ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের বৃহত্তম চিকিৎসাকেন্দ্র আল-শিফা হাসপাতালে এখন আর কোনও পানি ও অক্সিজেন নেই। এমনকি পানির অভাবে সেখানকার রোগীরা তৃষ্ণায় চিৎকার করছেন। অবশ্য ইসরায়েলি সৈন্যরা এখনও হাসপাতালের ভেতরে অবস্থান করছে। শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আল-শিফা হাসপাতালে এখন আর কোনও পানি ও অক্সিজেন নেই এবং রোগীরা তৃষ্ণায় চিৎকার করছেন বলে হাসপাতালের পরিচালক জানিয়েছেন। ইসরায়েলি ট্যাংক হাসপাতালটি ঘিরে আছে এবং ওপরে ড্রোন চক্কর দিচ্ছে।
এছাড়া বৃহস্পতিবার হাসপাতালের ভেতরে দ্বিতীয় দিনের মতো তল্লাশি চালিয়েছে ইসরায়েলি সৈন্যরা। আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালক মুহাম্মদ আবু সালমিয়া জানিয়েছেন, আল শিফার অবস্থা ‘ভয়াবহ’। এখানে এখনও ৬৫০ জন রোগী, ৫০০ চিকিৎসা কর্মকর্তা এবং পাঁচ হাজার বাস্তুচ্যুত মানুষ অবস্থান করছেন।
প্রসঙ্গত, গাজার বৃহত্তম চিকিৎসাকেন্দ্র আল-শিফা হাসপাতালটি কয়েকদিন ধরে ঘেরাও করে রাখার পর গত বুধবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এই মেডিকেল কমপ্লেক্সে অভিযান চালায়। হাসপাতালটিতে হামাসের ঘাঁটি রয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েল। এছাড়া ইসরায়েলের এই দাবিকে সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্রও জানিয়েছে, তাদের কাছেও আল শিফা হাসপাতালের নিচে সুড়ঙ্গে হামাসের একটি ‘কমান্ড-অ্যান্ড-কন্ট্রোল সেন্টার’ থাকার তথ্য রয়েছে।
তবে এ দাবি অস্বীকার করেছে হামাস ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে আল শিফা হাসপাতালে ইসরায়েলি অভিযানের নিন্দা জানিয়ে একে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ বলে অভিহিত করেছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ।
বিবিসি বলছে, গত বুধবার থেকে সেখানে অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী এবং বৃহস্পতিবার তারা সেখানে হামাসের একটি সুড়ঙ্গের সন্ধান পাওয়ার দাবি করে। একইসাথে অস্ত্র বোঝাই একটি গাড়ি পাওয়ার দাবিও করে তারা। হাসপাতালটির পরিচালক জানান, ইসরায়েলি সেনারা হাসপাতালটির প্রধান পানির সংযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘অভিযান এখনও চলছে। কেউ এক ভবন থেকে আরেক ভবনে যেতে পারছেন না। আমরা আমাদের সহকর্মীদের সাথেও কোনও যোগাযোগ করতে পারছি না।’
হাসপাতালের ভেতরে আটকেপড়া এক সাংবাদিক বিবিসিকে ফোনে জানিয়েছেন, ‘ইসরায়েলি সৈন্যদের সব জায়গায় দেখা যাচ্ছে এবং তারা সব দিক থেকে গুলি করছে’। তবে বিবিসি তার এই দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি। এদিকে ইসরায়েলি সামরিক অবরোধের কারণে আল-শিফা হাসপাতালে অবস্থানরত ৭ হাজারেরও বেশি বাস্তুচ্যুত মানুষ, রোগী এবং চিকিৎসা কর্মী ‘পানি ও খাবারের অভাবে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে’ বলে বৃহস্পতিবার জানিয়েছে গাজা সরকারের মিডিয়া অফিস।
টেলিগ্রামে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আল-শিফা হাসপাতালে শিশুদের জন্য কোনও খাবার, পানি বা দুধ নেই। এছাড়া হাসপাতালে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুদের মৃত্যু হতে পারে, কারণ এসব শিশু এখন আর ইনকিউবেটর সুবিধা পাচ্ছে না।’ গাজার মিডিয়া অফিস বলেছে, ‘আল-শিফা হাসপাতালে ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। সেখানে ৬৫০ জন রোগী এবং প্রায় ৭ হাজার বাস্তুচ্যুত ব্যক্তি রয়েছেন। চিকিৎসা দল, রোগী এবং বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিরা প্রয়োজনীয় জিনিসের অভাবে বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করছেন।’
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি বাহিনী হাসপাতাল কম্পাউন্ডের সমস্ত যানবাহন ধ্বংস করে দিয়েছে এবং চিকিৎসা কর্মী বা রোগীদের বের হতে দিতেও অস্বীকার করেছে।’
এর আগে গত বুধবার গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানায়, ‘ইসরায়েলি সৈন্যরা আল-শিফা মেডিকেল কমপ্লেক্সের ভেতরে অনেক রোগী, আহত ব্যক্তি এবং বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের পাশাপাশি বেশ কিছু চিকিৎসা ও নার্সিং কর্মীদের ওপরও আক্রমণ করেছে, তাদের পোশাক খুলতে বাধ্য করেছে এবং অপমান করেছে।’
এছাড়া গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও বলছে, হাসপাতালের দক্ষিণ দিকের প্রবেশপথের একটি অংশ বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post