প্রবাসে কর্মরত বাংলাদেশিরা দেশের শ্রমশক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তারা বৈদেশিক দেশে কাজ করে দেশে অর্থ পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তিনি সফল হইলে দেশ সফল হয়, আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার অভাব ঘোচে।
কিন্তু যখন তিনি প্রবাসে কর্মের সংস্থান করিতে ব্যর্থ হন, তখন দেশই ব্যর্থ হয়। এবং লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করিয়া বিদেশে যাইবার পরে যাহাদের ফিরিয়া আসিতে হয় তাহাদের দুঃখের কোনো সীমা থাকে না। গত শনিবারের সমকালের এক সংবাদ দেখাইতেছে যে, বিভিন্ন কারণে বিদেশ হইতে ফিরিয়া আসিতে বাধ্য হওয়া শ্রমিকদের দুর্দশা কতটা ব্যাপক।
বাংলাদেশ হইতে প্রবাসে কাজের সন্ধানে যাইবার খরচ উপমহাদেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার কর্মীরা মাত্র ১৫-২০ হাজার টাকা খরচ করিয়াই বিদেশে যাইতে পারেন, কিন্তু বাংলাদেশিদের খরচ করিতে হয় কয়েক লক্ষ টাকা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই অর্থ তাহারা সুদের প্রতিশ্রুতি দিয়া কর্জ করিয়া লন। অভিবাসন খাতের বেসরকারি সংস্থা রামরুর একটি গবেষণার বরাত দিয়া সমকাল জানাইতেছে যে, এই ধরনের কর্মীদের একটা অংশকে বিভিন্ন কারণে আয়-উপার্জন ছাড়াই দেশে ফেরত আসিতে হয়।
করোনা মহামারির পর হইতে প্রতি মাসে প্রায় এক লক্ষ কর্মী বিদেশে গিয়া থাকেন। রামরু দেখাইতেছে এদের মধ্যে যাহারা ফেরত আসিতে বাধ্য হন, তাহাদের ১৫ শতাংশ সেইখানে গিয়া কোনো কাজ না পাইয়া ফিরিয়া আসেন। ২০ শতাংশকে এক কাজের কথা বলিয়া অন্য কাজ দেওয়া হয়। কম বেতনের কারণেও ফিরিয়া আসেন ১৪ শতাংশ কর্মী। অনেকে আবার আটক হইয়া সেই দেশে থাকিবার অধিকার হারান। দালাল বা চক্রের ফাঁদে পড়িয়া জাল ভিসায় গিয়া ফিরিতে বাধ্য হন ১০ শতাংশ। এবং অসুস্থতাজনিত কারণে ফিরিয়া আসেন ১২ দশমিক ৮ শতাংশ।
রামরুরই আরেকটি গবেষণা দেখাইয়াছিল যে, দীর্ঘদিন পর ফেরত আসা প্রবাসীরা দেশে ফিরিয়া এলাকায় বিভিন্নভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেন। কেহ দোকান দেন, কেহ ছোট কারখানা স্থাপন করেন, কেহবা ব্যবসায় নামেন। এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল গড়িবার উদাহরণও মেলে। এইভাবে তাহারা এলাকার অর্থনীতিকে জোরদার করিয়া থাকেন। কিন্তু সেই একই মানুষরা যদি ব্যর্থ হইয়া ফেরেন, তখন তাহাদের দেখিবার কেহই থাকে না।
দেশ যদি প্রবাসীদের পাঠানো ডলারের কারণে বিপুলভাবে উপকৃত হইয়া থাকে, তবে তাহাদের মধ্যে যাহারা দুর্ভাগ্যে নিপতিত হন, তাহাদের বেলায় কেন উদাসীন থাকিবে? তাহাদের ব্যাপারে সরকার এবং বিশেষ করিয়া প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অবশ্যই দায়িত্ব রহিয়াছে। ইহা ছাড়া যেসব নারী কর্মী প্রবাসে গিয়া যৌন ও অন্য ধরনের নির্যাতনের শিকার হন, তাহাদের উদ্ধার করাও সরকারের দায়িত্ব, দূতাবাসের দায়িত্ব।
শ্রমিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে, শ্রমিক আমদানিকারী দেশের সাথে চুক্তি করা জরুরি। এই চুক্তিতে বলা হবে যে, শ্রমিকের নিরাপত্তার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের। ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়া এই ধরনের চুক্তির ক্ষেত্রে পথপ্রদর্শক।
আমরা আশা করিব, বাধ্য হইয়া ফেরত আসা শ্রমিকদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সরকার পদক্ষেপ লইবে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post