ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এখন দিনে দেশি-বিদেশি ৩৩টি এয়ারলাইন্সের শতাধিক ফ্লাইট ওঠা-নামা করে। এসব বিমানে গড়ে বিশ্বের বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করেন ২০ হাজার যাত্রী। আরও অন্তত ১২টি বিদেশি এয়ারলাইন্স বিমান পরিচালনার জন্য আবেদন করেছে। তবে শাহজালাল বিমানবন্দরের সক্ষমতা বিবেচনায় এখনই অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয় বলছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে অনুমতি দেওয়া হবে। বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর প্রতিযোগিতা বাড়লে ভাড়াও কমে আসবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
আগামী ৭ অক্টোবর শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই টার্মিনা চালু হলে ঢাকায় বিদেশি এয়ারলাইন্সে যাত্রী পরিবহন আরও কয়েকগুণ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।
বেবিচকের সংশ্লিষ্টরা জানান, তৃতীয় টার্মিনালে বছরে ১ কোটি ২০ লাখ যাত্রী সেবার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এ অবস্থায় ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে মুখিয়ে রয়েছে বিদেশি অনেক এয়ারলাইন্স। তাদের কেউ বাংলাদেশে বিমান পরিচালনার জন্য বেবিচকে আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করেছে, কেউ আবেদনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এখন বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল শুরু হলে নতুন এয়ারলাইন্সগুলো আরও তৎপর হবে।
শাহাজালাল বিমানবন্দরে বিদেশি নতুন এয়ারলাইন্সগুলো চালু হলে বিশ্বের বিভিন্ন গন্তব্যে টিকিটের দাম কমতে পারে বলে মনে করেন অ্যাভিয়েশন খাতের সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, নতুন নতুন এয়ারলাইন্স চালু হলে যাত্রী পরিবহনে প্রতিযোগিতা বাড়বে। তখন বিভিন্ন রুটে টিকিটের দাম কমতে পারে। তবে এজন্য বিমানবন্দরের আরও যা যা সক্ষমতা বাড়ানো দরকার, এখনই তা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। এছাড়া বিদেশি এয়ারলাইন্সের একচেটিয়া প্রভাবে যাতে দেশি এয়ারলাইন্সগুলোর ব্যবসায় ক্ষতি না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী জাগো নিউজকে বলেন, তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ করায় শাহজালাল বিমানবন্দরের সক্ষমতা প্রায় দ্বিগুণ হচ্ছে। এ অবস্থায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নতুন নতুন এয়ারলাইন্স ঢাকায় যাত্রী পরিবহনে আগ্রহ প্রকাশ করছে। কয়েকটি এয়ারলাইন্স বেবিচকে আবেদনও করেছে। আমরা তাদের আবেদন গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। তারা বিমানবন্দরে যেসব সুবিধা চায়, তার সব আয়োজনই করা হচ্ছে।
প্রবাসী কল্যাণ ভবনের তথ্য মতে, বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় এক কোটি প্রবাসী কর্মরত। তবে তাদের সেবার জন্য রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী উড়োজাহাজ সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও বেসরকারি এয়ারলাইন্স ইউএস-বাংলা পরিচালনা করছে, যা যাত্রীর তুলনায় খুবই কম। এর বাইরে ঢাকায় যাত্রী পরিবহন করছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আরও ৩১টি এয়ারলাইন্স। সেবাদানকারীর সংখ্যা বাড়লে সহজেই বিশ্বের বিভিন্ন রুটে স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করতে পারবেন প্রবাসীরা।
ঢাকায় যাত্রী পরিবহন করতে চায় ১২ বিদেশি এয়ারলাইন্স
বেবিচক সূত্র জানায়, বিভিন্ন দেশের প্রায় ডজনখানেক এয়ারলাইন্স বিমান পরিচালনার জন্য বেবিচকে যোগাযোগ করেছে। পরিচালনার প্রাথমিক পরিকল্পনাও জানিয়েছে তারা। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কার ফিটস এয়ার, দক্ষিণ কোরিয়ার কোরিয়ান এয়ার, আবুধাবিভিত্তিক উইজ এয়ার, ইন্দোনেশিয়ার গারুদা ইন্দোনেশিয়া, ইরাকের ইরাকি এয়ারওয়েজ, জর্দানের রয়্যাল জর্দানিয়ান, ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স, এয়ার ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ বিমান পরিচালনার অনুমোদন চেয়ে আবেদন করেছে।
