বিপুল বিনিয়োগের পরেও সরকারি বিমান সংস্থা বাংলাদেশ বিমানের সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতা এবং বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন চার্জ এবং উচ্চ জ্বালানি মূল্যের কারণে গত ৩০ বছরে আটটি বেসরকারি যাত্রীবাহী এবং ডজনেরও বেশি কার্গো এয়ারলাইন্স দেউলিয়া ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে।
সংসদীয় কমিটিকে এ তথ্য জানিয়েছে এভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এওএবি)। সমস্যাগুলো সমাধান না হলে বর্তমানে চালুকৃত বেসরকারি সব এয়ারলাইন্স অস্তিত্ব সংকটে পড়বে বলেও জানায় এওএবি।
বুধবার (১ নভেম্বর) জাতীয় সংসদে অনুষ্ঠিত বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এওএবি’র মহাসচিব ও নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান এ তথ্য জানান বলে কমিটি সূত্রে জানা গেছে।
তিনি আরও বলেন, সরকারের বিভিন্ন নিরবচ্ছিন্ন সুযোগ-সুবিধাসহ বিমানের ভর্তুকিযুক্ত অপারেটিং নীতির কারণে বেসরকারি খাতের এয়ারলাইনগুলো মোটেও টিকে থাকতে পারে না। এই অসম প্রতিযোগিতার একটি সমাধান জরুরিভাবে প্রয়োজন।
মফিজুর রহমান আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ বিমান প্রকৃত ভাড়ার চেয়ে কম দামে বিমান ভাড়া নির্ধারণ করে আসছে। ফলে বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলোও কম ভাড়ায় ফ্লাইট পরিচালনা করতে বাধ্য হচ্ছে। তাই বিপুল পরিমাণ সরকারি ভর্তুকি দিয়ে বিমান টিকে থাকলেও বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলো কোনোভাবেই টিকবে না। এ ক্ষেত্রে প্রকৃত বিমান ভাড়া নির্ধারণ করা অপরিহার্য।
জেট ফুয়েলের উচ্চমূল্য সম্পর্কে তিনি বলেন, এয়ারলাইন্সগুলোর পরিচালনা ব্যয়ের ৪০-৪৬ শতাংশ জ্বালানি খরচ হয়। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ৩০-৪০ শতাংশ বেশি দামে জেট ফুয়েল কিনে কম দামে যাত্রী পরিবহন করতে বাধ্য করা হলে বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলো কোনোভাবেই টিকবে না। জেট ফুয়েলের দাম বৈশ্বিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।
এওএবি’র মহাসচিব ও নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর বলেন, পরিস্থিতির উন্নতি না হলে এটা নিশ্চিত যে, বিদ্যমান বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলো ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাবে।
উচ্চ কর হার এবং কাস্টমস জটিলতা
এওএবি’র পক্ষ থেকে কমিটিকে জানানো হয়, উড়োজাহাজের যন্ত্রাংশ আমদানিতে বিভিন্ন স্তরে অতি উচ্চ কর হার বিদ্যমান।সেইসঙ্গে যন্ত্রাংশ আমদানিতে কাস্টমস হাউজে নানামুখী ভোগান্তির স্বীকার হতে হয়। যন্ত্রাংশ ছাড় করতে দীর্ঘসূত্রতার ফলে এয়ারলাইন্স মারাত্বক অর্থনৈতিক ক্ষতির শিকার হয়।এই পরিস্থিতির উত্তরণ অপরিহার্য।
বেবিচকের নিয়মকানুন এবং উচ্চহারের চার্জ
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) বিরাজিত নিয়ম কানুন এয়ারলাইন্স শিল্প বিকাশের অন্তরায়। অপরদিকে বিভিন্ন সার্ভিসের জন্য অতি উচ্চ চার্জ এয়ারলাইন্সের জন্য সহনীয় নয়। তদুপরি বকেয়ার ওপর আরোপিত ৭২ শতাংশ সারচার্জ পৃথিবীর কোথাও দেখা যায় না। যৌক্তিকভাবে এই বিষয়ের সমাধান না হলে এয়ারলাইন্সগুলো এই বিপুল বকেয়ার ভারে ডুবে যেতে বাধ্য। আমরা বিভিন্ন সময়ে আমাদের সার্বিক দুরাবস্থার চিত্র, কারণ এবং উত্তরণের উপায় নিয়ে বেবিচক, মন্ত্রণালয়, জাতীয় প্রতিযোগিতা কমিশন এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা বরাবর তুলে ধরেছি। দুঃখজনকভাবে অদ্যাবধি আমাদের কোনও সমস্যার সুরাহা হয়নি। সংবাদপত্রের মাধ্যমে আপামর জনসাধারণ শুধুমাত্র বেসরকারি এয়ারলাইন্সের বকেয়া সম্পর্কে অবহিত।
সংসদ সচিবালয় থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈঠকে প্রাইভেট বিমান সংস্থার কাছ থেকে বেবিচকের পাওনা টাকা আদায়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং প্রাইভেট বিমান সংস্থাকে শক্তিশালী করার সুপারিশ করে কমিটি।
আরও বলা হয়, বাংলাদেশ পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনার দেশ। দেশি পর্যটকদের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে এবং পর্যটনের বিশেষ এলাকাকে এক্সক্লুসিভ জোন করতে বৈঠকে সুপারিশ করা হয়। পর্যটন শিল্পের বিকাশ ও উন্নয়নে আধুনিক, যুগোপযোগী ও সমন্বিত পরিকল্পনাভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণ করার পরামর্শ দেয় সংসদীয় কমিটি।
বৈঠকে সভাপতির নেতৃত্বে মোশাররফ হোসেন, তানভীর ইমাম, আনোয়ার হোসেন খান ও সৈয়দা রুবিনা আক্তার বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post