মাত্র ১৯ জন করোনা রোগীর চিকিৎসায় ৫ কোটি টাকার বিল পরিশোধ করতে সরকারের কাছে আবেদন করেছে এএফসি হেলথ ফরটিস হার্ট ইনস্টিটিউট নামে কুমিল্লার একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল। এএফসি হেলথ ফরটিস হার্ট ইনস্টিটিউট হাসপাতালের করা এ বিলটি ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। অস্বাভাবিক এ বিল জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের নজরে আসায় সরকারের দুটি দফতরে আটকে গেছে।
হাসপাতালটি ২২ দিনে ১৯ জন করোনা রোগীর চিকিৎসা বাবদ ১২ লাখ ৭৫ হাজার ৬৩৬ টাকা এবং ওই হাসপাতালের আইসিইউ সহ অন্যান্য স্থাপনা বাবদ ৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা সরকারকে যদি পরিশোধ করতে হয় তাহলে প্রতি রোগীর জন্য খরচ দাঁড়াবে ২৯ লাখ টাকার ওপরে। এ ধরনের খরচ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে জানিয়েছেন জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, লিখিত কিংবা মৌখিক কোনো চুক্তি না থাকলেও কুমিল্লা শহরতলীতে অবস্থিত এএফসি হেলথ ফরটিস হার্ট ইনস্টিটিউটে ১৯ জন করোনা রোগীর চিকিৎসা বাবদ ১৩ লাখ টাকার বিল দাখিল করা হয়েছে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের কাছে। এছাড়াও সেখানে আইসিইউসহ আনুসঙ্গিক স্থাপনা বাবদ খরচে স্বাস্থ্য অধিদফতরে ৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা বিল দাখিল করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরে মোটা অংকের বিল দাখিল অনেকটা গোপনে করা হলেও কুমিল্লা সিভিল সার্জনের কাছে এ বিষয়ে মতামত চাওয়ায় বিষয়টি ফাঁস হয়ে যায়।
আরও পড়ুনঃ দেশে এসে আটকেপড়া প্রবাসীরা ওমান ফিরতে পারবেন
এ বিষয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মুজিবুর রহমান জানান, জেলা করোনা প্রতিরোধ বিষয়ক মাল্টি সেক্টর কমিটি করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য বেসরকারি এএফসি হেলথ ফরটিস হার্ট ইনস্টিটিউটকে অধিগ্রহণ করেছিল। করোনাকালে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউ স্থাপনের আগ পর্যন্ত সেখানে গত ১০ মে থেকে ৩ জুন পর্যন্ত ১৯ জন করোনা রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হয়। এর মধ্যে চারজন রোগী মারা যান। অপর ১৫ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।
তিনি জানান, এসব রোগীর চিকিৎসা ব্যয় বাবদ আমাদের কাছে (কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বরাবর) ১৩ লাখ টাকার বিল দাখিল করে এএফসি হেলথ ফরটিস হার্ট ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও ইনস্টিটিউটটিকে করোনা রোগীদের চিকিৎসা উপযোগী করে তুলতে আইসিইউসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনা বাবদ ৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা খরচ দেখিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরে বিল দাখিল করেছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।
তিনি আরও জানান, এএফসি হেলথ ফরটিস হার্ট ইনস্টিটিউট ২২ দিনে যে ১৯ জন রোগীর সেবা দিয়েছে তাদের ওষুধ, পথ্য ও ডাক্তার-নার্সসহ যাবতীয় চিকিৎসা কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে দেয়া হয়েছে। ৩ জুন কুমেক হাসপাতালে করোনা ইউনিট চালুর সময় এএফসি হেলথ ফরটিস হার্ট ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তখন সদর আসনের সংসদ সদস্য হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার তাদেরকে জানিয়ে দেন- করোনা প্রতিরোধে জেলা স্বাস্থ্য কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাদের আইসিইউ ব্যবহার করা হয়েছে। মানবতার সেবা দেয়ায় তাদেরকে ধন্যবাদ জানানো হয় এবং বলা হয় সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোনো বিল দেয়ার কথা হয়নি বা চুক্তিও হয়নি। বিষয়টি এখানেই শেষ।
হাসপাতালটির হার্ট ইনস্টিটিউটের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কনসালটেন্ট কার্ডিওলোজি ডা. সাঈদ আহমেদ জানান, আমরা ১৯ জন করোনা রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছি। এদের মধ্যে চারজন রোগী মারা গেছেন। এদের চিকিৎসা, থাকা, ওষুধপত্র বাবদ ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাবদ ১২ লাখ ৭৫ হাজার ৬৩৬ টাকার বিল কুমেক হাসপাতালের পরিচালকের নিকট জমা দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান বলেন, হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নেয়া ১৯ রোগীর ওষুধসহ ডাক্তার-নার্সদের সুরক্ষা সরঞ্জাম সব আমরা দিয়েছি। যারা চিকিৎসা দিয়েছে তাদেরকে কুমিল্লা ক্লাব ও ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে রেখেছি। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদফতরে ফরটিস হার্ট ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষের ৫ কোটি ৪৮ লাখ ৪৬ হাজার ৫৮৭ টাকা আর্থিক অনুদান দাবি ও একই রোগীদের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে গত ৯ জুন সেখানকার কনসালটেন্ট ডা. সৈয়দ আহমদ ও ডা. মো. রাসেল আহমেদ চৌধুরীর আরও ১২ লাখ ৭৫ হাজার ৬৩৬ টাকার বিল জমা দেয়ার বিষয়টি অত্যন্ত অযৌক্তিক।
ডা. মুজিবুর রহমান জানান, এছাড়াও এএফসি হেলথ ফরটিস হার্ট ইনস্টিটিউটে করোনা চিকিৎসার সময় চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের বেতন সংসদ সদস্য হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার দিয়েছেন। কিন্তু ফরটিস হার্ট ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ রোগীদের সেবা বাবদ ১২ লাখ ৭৫ হাজার ৬৩৬ টাকা ও আইসিইউসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনা বাবদ ৫ কোটি ৪১ লাখ টাকার বিল দাখিল করেছে। যা একেবারেই অস্বাভাবিক ও অগ্রহণযোগ্য।
আরও দেখুনঃ প্রবাস টাইম নিয়ে যা বললেন ওমানের রাষ্ট্রদূত
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post