এছাড়া উজবেকিস্তানের উজবেকিস্তান এয়ারওয়েজ, সুইজারল্যান্ডের সুইস ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স ও রিয়াদ এয়ার বেবিচকের কাছে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ তিনটি এয়ারলাইন্স বাংলাদেশে নিযুক্ত তাদের রাষ্ট্রদূতদের দিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রীর কাছে পরিচালনার আগ্রহের কথা জানান। পাকিস্তানের পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সও (পিআইএ) ফ্লাইট পরিচালনায় আগ্রহ দেখিয়েছে।
দেশে বিদেশি এয়ারলাইন্স বাড়লে ভাড়া কমানোর প্রতিযোগিতা শুরু হবে জানিয়ে অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশে চাহিদা আছে। ক্রমেই যাত্রী সংখ্যা বাড়ছে। সে তুলনায় এয়ারইলাইন্সের সংখ্যা কম। আরও বিদেশি এয়ারলাইন্স এলে প্রতিযোগিতা বাড়বে। তখন এয়ারলাইন্সগুলো কম ভাড়ায় যাত্রী পরিবহনে আগ্রহী হবে।’
তিনি বলেন, ‘তৃতীয় টার্মিনাল ঘিরে যে ১২টি এয়ারলাইন্স আসছে বলা হচ্ছে, তা পুরোপুরি সঠিক নয়। আমার জানা মতে তিন থেকে চারটি এয়ারলাইন্স বেবিচকে উড়োজাহাজ পরিচালনার জন্য আবেদন করেছে। তাদের সঙ্গে তৃতীয় টার্মিনালের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তবে তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে অনেক বিদেশি এয়ারলাইন্স আসতে পারে।’
এখন দেশের ৮০ শতাংশ যাত্রী বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো পরিবহন করে জানিয়ে ওয়াহিদুল আলম বলেন, একচেটিয়াভাবে বিদেশি এয়ারলাইন্সকে উড়োজাহাজ পরিচালনা করতে দিলে আমাদের বিমান বাংলাদেশ ওয়ারলাইন্স ও ইউএস-বাংলার ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বেবিচককে এ বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। পাশাপাশি বিমান এবং ইউএস-বাংলাকেও তাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। যাতে বিদেশি এয়ারলাইন্স এলেও তারা টিকে থাকতে পারে।
বাংলাদেশে উড়োজাহাজ পরিচালনা করছে যেসব এয়ারলাইন্স
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্র জানায়, বর্তমানে বাংলাদেশে এয়ার অ্যারাবিয়া, এয়ার এশিয়া, এয়ার ইন্ডিয়া, বাটিক এয়ার, ক্যাথে প্যাসিফিক, চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্স, চায়না সাউদার্ন, ড্রুক এয়ার, ইজিপ্ট এয়ার, এমিরেটস এয়ারলাইন্স, ইত্তিহাদ এয়ারওয়েজ, ফ্লাই দুবাই, গালফ এয়ার, হিমালয়া এয়ারলাইন্স, ইন্ডিগো এয়ারলাইন্স, জাজিরা এয়ারওয়েজ, কুয়েত এয়ারওয়েজ, মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্স, মালদ্বিভিয়ান এয়ার, ওমান এয়ার, কাতার এয়ারওয়েজ, সালাম এয়ার, সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্স, শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইন্স, থাই এয়ারওয়েজ, টার্কিশ এয়ারলাইন্স, ভিস্তারা এয়ারলাইন্সসহ ৩১টি এয়ারলাইন্স উড়োজাহাজ পরিচালনা করছে।
‘ফিফথ ফ্রিডম’ চায় আমিরাতের এয়ারলাইন্সগুলো
বেবিচক সূত্র জানায়, বাংলাদেশ থেকে তৃতীয় দেশে (ফিফথ ফ্রিডম) পরিচালনার অনুমতি চায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের এমিরেটস, ইত্তিহাদ, ফ্লাই দুবাই এবং এয়ার অ্যারাবিয়া। এ নিয়ে গত ১৬ মে বেবিচকের সঙ্গে বৈঠক করেছে তারা। কিন্তু বর্তমানে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের কাজ চলায় উড়োজাহাজের সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব হবে না বলে জানিয়ে দেয় বেবিচক। তবে তৃতীয় টার্মিনালে যাত্রী পরিবহন শুরু হলে তাদের অনুমতি দেওয়া হতে পারে।
জানতে চাইলে বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, এই আবেদনকারীদের মধ্যে গত মে মাসে বিমান পরিচালনায় অনুমতি পেয়েছে আফ্রিকাভিত্তিক ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স। যদিও তারা ২০২২ সালে উড়োজাহাজ পরিচালনার অনুমতি চেয়েছিল। তাদের সঙ্গে চলতি মাসেই বেবিচকের এয়ার সার্ভিস অ্যাগ্রিমেন্ট (এএসএ) স্বাক্ষরিত হতে পারে। এরপর আগামী মাসে শুরু করতে পারে। বাকি এয়ারলাইন্সগুলোকে অনুমোদন দেওয়া হতে পারে তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধনের পর।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post