ইয়েমেনে কিডন্যাপ ৫জন বাংলাদেশী ওমান প্রবাসী জাহাজের নাবিক। তাদের মুক্তিপণের জন্য দাবী করা হচ্ছে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা। চাকরীর সুবাদে বৈধ উপায়ে ওমান থেকে সৌদি যাওয়ার পথে ইয়েমেনে আটক হন ৫ বাংলাদেশী সহ বিভিন্ন দেশের প্রবাসী। দীর্ঘ ৪মাসের বেশি সময় ধরে বন্ধী অবস্থায় মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন তারা। জানাগেছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসের ৩ তারিখ ওমানের সুর বন্দর থেকে সৌদি আরবের ইয়ানবু বন্দরের উদ্দেশ্যে ডানাহ-৬, ফরিদা ও আল বাইয়ান নামে তিনটি জাহাজে রওয়ানা দেন তারা। ৩টি জাহাজে সম্পূর্ণ বৈধভাবে নতুন কর্মস্থল সৌদি আরবে ৩ যাওয়ার পথে আরব সাগর দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে ঝড়ের কবলে পড়িয়া ৩টি জাহাজের মধ্যে ডানাহ-৬ নামে জাহাজটি ইয়েমেন সাগরে ডুবে যায়। এমতাবস্থায় বাকি ২টি জাহাজের মাধ্যমে প্রাণে রক্ষা পেয়ে তারা ইয়েমেনের সরকারি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করিলে তাদেরকে আটক করে সানা’র ইয়েমেন হাউজ নামে একটি হোটেলে বন্দী করে রাখে।
আরও পড়ুনঃ করোনা পরীক্ষায় প্রবাসীদের জন্য বাড়তি ফি কেনো?
এই ৫জন ওমান প্রবাসী বাংলাদেশী দীর্ঘদিন যাবত ওমানের মাসিরাহ অঞ্চলের আহমেদ সুলতান এন্ড ফাবিস সুলতান এন্ড সুলতান মোহাম্মাদ কোম্পানির অধীনে কাজ করতেন। ইয়েমেনে আটক হওয়ার পর কোম্পানির পক্ষথেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছেনা এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। ওমানে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানাগেছে, আটককৃত ৫ বাংলাদেশীর ব্যাপারে গত ১০ থেকে ১২ দিন পূর্বে কুয়েত থেকে গাজি নামের পরিচয় দিয়ে এক লোক ওমানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোঃ গোলাম সরওয়ার কে কল দিয়ে তাদের আটকের খবর দেয়। পরবর্তীতে উক্ত নাম্বারে রাষ্ট্রদূত কল দিলে ইয়েমেনের পুলিশ পরিচয় দিয়ে রাষ্ট্রদূতের সাথে কথা বলে এবং এই ৫জন বাংলাদেশিকে মুক্তির ব্যাপারে তারা রাষ্ট্রদূতের কাছে ২লাখ ওমানি রিয়াল মুক্তিপণ দাবী করে। যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় সাড়ে চার কোটির টাকার সমপরিমাণ।
তাদের মুক্তিপণের জন্য দাবী করা হচ্ছে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা।
এ ব্যাপারে রাষ্ট্রদূত প্রবাস টাইমকে বলেন, “আমার কাছে গত ১২ দিন আগে তৃতীয় ব্যক্তি মারফতে এই খবর এসেছে। দূতাবাসে কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি এখনো। কিন্তু যেহেতু ঘটনাটি খুবই স্পর্শকাতর। তাই আমি মানবিক ভাবেই এই কাজে হাত দিয়েছি। আমার কাছে খবর আসার সাথে সাথেই আমি ওমানে নিযুক্ত ইয়েমেনের রাষ্ট্রদূতের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। যদিও এই ঘটনা অফিসিয়াল ভাবে দেখার দায়িত্ব কুয়েত দূতাবাসের উপর। কিন্তু এর পরেও আমি মানবিক দিক বিবেচনায় তাদের মুক্তির ব্যাপারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করে যাচ্ছি।”
