ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের বাঘাশুর পশ্চিমপাড়া এলাকার সিংহ নদী থেকে অজ্ঞাত এক যুবকের মরদেহের কঙ্কাল উদ্ধারের পর তার মৃত্যু রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। ওই ঘটনায় দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
সংস্থাটি বলছে, পরকীয়ার বিষয়টি স্থানীয়দের কাছে ফাঁস করে দেওয়ায় পরকীয়া প্রেমিকার পরিকল্পনায় এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। পরবর্তী সময়ে সিংহ নদীতে লাশটি মাটি চাপা দেন তারা। গ্রেপ্তাররা হলেন, আঁখি আক্তার (২৪) ও আলাল মোল্লা (৩৫)। এ ঘটনায় আঁখির স্বামী ওমর ফারুক আগেই থানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। হতাকাণ্ডের শিকার ওই যুবকের নাম রুমান শিকদার (৩৯)। এ হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন গ্রেপ্তার দুই আসামি আঁখি ও আলাল। নিহত রুমান শিকদার একই এলাকার আবু সিকদারের ছেলে।
বুধবার (২৯ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিয়াইয়ের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ঢাকা জেলা ইউনিটের ইনচার্জ পুলিশ সুপার মো. কুদরত-ই-খুদা।
ঘটনার বিষয়ে পুলিশ সুপার কুদরত বলেন, আঁখি ও রোমান দুজনে প্রতিবেশী ছিল। আঁখির স্বামী ফারুক প্রবাসী। এই সুযোগে প্রতিবেশী রুমানের সঙ্গে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়েন আঁখি। বিদেশে থাকাবস্থায় স্ত্রীর পরকীয়া প্রেমের বিষয়টি জানতে পেরে দেশে চলে আসেন ফারুক। দেশে এসে আঁখিকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। পরে দুই পক্ষের স্বজনদের মধ্যস্থতায় মীমাংসা করে আঁখি ও ফারুক সংসার শুরু করেন। কিছুদিন যেতে না যেতেই আঁখি আবারও রুমানের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন।
এরপর চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে রুমানের সঙ্গে পালিয়ে অন্যত্র কিছুদিন বসবাস শুরু করেন আঁখি। পরে অনেক খোঁজা-খুঁজির পর আঁখি ও তার প্রেমিক রুমানের সন্ধান পান ফারুক। স্বজন ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে আঁখিয়ে ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলেও লাভ হয়নি। সেসময় আঁখিকে বিয়ে করতে রুমানকে চাপ দেয় স্থানীয়রা। তবে আঁখিকে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানান রুমান।
পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার আরও বলেন, রুমান বিয়ে করতে না চাওয়ায় আঁখি তার স্বামী ফারুকের কাছে ক্ষমা চেয়ে সংসারে ফিরে যান। আর পরকীয়ার বিষয়টি রুমানকে গোপন রাখতে অনুরোধ করেন। কিন্তু রুমান বিভিন্নজনের কাছে আঁখির সঙ্গে পরকীয়ার বিষয়টি প্রচার করতে থাকেন। এতে আঁখি ও ফারুক ক্ষিপ্ত হয়ে রুমানকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত ২২ মার্চ গভীর রাতে মোবাইলে আঁখি প্রেমিক রুমানকে ঘরে ডাকে। এরপর কথা বলার একপর্যায়ে পেছন থেকে লোহার রড দিয়ে মাথায় আঘাত করে রুমানকে হত্যা করেন আঁখি ও তার স্বামী ফারুক। পরে নিহতের লাশ বস্তাবন্দি করে গুমের উদ্দেশ্যে প্রতিবেশী আলাল মোল্লার সহযোগিতায় বাড়ির পাশের সিংহ নদীতে মাটি চাপা দিয়ে দেন।
যেভাবে লাশ উদ্ধার ও পরিচয় মিলল রুমানের
রুমানকে হত্যার পর এক মাস পর গত ২১ মে সিংহ নদীতে নদী খননের কাজ শুরু হয়। তখন নদীতে কাদা মাটি কাটার সময়ে ভেকুতে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির কঙ্কাল উঠে আসে।
এরপর জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল করে জানায় স্থানীয়রা। ঘটনাস্থলে এসে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানা পুলিশের একটি দল কঙ্কালের সঙ্গে একটি অস্পষ্ট নেভি-ব্লু রঙের শার্টের টুকরো পায়। কঙ্কাল উদ্ধারের খবর পেয়ে সেখানে যান রুমানের স্ত্রী-সন্তান ও স্বজনরা। এরপর প্রাথমিকভাবে কঙ্কালটির সঙ্গে থাকা নেভি-ব্লু রঙের শার্টের টুকরো দেখে এটি রুমানের বলে দাবি করেন।
পরবর্তী সময়ে এসআই মাইদুল ইসলাম কঙ্কালের সুরতহাল প্রস্তুত করেন এবং ডিএনএ প্রোফাইলের জন্য কঙ্কালটি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালে মর্গে পাঠান। পাশাপাশি বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি পাঁচ মাস থানা পুলিশের তদন্ত শেষে দায়িত্ব পায় পিবিআই।
গত আগস্টের ২২ তারিখ মামলাটি তদন্ত শুরু করে পিবিআইয়ের ঢাকা জেলার একটি দল। এর আগে, কঙ্কাল উদ্ধারের পর নিহত রুমানের স্ত্রী সেলিনা আক্তার ডিএনএ পরীক্ষার আবেদন করেন। পরে নিহতের মেয়ে নুছরাত (১২) ও ছেলে সাইফের (৬) ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে সিআইডি। এরপর ডিএনএ পরীক্ষায় রুমানের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post