ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমের বুকের ওপর রাজত্ব করছে ৭ লাখেরও বেশি ইসরাইলি দখলদার। এ হিসাবে ইসরাইলের মোট ৭০ লাখ জনসংখ্যার ১০ শতাংশই বসতি স্থাপনকারী। অধিকৃত পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে ১৫০টি বসতি ও ১২৮টি ঘাঁটিতে বর্তমানে বাস করছেন তারা।
বসতি স্থাপনকারীরা মূলত ইসরাইলের নাগরিক। আর ফিলিস্তিনের দুই অঞ্চলে তাদের আবাসস্থলের বেশিরভাগই সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ফিলিস্তিনিদের ব্যক্তিগত জমিতে নির্মাণ করা হয়েছে। পশ্চিম তীরের প্রায় ৪০ শতাংশ জমিই বর্তমানে বসতি স্থাপনকারীদের হাতে। তবে বসতিগুলো ইসরাইল সরকারের অনুমোদিত হলেও ঘাঁটিগুলো সরকারি কোনো অনুমোদন ছাড়াই নির্মাণ করা হয়েছে।
পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে অল্পসংখ্যক ইসরাইলি বাস করে এমন ঘাঁটি থেকে শুরু করে ৪০০ জন পর্যন্ত বাস করে এমন ঘাঁটিও রয়েছে। ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশই আল্ট্রাঅর্থোডক্স ইহুদি। অনেকেই ধর্মীয় কারণে অধিকৃত অঞ্চলগুলোতে চলে আসে। আবার অনেকে তুলনামূলকভাবে জীবনযাত্রার কম ব্যয় আর সরকার কর্তৃক প্রদত্ত আর্থিক প্রণোদনার কারণে অঞ্চলগুলোতে চলে আসে। সাম্প্রতিক সময়ে ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা বেড়েছে।
ইসরাইলে গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর পশ্চিম তীরে ১৯৮টিরও বেশি হামলা চালিয়েছে তারা। ১ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।
ফিলিস্তিনে সর্বপ্রথম বসতি স্থাপন
১৯৬৭ সালের জুন মাসে ছয় দিনের যুদ্ধে পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম ও গাজা উপত্যকা দখল করার পরপরই বসতি স্থাপন শুরু করে ইসরাইল। একই বছরের সেপ্টেম্বরে পশ্চিম তীরের হেব্রনে ইটজিয়ন ব্লক ছিল ইসরাইলিদের নির্মাণ করা প্রথম বসতি। বর্তমানে এই বসতিতে ৪০ হাজার মানুষ বাস করছেন।
প্রাচীনতম বসতির আরেকটি কেফার এটজিয়ন। প্রায় ১ হাজার ইসরাইলির বাসস্থান। আর পশ্চিম তীরে বৃহত্তম বসতি মোদি’ইন ইলিট। এতে প্রায় ৮২ হাজার ইহুদির বসবাস। যাদের বেশিরভাগই অতি-অর্থোডক্স ইহুদি।
বসতি স্থাপনকারীদের ইসরাইল সরকারের সমর্থন
বসতি স্থাপনকারীদের সরাসরি অর্থায়ন করে ইসরাইলের সরকার। পশ্চিম তীরের ৬০ শতাংশই সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করে ইসরাইল। এসব অঞ্চলে ফিলিস্তিনিদের নির্মাণ সীমাবদ্ধ, সে সম্পর্কে প্রতিবেদন ও নিরীক্ষণের জন্য বসতি স্থাপনকারীদের প্রতিবছর প্রায় ২০ মিলিয়ন শেকেল (৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার) দেওয়া হয়। ইসরাইল সরকারের দেওয়া অর্থ পরিদর্শক নিয়োগ থেকে শুরু করে ড্রোন, আকাশ প্রতিরক্ষা, ট্যাবলেট ও যানবাহনসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে ব্যবহৃত হয়।
চলতি বছরের ৪ এপ্রিল ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ রাষ্ট্রীয় বাজেটে বসতি স্থাপনকারীদের অর্থায়নের পরিমাণ দ্বিগুণ করে ৪০ মিলিয়ন শেকেল (১০ মিলিয়ন ইউএস ডলার) করার নির্দেশ দেয়।
আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে ফিলিস্তিনে ইসরাইলের বসতি স্থাপন কি বৈধ?
পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে ইসরাইলের সব বসতি ও ঘাঁটি আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে অবৈধ বলে বিবেচিত হবে। এটি স্পষ্ট আন্তর্জাতিক মানবিক আইন চতুর্থ জেনেভা কনভেনশন লঙ্ঘন। চতুর্থ জেনেভা কনভেনশনে দেশগুলোকে তাদের দখলকৃত এলাকায় নিজেদের জনসংখ্যা স্থানান্তরে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
জাতিসংঘের একাধিক প্রস্তাব ও ভোটে ইসরাইলের দখলদারিত্বকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। ২০১৬ সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ একটি রেজুলেশনে ইসরাইলের বসতি স্থাপনের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে।
আরও দেখুনঃ
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post