যেহেতু এইসব প্রবাসী ওমানের এবং তারা বৈধভাবেই সৌদি যাচ্ছিলেন, সুতরাং তাদের কোম্পানি থেকে এ ব্যাপারে কোনো সহযোগিতা করছেন কিনা এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, “আটককৃত ৫জন বাংলাদেশীর ব্যাপারে কোনো ধরনের কাগজপত্র আমাদের হাতে আসেনি। আপনার প্রবাস টাইমের মাধ্যমে আমাদের হাতে যেসব কাগজপত্র এসেছে, তা দিয়ে আমরা এখন ওই কোম্পানির মালিককে চাপ প্রয়োগ করতে পারবো এবং আমাদের কাজ করতে বেশ সুবিধা হবে।” তিনি আরও বলেন, “তাদের সঠিক স্ট্যাটাস জানলে উদ্ধারের চেষ্টা সেভাবে করা যেত, সেইসাথে তারা যে জাহাজের বৈধভাবে নাবিক হিসেবে কাজ করতো, এমন প্রমাণ স্বরূপ CDC কপি থাকলে দূতাবাসের কাজ করতে সুবিধা হতো। এখন তারা কি মানব পাচারের স্বীকার নাকি বৈধ ক্রু তা পুরপুরি পরিষ্কার না।”
এদিকে চট্টগ্রাম সমিতি ওমানের প্রেসিডেন্ট ইয়াসিন চৌধুরী (সিআইপি) বেশকিছু ডকুমেন্টস দিয়েছেন প্রবাস টাইমের কাছে। তার ডকুমেন্ট অনুযায়ী দেখা যায়, আটককৃতরা ইয়েমেনের সানা আল হাসাবাহ আল আমারাহ ষ্ট্রীট এর হোটেল এন্ড স্যুইটস ইয়েমেন হাউজ এ বন্দী অবস্থায় রয়েছে। তাদের ঠিক মতো খাবার দিচ্ছেনা, যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। সরকারের উচিৎ দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের মুক্তির ব্যাপারে প্রচেষ্টা চালানো।
আটককৃত আঃ রহিম (৩১) এর বড়ভাই মোঃ ইসমাইল প্রবাস টাইমকে বলেন, “আমরা গত জুন মাসের ২২ তারিখে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডে লিখিত অভিযোগ দিলেও তারা কোনো খোজ নেয়নি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের দাবী, তিনি যেনো আমার ভাই সহ বাকি ৪জনকে মুক্তির ব্যবস্থা করেন। আমাদের পরিবারের কেউ তাদের চিন্তায় ঠিকমতো খেতেও পারছেনা!” ইসমাইলের দাবী, তাদের সাথে ভারতীয় নাগরিক সহ অন্যান্য দেশের নাগরিক আটক হলেও তাদেরকে মুক্ত করে নিজ দেশে ফেরত নেওয়ার ব্যবস্থা করা হলেও বাংলাদেশীদের ব্যাপারে কিছুই করা হয়নি।
এ ব্যাপারে রাষ্ট্রদূত বলেন, “যেহেতু দেশটিতে এখন যুদ্ধ চলছে, তার মধ্যে করোনাকালিন সময়, সুতরাং এই সময়ে তাদের মুক্তির বিষয়টি খুবই জটিল। এরপরেও যেহেতু আমরা জানতে পেরেছি তাদের সাথে আটককৃত ভারতীয় নাগরিকদের মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। সুতরাং তারা কিভাবে মুক্তি পেলেন এটা আমরা জানার চেষ্টা করছি এবং সেইভাবেই আমরা প্রচেষ্টা চালাবো। তবে এই মুহূর্তে ভারতীয় নাগরিকদের সাথে তাদের মুক্তির ব্যবস্থা করতে পারলে খুবই ভালো হতো। অন্যথায় পরবর্তীতে তাদের ফ্লাইটের ব্যাপারে আরেকটা ইস্যু হতে পারে। আমরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছি, দেখি কি করা যায়।”
আরও দেখুনঃ প্রবাস টাইম নিয়ে যা বললেন ওমানের রাষ্ট্রদূত
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post