বিমান চালানোর লাইসেন্সের জন্য জাল শিক্ষা সনদ ব্যবহার করে ১০ বছর ধরে চাকরি করেছিলেন সাদিয়া আহমেদ। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফার্স্ট অফিসার সাদিয়া আহমেদ মানবিক শাখা থেকে এইচএসসি পাশ করেছিলেন। কিন্তু বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কাছে বিজ্ঞান শাখা থেকে এইচএসসি পাশের সনদ জমা দিয়েছিলেন তিনি।
গত বছর জুন মাসে বিষয়টি ধরা পড়ে এবং বিমানের ৭৭৭ উড়োজাহাজের ফার্স্ট অফিসার সাদিয়াকে চাকরি থেকে সরাসরি বরখাস্ত করা হয়। তবে বেবিচক থেকে পাইলটের সনদ পেতে যারা সহযোগিতা করেছেন তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে। এ নিয়ে তদন্তও এগোচ্ছে না অদৃশ্য শক্তির প্রভাবে।
শুধু সাদিয়ার ঘটনাই নয়। মেহেদী নামে বিমানের আরও একজন পাইলটকে বরখাস্ত করা হয়েছে জাল সনদ ব্যবহারের কারণে। এর আগে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে একজনকে পাইলট সনদ দেওয়ার সময় বেবিচকের এক কর্মকর্তাকে রাজধানীর উত্তরা এলাকায় রেস্তোরাঁ থেকে আটক করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তারা। একের পর এক এমন ঘটনা ঘটায় বেবিচকের দায়িত্বশীলতা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। এ বিষয়ে মুখে যেন কুলুপ এঁটেছেন বেবিচকের পাইলট লাইসেন্স শাখার কর্মকর্তারা। তারা বলেই যাচ্ছেন তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।
সর্বশেষ গত বছরের ৬ জানুয়ারি বিমানের ৭৭৭ উড়োজাহাজের ফার্স্ট অফিসার হিসেবে সাদিয়াকে পুনঃনিয়োগ দেয় বিমান কর্তৃপক্ষ। এই নিয়োগের ছয় মাস পর বেরিয়ে পড়ে থলের বিড়াল। এ বিষয় জানাজানি হলে তোলপাড় হয়। চাকরিচ্যুত হন তিনি। ২০২৭ সালের ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বিমানে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন সাদিয়া। এরপর চুক্তির মেয়াদ নবায়ন হওয়ারও সুযোগ ছিল।
বিমান কর্মকর্তারা জানান, শিক্ষা সনদ নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগে বিমানের চাকরি থেকে সরাসরি বরখাস্ত করা হয়েছে সাদিয়াকে। বিষয়টি তদন্তে বেবিচকের পক্ষ থেকে কমিটি গঠন করা হয়। তবে এক বছরের বেশি সময়েও বিষয়টির কূলকিনারা করতে পারেনি কমিটি। অনেকে বলছেন, আগে শাস্তি হওয়া দরকার যারা সাদিয়াকে পাইলটের সনদ দিয়েছেন তাদের। সঠিক তদন্ত হলে ধরা পড়বে বেবিচকের চক্রটি।
বেবিচকের নির্দেশিকায় বলা আছে, ‘বাণিজ্যিক পাইলটদের অবশ্যই এইচএসসি (বিজ্ঞান) বা বাধ্যতামূলক পদার্থবিদ্যা ও গণিতের পাশাপাশি সমমানের শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে।’ মানবিক বিভাগের ছাত্রী হওয়া সত্ত্বেও পাইলট সনদ পেতে নিজেকে বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী উল্লেখ করে বেবিচকে জাল শিক্ষা সনদ জমা দেন সাদিয়া আহমেদ।
এ বিষয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালক (প্রশাসন ও মানবসম্পদ কর্মকর্তা) ছিদ্দিকুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, বেবিচকের দেওয়া পাইলট সনদ বিবেচনায় সাদিয়াকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে জাল শিক্ষা সনদ ব্যবহারের অভিযোগ ওঠায় চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সাদিয়া ছাড়াও মেহেদী নামে একজন পাইলটকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধেও জাল সনদ ব্যবহারের অভিযোগ ছিল।
বিমানের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা জানান, বেবিচকের দেওয়া সনদ নিয়েই বিমান চালান পাইলটরা। পাইলট সনদ দেওয়ার ক্ষেত্রে ফ্লাইং একাডেমির প্রশিক্ষণ সনদ, স্কুল-কলেজের শিক্ষা সনদসহ সবকিছুই যাচাই করার কথা। সনদ দেওয়ার দায়িত্ব হচ্ছে বেবিচকের লাইসেন্স শাখার কর্মকর্তাদের। একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে শিক্ষা সনদ যাচাই ছাড়াই সাদিয়াকে দেওয়া হয়েছে পাইলট সনদ (লাইসেন্স)। এতে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে বেবিচকের সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করছেন বেবিচক কর্মকর্তারা। তাদের দাবি, গত ১৫ অক্টোবর বেবিচকের তদন্ত কমিটির কাছে হাজির হওয়ার কথা ছিল সাদিয়ার। অসুস্থতার কারণে হাজির হতে পারেননি। এতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে দেরি হচ্ছে। কিন্তু একটি সূত্র জানায়, বিমান থেকে চাকরিচ্যুত হওয়ার পর বিদেশে পালিয়ে গেছেন সাদিয়া।
বেবিচকের সদস্য (ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেজ্যুলেশন) এয়ার কমডোর শাহ কাওসার আহমেদ বলেন, সাদিয়ার বিষয়টি তদন্ত চলছে। তদন্ত কমিটির প্রধানের কাছে জানতে চাইলে এ ব্যাপারে গণমাধ্যমকে জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি। এদিকে পাইলট সাদিয়াকে নিয়ে বেবিচকের তদন্তের বিষয়ে অবগত নন সংস্থাটির জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহেল কামরুজ্জামান। জানতে চাইলে তিনি বলেন, তদন্তের অগ্রগতি কোন পর্যায়ে এবং কারা তদন্ত করছেন এ বিষয়ে আমার জানা নেই।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ফ্লাইং ক্লাবের প্রশিক্ষণে উত্তীর্ণ হওয়ার সনদ অনুযায়ী পাইলট সাদিয়া আহমেদকে সনদ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তার বিরুদ্ধে স্কুল ও কলেজের শিক্ষা সনদ জাল করার অভিযোগ ওঠে। এ কারণে তার সনদ বাতিল করা হয়েছে। এ বিষয়ে শিগগির প্রতিবেদন দাখিল করবে তদন্ত কমিটি।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post