গত মাসের শেষে ভারতে রপ্তানিমূল্য বেঁধে দেওয়ার খবরে বাংলাদেশে হু হু করে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। এতে আগে থেকেই বেড়ে যাওয়া নিত্যপণ্যটি নিয়ে আরও অস্থিরতা চলছে। দুই সপ্তাহেও কোনো সুখবর মেলেনি। চড়া দামেই আটকে আছে।
বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা দরে। আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি ১১০ থেকে ১২০ টাকা।
মালিবাগ বাজারের বিক্রেতা মুক্তার হোসেন বলেন, ‘দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। বরং বাড়তি যাচ্ছে। পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১২২ থেকে ১২৬ টাকা ধরে কিনতে হচ্ছে।
এদিকে বুধবার (৮ নভেম্বর) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ‘নতুন পেঁয়াজ বাজারে না আসা পর্যন্ত পেঁয়াজের দাম কমবে না। আগামী মাসে ‘মুড়িকাটা’ পেঁয়াজ বাজারে এলে দাম কমতে শুরু করবে। আমদানি করা পেঁয়াজের স্টক শেষ হয়ে গেছে। দাম বেশি পড়ে যাওয়ায় ভারত থেকে এখনই পেঁয়াজ আমদানি করা সম্ভব হচ্ছে না।’
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমদানি করা আলু বাজারে মাত্র আসা শুরু করেছে। আরও আসতে থাকলে আলুর দাম কমে যাবে। একই সঙ্গে নতুন আলু বাজারে আসতে আরও মাসখানেক সময় লাগবে। তখন দামে প্রভাব পড়বে।’
ভারত এমন সময় পেঁয়াজের রপ্তানিমূল্য বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে, যখন বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজ বেশ চড়া দামে বিক্রি হচ্ছিল। পার্শ্ববর্তী দেশের এই সিদ্ধান্ত যেন পেঁয়াজের বাজারে ‘আগুনে ঘি ঢেলে দেওয়া’ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
রামপুরা ভাই ভাই স্টোরের কালাম হোসেন বলেন, ‘এ খবরের পর থেকে ভারতে আমদানি করা পেঁয়াজ পাইকারি বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। ওইসব পেঁয়াজের দাম দেশি পেঁয়াজের তুলনায় আরও বেশি বেড়েছে।’
কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজের পাইকারি ব্যবসায়ী লোকমান হোসেন জানান, দেশি পেঁয়াজের মৌসুম একদম শেষের দিকে। এখন আমদানি পেঁয়াজ-ই ভরসা।
২০১৯ সালেও ভারত রপ্তানিমূল্য ৮৫০ টাকা বেঁধে দিয়েছিল। তখন পেঁয়াজের বাজার সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করে। সেসময় বাজার সামাল দিতে না পেড়ে বাধ্য হয়ে দেশের বড় বড় শিল্পগ্রুপকে পেঁয়াজ আমদানি করতে অনুরোধ করে সরকার। ওই বছর এস আলম ও সিটি গ্রুপ কার্গো বিমান এমনকি যাত্রীবাহী বিমানেও পেঁয়াজ আমদানি করে। আমদানিকৃত এসব পেঁয়াজ ভর্তুকিমূল্যে টিসিবিকে দিয়ে সারাদেশে বিক্রি করে তারা।
এদিকে গেলো সেপ্টেম্বরে সরকার পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করে ৬৪-৬৫ টাকা। তবে সে দাম বাজারে কার্যকর হয়নি কখনো। গত সপ্তাহের আগে পর্যন্ত ৭০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে ছিল। তবে এখন পেঁয়াজ দ্বিগুণ দামে কিনতে হচ্ছে।
জানা গেছে, ভারতে প্রতি টন পেঁয়াজের দাম ৮০০ ডলার হলে কেজিপ্রতি এর রপ্তানিমূল্য পড়বে ৬৭ রুপি। আগে ভারতের রপ্তানিকারকরা অনির্ধারিত মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারলেও নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশটির ব্যবসায়ীদের সরকার নির্ধারিত দামেই পেঁয়াজ বিক্রি করতে হবে। এর আগে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল। তখন থেকেই বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে।
হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি ও পেঁয়াজ আমদানিকারক হারুন উর রশীদ বলেন, ‘ভারতের এ সিদ্ধান্তে পেঁয়াজের বাজারে আবারও আগুন লেগেছে। ন্যূনতম মূল্য ৮০০ ডলারে আমদানি করলে দেশে আসতে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৯০-১০০ টাকার মতো পড়বে। আগে ৪৫-৫৫ টাকার মধ্যে কেনা যেতো।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post