দেশের বিভিন্ন স্থানে ইঁদুরের উপদ্রবে কৃষকের ফসল ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ইঁদুর নিয়ন্ত্রণের জন্য নতুন উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইং। এই উদ্যোগের আওতায় দেশজুড়ে এক মাসব্যাপী অভিযান পরিচালনা করা হবে।
অভিযানের মাধ্যমে ইঁদুর নিধনের জন্য বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে ইঁদুর মারার ওষুধ, ফাঁদ, ওষুধ মিশ্রিত খাবার ইত্যাদি। অভিযানের মাধ্যমে ইঁদুর নিধনে সর্বোচ্চ অবদান রাখা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করা হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, গত বছর এই পদ্ধতিতে প্রায় ১ কোটি ৬৫ লাখ ইঁদুর নিধন করা হয়েছিল। এতে ১ লাখ ২৩ হাজার মেট্রিক টন আমন ফসল রক্ষা করা সম্ভব হয়েছিল।
দেশজুড়ে ৯ অক্টোবর থেকে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত এক মাসব্যাপী চলবে ইঁদুর মারার এই অভিযান। সোমবার (৯ অক্টোবর) আনুষ্ঠানিকভাবে এই অভিযানের উদ্বোধন করা হয়েছে। জানানো হয়েছে, অভিযান চলাকালে ইঁদুর নিধনকারীরা তাদের সংগৃহিত ইঁদুরের লেজগুলো জমা দিবেন উপজেলা কৃষি অফিসে। অভিযান শেষে সর্বোচ্চ লেজ জমাদাতা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে বিজয়ী নির্বাচিত করা হবে। ৫টি ক্যাটাগরিতে মৃত ইঁদুরের সর্বোচ্চ লেজ জমা দাতা ১৫ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় পর্যায়ে বিজয়ী নির্বাচিত করা হবে। বিজয়ীরা সর্বনিম্ন পুরস্কার হিসেবে সর্বনিম্ন ২৫০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রাইসবন্ড পাবেন। সাথে দেওয়া হবে ক্রোস্ট ও সনদ। এছাড়া উপজেলা ও জেলা পর্যায় মিলিয়ে সারাদেশে মোট পুরস্কৃত করা হবে ১৪১ জনকে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইং-এর পরিচালক মো. ফরিদুল হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, ইঁদুরের কারণে কৃষকের প্রচুর ক্ষতি হচ্ছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাধ ভাঙার জন্যও এই ইঁদুর দায়ী। তাই ইঁদুর নিয়ন্ত্রণের সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছে। বিগত বছরগুলোতে এই উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা সফলতাও পেয়েছি।
তিনি বলেন, উপজেলা পর্যায়ে কমিটি করা রয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমরা সাধারণত কৃষক ও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের পুরস্কার দিয়ে থাকি। এছাড়া প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন হিসেবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি যে কোনো সংস্থা বা সমিতি সর্বোচ্চ ইঁদুর নিধনে ভূমিকা রেখে এই পুরস্কার অর্জন করতে পারে। সব ক্যাটাগরিতে জেলা পর্যায়ে সেরা ৩ জনকে পুরস্কার দেওয়া হবে। সারাদেশ মিলিয়ে সর্বোচ্চ ইঁদুর নিধনকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পাবেন জাতীয় পর্যায়ের পুরস্কার।
তবে ইঁদুর কমাতে সরকারের উদ্যোগকে স্বাধুবাদ জানালেও এই পদ্ধতির কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে প্রাণীবিদদের। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ফিরোজ জামান গণমাধ্যমকে বলেন, ইঁদুর প্রচুর ক্ষতি করছে। তাই ইঁদুর কমানো জরুরি। তাছাড়া ইঁদুরের মাধ্যমে তেমন কোনো উপকারও মিলে না। কিন্তু সমস্যা হলো এই পদ্ধতিতে কতটুতু ইঁদুর কমানো সম্ভব তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।
তিনি বলেন, একটি ইঁদুর ১৫-১৬টি বাচ্চা দেয়। তাই এই ইঁদুর মেরে কমানো খুবই কঠিন। অথচ যেসব প্রাণীরা ইঁদুর খায় তারা টিকে থাকলে ইঁদুর মারতে আমাদের ভাবতে হতো না। বন বিড়ালসহ সব ধরনের বিড়াল ইঁদুর খায়, দারাজ সাপ, গোখরা সাপসহ সাপের অনেক প্রজাতি ইঁদুরখেকো। বেজি, পেঁচা, ঈগল পাখিসহ আরও অনেক প্রাণির প্রিয় খাবার ইঁদুর। কিন্তু আমরা তাদের আবাস বিলীন করতে করতে তাদের বিলীন করে দেওয়ায় এখন ইঁদুরের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। তাই আমাদের পুরস্কার ঘোষণা করে ইঁদুর মারতে হচ্ছে। কিন্তু প্রাকৃতিক অবস্থা ধ্বংস করে কৃত্রিম এই পদ্ধতিতে কতটুকু সফলতা পাওয়া যাবে সেই প্রশ্ন থেকেই যায়।
জলবায়ু, কৃষি এবং পরিবেশের স্বার্থেই প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র রক্ষায় গুরুত্ব দেওয়ারও পরামর্শ দেন এই প্রাণীবিদ।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post