পৃথিবীর অন্যতম বড় বিমান সংস্থা এয়ারবাস। প্রতিষ্ঠানটি বাণিজ্যিক উড়োজাহাজের নকশা, নির্মাণ ও বিপণন করে। এটি ইউরোপভিত্তিক এবং ফ্রান্স, ব্রিটেন, জার্মানি ও স্পেনে তাদের বড় অফিস ও সংযোজন কারখানা রয়েছে। ১৯৭০ সালে এই কোম্পানি যাত্রা করে। ২০১৯ সালের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিমান প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান এটি। এটি বাণিজ্যিক ও সামরিক বিমান তৈরি করে। সম্প্রতি ফ্রান্সের তুলুজ শহরে এয়ারবাসের কারখানা ঘুরে এসে প্রতিষ্ঠানটির প্রযুক্তিগত সুবিধাগুলো তুলে ধরা হলো।
অটোপাইলট প্রযুক্তি ড্রাগনফ্লাই
স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিমান চালানোর প্রযুক্তির বিকাশে ড্রাগনফ্লাই নামে একটি প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে এয়ারবাস। এই অটোপাইলট প্রযুক্তির একটি অন্যতম উদ্ভাবন হলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে জরুরি অবতরণে সহায়তা। জরুরি অবতরণের ক্ষেত্রে এ প্রযুক্তি পাইলটদের সহায়তা করতে পারে। এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরিধির মধ্যে থাকা অন্য বিমানের অবস্থান, আবহাওয়া পরিস্থিতি ও ভূখণ্ড শনাক্ত করে অবতরণ করা যাবে।
এ ছাড়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি একটি কৃত্রিম কণ্ঠস্বর দিয়ে রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করে এই প্রযুক্তির মাধ্যমে কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগও করা যাবে। পাশাপাশি বিকল্প অবতরণের স্থান নির্ধারণ বা এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল থেকে বার্তা সংগ্রহের মতো কাজগুলোও অটোপাইলট প্রযুক্তি দিয়ে করা যাবে। নিরাপদ অবতরণ যাচাইয়ের অংশ হিসেবে এয়ারবাসের এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে দুটি পরীক্ষামূলক সফল জরুরি অবতরণও সম্পন্ন করা হয়েছে।
এ প্রযুক্তিতে প্রচলিত ক্যামেরা, ইনফ্রারেড ক্যামেরা এবং রাডার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এসব সেন্সর ব্যবহার করে পার্শ্ববর্তী আবহাওয়া সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাওয়া যাবে এবং রাডারটি স্বয়ংক্রিয় অবতরণে সহায়তা করবে। এই প্রযুক্তি পাইলটদের বিকল্প নয়; বরং বিমান চালনায় তাদের সহায়তা করবে, বলছে এয়ারবাস।
হাইড্রোজেন জ্বালানিনির্ভর বিমান
প্রথম কার্বন নিঃসরণহীন পরিবেশবান্ধব বাণিজ্যিক বিমান আনার পরিকল্পনা রয়েছে এয়ারবাসের। ২০৩৫ সালের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি হাইড্রোজেন জ্বালানিনির্ভর বিমান যুক্ত করতে পারে। এ জ্বালানি ব্যবহারের মাধ্যমে বিমান চলাচলের ফলে জলবায়ুর ওপর নেতিবাচক প্রভাব হ্রাস পাবে। নবায়নযোগ্য উৎস বা কম কার্বন যুক্ত উৎস থেকে পরিবেশবান্ধব হাইড্রোজেন জ্বালানি উৎপাদন করতে হয়।
ফ্লাই বাই ওয়্যার প্রযুক্তি
এভিয়েশন শিল্পে এয়ারবাসের সবচেয়ে যুগান্তকারী অবদান ‘ফ্লাই-বাই-ওয়্যার’ প্রযুক্তি। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে ইলেকট্রনিক ফ্লাইট কন্ট্রোল সিস্টেমের কম্পিউটার, সেন্সর এবং অ্যাকুয়েটরগুলো একটি অত্যাধুনিক নেটওয়ার্কে মাধ্যমে কাজ করবে। এতে যাত্রাপথে নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা বাড়াতে উড়োজাহাজের ওপর আরও সুনির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে পারবে পাইলটরা।
ডেটা বিশ্লেষণ করে রক্ষণাবেক্ষণ
এয়ারবাস উড়োজাহাজের রক্ষণাবেক্ষণ মান নিয়ন্ত্রণ করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ডেটা বিশ্লেষণ পদ্ধতি ব্যবহার করে। এর মাধ্যমে উড়োজাহাজ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রচুর পরিমাণে ডেটা সংগ্রহ ও তা বিশ্লেষণ করে এয়ারবাস রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজনীয়তাগুলো আগেই হিসাব করে সে অনুযায়ী সমাধান করতে পারে। এটি উড়োজাহাজের নিরাপত্তা বাড়ানোর পাশাপাশি ডাউনটাইম কমানো এবং এয়ারলাইন্স পরিচালনার খরচ কমায়।
ইন্টিগ্রেটেড গ্লোবাল প্রোডাকশন
এয়ারবাস পৃথিবীর অনেক দেশ থেকে যন্ত্রাংশ নিয়ে তাদের উড়োজাহাজ তৈরি করে। এ জন্য প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বজুড়ে উৎপাদন সুবিধার একটি নেটওয়ার্ক পরিচালনা করে। এ ক্ষেত্রে উড়োজাহাজের বিভিন্ন অংশে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ ব্যবস্থাপনায় একটি বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট উপাদানগুলো একত্রীকরণ, সমন্বয় সাধন, গুণমান পরীক্ষা ইত্যাদি কাজগুলোও সম্পন্ন করা হয়।
অ্যাসেম্বলি লাইনে প্রযুক্তির ব্যবহার
বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এয়ারবাসের উড়োজাহাজ অ্যাসেম্বলিং হয়। এর মধ্যে রয়েছে ফ্রান্সের তুলুজ, জার্মানির হামবুর্গ, চীনের তিয়ানজিন ও আমেরিকা। এসব স্থানে থাকা অ্যাসেম্বলিং লাইনে উড়োজাহাজের বিভিন্ন যন্ত্রাংশকে একত্রিত করে উড়োজাহাজের চূড়ান্ত রূপটি দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রেও রয়েছে প্রযুক্তির ব্যবহার। বিশেষত অ্যাসেম্বলিংয়ের সময় নানা সূক্ষ্ম কাজের ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার সর্বোচ্চ। এতে উড়োজাহাজ তৈরিতে নিরাপত্তা, গুণমান এবং কর্মক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত হয়।
অটোমেশন প্রযুক্তি
এয়ারবাস তার উড়োজাহাজ তৈরিতে ব্যাপকভাবে অটোমেশন এবং রোবোটিক্সের ব্যবহার করে। বিশেষত সূক্ষ্ম কাজ ও বিপজ্জনক কাজ সম্পন্ন এবং উৎপাদনের গতি বৃদ্ধিতে রোবোটিক্স প্রযুক্তি কাজে লাগানো হয়। এতে সর্বোচ্চ গুণমান বজায় রেখে উড়োজাহাজ তৈরি সম্ভব হয়।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post