ও বিষণ্নতায় ভোগা একজন মানুষ জীবনের এক পর্যায়ে এসে বেঁচে থাকার মানে হারিয়ে ফেলে। সেখানে হতাশা নামক গভীর খাদ থেকে তাকে তুলে আনতে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরে জোর দেওয়া ছাড়া আর কিছু করার নেই। কিন্তু বাস্তবতা বলছে, দেশের স্বাস্থ্যখাতে মানসিক স্বাস্থ্য নিজেই এখন খাদের কিনারায়। এখনই মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরে জোর না দিলে, সামনে বড় রকমের সমস্যা সৃষ্টি হবে। অনেক রিহ্যাব সেন্টারে মানসিক সমস্যাগ্রস্তদের নানা বিরূপ প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়তে হয়। সামাজিকভাবেও এ বিষয়ে সচেতনতার অভাব আছে। মন খারাপের অভিজ্ঞতা কারো কাছে বলে তেমন সমর্থন পাওয়া যায় না।
দেশে পেশাদার কাউন্সিলার খুবই অল্প। তাদের সম্পর্কেও মানুষের ধারণা নেই। এই খাতের প্রচারণা যেমন জরুরি তেমনি মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির ক্ষেত্রে সচেতনতা জরুরি।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post