ইন্টারনেট ব্যবহারকারী শতকরা ৭৩ জন নারী সাইবার অপরাধের শিকার বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। নারী ও কন্যার প্রতি সাইবার সহিংসতা রোধে ৮ দফা সুপারিশ জানিয়েছে সংস্থাটি। সাইবার জগতে নারীদের প্রতি সহিংসতা, ইমেইলে হয়রানি, সাইবার বুলিং, সাইবার পর্ণগ্রাফি প্রতিরোধে এ সুপারিশ জানানো হয়।
শনিবার (২ ডিসেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘নারী ও কন্যার প্রতি সাইবার সহিংসতা: বাস্তবতা ও করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এসব কথা উঠে আসে। সভা সুপারিশ তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. কাবেরী গায়েন।
কাবেরী গায়েন বলেন, ‘নারীদের প্রতি সাইবার সহিংসতার ক্ষেত্রে সুরাহার পথ হলো আইনি ব্যবস্থায় জোরারোপ ও সমাজ মনস্তত্ত্বের পরিবর্তন সাধন। আইনের ক্ষেত্রে সাইবার অপরাধের সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞায়ন প্রয়োজন। সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে নারীদের অভিযোগ দাখিলের ক্ষেত্রে যে জড়তা তা দূর করার জন্য আইনের কোন সেকশনে অভিযোগ দাখিল করতে হবে, কি ধরনের শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে সেটি জনগণকে জানাতে হবে।’
সুপারিশসমূহ
প্রথম: যেসব আইন এখন প্রণীত হয়েছে তাদের কার্যকারিতা এবং সমস্যার বিষয়ে গবেষণা প্রয়োজন। জাতীয় উদ্যোগে যেমন এই গবেষণা হতে পারে, তেমনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও গবেষণা পরিচালিত করতে পারে। কেননা পরিস্থিতি জানার জন্য পর্যাপ্ত তথ্য আমাদের হাতে নেই।
দ্বিতীয়: দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে। বিচার নিশ্চিত করতে পারলে ভুক্তভোগীদের আস্থা ফিরে আসবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ওপর যা তাদের জড়তা কাটাতে সাহায্য করবে। বিচার পদ্ধতি সম্পর্কে জনগণকে ধারণা দেওয়ার জন্য গণমাধ্যম এবং লোকমাধ্যমের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। সহজে অভিযোগ দাখিলের জন্য মোবাইল অ্যাপস তৈরি করতে হবে।
তৃতীয়: ভুয়া আইডি শনাক্তকরণ এবং তা বাতিল করতে পারলে সাইবার অপরাধ অনেকটাই কমতে পারে। টু-ফ্যাক্টর অথেনটিফিকেশন বাধ্যতামূলক করতে হবে। সাইবার অপরাধীদের নিরুৎসাহিত করার জন্য গাইডলাইন প্রণয়ন করতে হবে। যেখানে কি করা যাবে এবং কি করা যাবে না তার পরিষ্কার নির্দেশনা থাকবে।
চতুর্থ: ডিজিটাল লিটরেসির কোনো বিকল্প নেই। ফলে ডিজিটাল লিটারেসি ট্রেনিং এবং ডিজিটাল সচেতনতামূলক কার্যক্রম বাড়াতে হবে। একইসঙ্গে সামাজিক এবং কমিউনিটি সচেতনতা বাড়ানোর জন্য বড় পরিসরে সচেতনতা তৈরির প্রচারণা চালাতে হবে। এই সচেতনতা প্রচারণার মধ্যে থাকবে ডিজিটাল মিডিয়ার ব্যবহার, কিশোর-তরুণদের মিডিয়া ব্যবহারে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিধান সম্পর্কে ধারণা ইত্যাদি। এ বিষয়ে শিক্ষা কার্যক্রমের সিলেবাসেও অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
পঞ্চম: অপরাধ সংগঠিত হয় প্রথমে সাংস্কৃতিক মননে। কিশোর ছেলেরা আগে এলাকার মেয়েদের দিকে শিস ছুড়ে দিতে দিতে পুরুষ হয়ে উঠত। সমাজে এই ব্যবহারের প্রশ্রয় ছিল। এখন সেই শিস দেওয়া মন সাইবার পরিসরে নিজেদের নিয়োজিত করছে। এই মনকে কেবল আইনি কাঠামো বা প্রযুক্তি শনাক্তকরণের মধ্য দিয়ে পরিবর্তন করা যাবে না। এর জন্য মনোজগতের পরিবর্তন প্রয়োজন। রাজনৈতিক পরিসরে কিশোর- তরুণ অপরাধী গ্যাং প্রতিপালনের সংস্কৃতি পরিবর্তন করতে হবে। তাই ক্যাম্পেইন পরিকল্পনায় রাজনৈতিক দলগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সামনে নির্বাচন। প্রত্যক রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে এ বিষয়ে পরিকল্পনা কী, সেই মর্মে লিখিত প্রতিশ্রুতি প্রয়োজন।
ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৭৩% নারী সাইবার অপরাধের শিকারষষ্ঠ: সামাজিক মাধ্যমে নিয়োজিত অপরাধী মনকে শিক্ষিত করার জন্য, নারী এবং কন্যাদেরও সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য এবং নারীপুরুষ নির্বিশেষে মানবিক মন গড়ে তোলার জন্য গণমাধ্যমে ছোট ছোট নাটিকা, তথ্যচিত্র প্রদর্শন করার ব্যবস্থা কার্যকর হতে পারে। অর্থাৎ একটি সর্বমাত্রিক শিক্ষা-সচেতনতা কার্যক্রমের আওতায় আনতে হবে দেশের মানুষকে। সেইসব বার্তার উদ্দীষ্ট গ্রাহক যে কেবল তরুণ নারী-পুরুষ হবেন, এমন নয়। বাবা মা, অভিভাবক, স্থানীয় কমিউনিটি নেতা সবাইকেই শিক্ষিত করার লক্ষ্য থাকতে হবে।
সপ্তম: পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নারীর প্রতি সাইবার অপরাধ কমানোর জন্য যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তাদের অভিজ্ঞতা জেনে, দেশের সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করার জন্যও গবেষণা করতে হবে।
মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেমের সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের সম্মানিত চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) শ্যাম সুন্দর শিকদার, বাংলাদেশ ইয়ুথ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরামের সভাপতি সৈয়দা কামরুন জাহান রিপা, বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিষ্ট ফোরামের সভাপতি নাজনীন নাহার, সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের সভাপতি কাজী মুস্তাফিজ এবং বাংলাদেশ বক্সিং ফেডারেশন এর বক্সার তামান্না হকসহ অনেকে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post