কুড়িগ্রামে প্রবাসী নির্যাতনের ঘটনায় নতুন মোড়। প্রকাশ্য দিবালোকে সিঙ্গাপুর প্রবাসী এক ব্যক্তির বাড়িতে হামলা চালিয়ে বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে। বাড়িতে থাকা প্রবাসীর স্ত্রীর ওপর হামলা চালিয়ে তাকে ভিটাছাড়া করারও অভিযোগ উঠেছে। সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কুড়িগ্রাম পৌর এলাকার চর কুড়িগ্রাম গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা জানান, দুপুরে একদল দুর্বৃত্ত প্রবাসীর বাড়িতে হামলা চালায়। তারা বাড়ির দরজা-জানালা ভেঙে ফেলে এবং আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। এছাড়াও তারা বাড়ির নির্মাণসামগ্রী নিয়ে যায়। প্রবাসীর স্ত্রী জানান, হামলাকারীরা তাকেও মারধর করে। তারা তাকে ভিটাছাড়া করার হুমকি দিয়ে যায়। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদুর রহমান জানান, এ ঘটনায় অভিযোগ পেয়েছেন। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঘটনার পর ক্ষয়ক্ষতির বর্ণনা জানিয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন প্রবাসীর স্ত্রী আকলিমা বেগম। তবে হামলাকারীদের হুমকিতে সন্তানসহ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন তিনি। অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সোমবার দুপুরে পৌরসভা এলাকার চর কুড়িগ্রাম গ্রামের বাসিন্দা সিঙ্গাপুর প্রবাসী হজরতের কেনা বসতবাড়িতে হামলা চালান স্থানীয় হাশেম মাস্টার ও তার সহযোগীরা। কুড়িগ্রাম শহরের জিয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শফিকুল ইসলাম হাশেম মাস্টারকে সহায়তা করেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী পরিবারের। রামদা ও বিভিন্ন দেশি অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে শতাধিক বহিরাগত দুর্বৃত্ত প্রকাশ্য দিবালোকে হামলা ও লুটপাট চালান। তারা হজরতের স্ত্রীকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেন। পরে রান্নাঘরসহ বাড়ির তিনটি ঘর ভেঙে লুটপাট চালায় দুর্বৃত্তরা। ভাঙচুর শেষে ঘরের বেড়া ও টিন খুলে নিয়ে যায়। দুর্বৃত্তদের হামলায় প্রাণ বাঁচাতে আকলিমা তার সন্তানকে নিয়ে পাশের বাড়িতে আশ্রয় নেন। স্থানীয় ব্যক্তিরাও আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। পরে আকলিমা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশের সহায়তা চান। সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই সবকিছু লুট করে নিয়ে যায় হাশেম মাস্টার ও শফিকুলের বাহিনী।
গৃহবধূ আকলিমা বেগম বলেন, ‘হাশেম মাস্টারের সন্ত্রাসীরা আমার বাড়িঘর, স্বর্ণালংকার এবং নগদ টাকাসহ সবকিছু লুটপাট করে নিয়ে গেছে। ঘর ভেঙে দিয়ে বসতভিটা ফাঁকা করে ফেলছে। তাদের তাণ্ডব দেখে জীবনের নিরাপত্তার জন্য আমি ৯৯৯ ফোন দিলে পুলিশ এসে ছবি-ভিডিও করে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর দুর্বৃত্তরা আবারও ফিরে এসে আমাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে চলে যায়। আমি পরবর্তী সময়ে আবারও ফোন দিলে পুলিশ থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে বলে। অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমার স্বামী বিদেশে। আমি সন্তানসহ চরম নিরাপত্তাহীনতায় পালিয়ে বেড়াচ্ছি।’
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে আকলিমার অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। তবে হাশেম মাস্টার ও শফিকুল বাহিনীর ভয়ে কেউ গণমাধ্যমে নাম প্রকাশ করতে চাননি। স্থানীয় বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা ডেপুটি কমান্ডার আফজাল হোসেন বলেন, ‘ওই প্রবাসীর সঙ্গে হাশেম মাস্টারের জায়গা নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল। পুলিশও বিষয়টা জানে। বৃহস্পতিবার দুই পক্ষকে নিয়ে পুলিশের বসার কথা ছিল। কিন্তু সোমবার দুপুরে নামাজ পড়ে গিয়ে শুনি প্রবাসীর বাড়িতে হামলা-লুটপাট হয়েছে। কারা করেছে আপনারা খোঁজ নেন।’
অভিযুক্ত হাশেম মাস্টারকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে তার নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। তিনি রৌমারীর বাসিন্দা হলেও কুড়িগ্রাম জিয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও বিএনপির রাজনীতির সক্রিয় সদস্য শফিকুল ইসলামের সহায়তার প্রবাসীর বাড়িতে হামলা চালান বলে অভিযোগ। শফিকুল ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃত্বের আড়ালে গুন্ডা বাহিনী লালন করে চুক্তিতে বিভিন্ন দখলদারিতে প্রভাব বিস্তার করেন বলে জেলা বিএনপি দলীয় সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
তবে শফিকুল তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘ওই জায়গা নিয়ে চার জন মালিকানা দাবি করছে। বিষয়টি নিয়ে মেয়রসহ থানায় বসে ফয়সালা করার কথা। আমি ফয়সালার করার জন্য কয়েকবার থানায় গিয়েছিলাম। হামলা বা ভাঙচুরের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। গত পরশু দলীয় কাজ শেষে ঢাকা থেকে ফিরেছি। আমি ঘটনাস্থলে যাইনি। এগুলো হাশেম মাস্টার আর হজরতের পরিবারের বিষয়। যারা আমাকে দায়ী করছে তারা ডাহা মিথ্যা কথা বলছে। আমার কোনও বাহিনী নাই।’
পৌর মেয়র কাজিউল ইসলাম বলেন, ‘গুন্ডা দিয়ে প্রবাসীর বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে বলে শুনেছি। এর সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।’ ওসি মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ প্রবাসীর স্ত্রীর নিরাপত্তাহীনতার প্রশ্নে ওসি বলেন, ‘এমন খবর আমার কাছে নেই। তারপরও পুলিশি টহল অব্যাহত রয়েছে। তেমন পরিস্থিতি হলে পুলিশ নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেবে।’
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post