গোটা মধ্যপ্রাচ্যের প্রথম দেশ হিসেবে করোনার এন্টিবডি জরিপ করছে ওমান। রবিবার (১২-জুলাই) থেকে সমগ্র ওমানেই চালু হয়েছে এই জরিপ কার্যক্রম। ১০ সপ্তাহের মধ্যে সমীক্ষাটি পুরো ওমানে পরিচালনা করা হবে বলে জানিয়েছে ওমান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। পর্যায়ক্রমে ওমানের প্রতিটি অঞ্চল থেকে ৩৮০ থেকে ৪০০ জনের নমুনা নেওয়া হবে এবং ৫০০০ করে মোট ২০,০০০ মানুষের উপর এই জরিপ চালাবে ওমান সরকার।
এ ব্যাপারে ওমানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে কর্মরত বাংলাদেশী চিকিৎসক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রবাস টাইমকে বলেন, “ওমান এমনই একটি দেশ, যা স্বাস্থ্য সেবায় পৃথিবীর মধ্যে একটি উন্নত দেশ হিসেবে ইতিমধ্যেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে স্বীকৃতি পেয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী ওমান এখন স্বাস্থ্য সেবায় বিশ্বের ৮নাম্বারে অবস্থান করছে এবং মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে ১ নাম্বার অবস্থানে রয়েছে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন তাদের চিকিৎসা সেবার মান কেমন হতে পারে।”
স্বাস্থ্য সেবায় বিশ্বের ৮নাম্বারে অবস্থান করছে ওমান। সুত্রঃ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাতিনি বলেন, “ওমানে ইতিমধ্যেই মসজিদ মাদ্রাসা ও হাতেগোনা কিছু প্রতিষ্ঠান বাদে বাকি প্রায় সমস্ত কিছুই খুলে দেওয়া হয়েছে। এমতাবস্থায় এই জরিপের উপর নির্ভর করছে দেশটির স্কুল কলেজ, মসজিদ, পার্ক, সেলুন ও পার্লার খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত। মূলত এই জরিপের মাধ্যমে অনেক বড় একটা ফলাফল পাওয়া যাবে। যা দিয়ে আগামী দিনের অনেক সিদ্ধান্ত নিতে ওমান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করবে এই জরিপের ফলাফল।”
ওমান নিউজ এজেন্সির সূত্রে জানাগেছে, এই জরিপের প্রধান লক্ষ্য হলো দেশটিতে কোন বয়সে করোনা সংক্রমণের হার বেশি তা নির্ণয় করা, পরীক্ষাগারে নিরীক্ষিত টেস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করা, দেশের কোন স্তরে বেশি সংক্রমিত হয়েছে তার মাত্রা নির্ণয় করা ও লক্ষণ ছাড়াই সংক্রমণের হার এবং সংক্রমণের সংখ্যা অনুমান করা। এই রোগের মাত্রার উপর নির্ভর করে জীবনযাত্রার মান কীভাবে প্রভাবিত হয় তা নির্ধারণ করা ও মহামারী ছড়িয়ে পড়ার পর তার প্রভাবগুলি মূল্যায়ন হবে এই সমীক্ষার মূল লক্ষ্য।
সূত্রে আরও জানাগেছে, এই জরিপের ফলাফল আগস্টের প্রথম দিকে ঘোষণা হতে পারে। তবে গালফে যেহেতু এই জরিপ ওমানেই প্রথম হচ্ছে, হয়তো খুব শীঘ্রই গালফের অন্যান্য দেশ এইজরিপ শুরু করবে বলে ধারণা করছেন তিনি। এই জরিপের অল্প কিছু বাংলাদেশী প্রবাসীদের নাম আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি। তবে যাদের নাম আসবে, তারা যেনো নির্ধারিত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেয়ে রক্ত দিয়ে আসেন এমন অনুরোধ জানান বাংলাদেশী এই চিকিৎসক। তিনি প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে বলেন, এটি খুবই উপকারী একটি জরিপ। যার উপর নির্ভর করছে ওমানের আগামী দিনের অনেক সিদ্ধান্ত। সেইসাথে যিনি এই জরিপে অংশগ্রহণ করবেন, তার এন্টি বডি চেকআপ ও হয়ে যাবে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। সুতরাং কোনো প্রবাসী যেনো কোনো ধরনের গুজবে কান না দেয় সেই অনুরোধ জানান তিনি।
আরও পড়ুনঃ ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীরা পাবেন ২০০ কোটি টাকার ঋণ
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় মধ্যপ্রাচ্যের বেশিরভাগ দেশ যখন হিমশিম খাচ্ছে, তখন একেবারেই ব্যতিক্রম ওমান। সুষ্ঠু পরিকল্পনা আর সঠিক ব্যবস্থাপনায় করোনা প্রতিরোধে অনন্য দৃষ্টান্ত গড়েছে এই আরব রাষ্ট্র। দেশটিতে এখন আক্রান্তের পিক টাইম চললেও তা পার্শ্ববর্তী অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী দেশটিতে আক্রান্ত এবং মৃত্যু দুইটার হার ই অনেক কম। করোনা সংক্রমণ দেখা দেয়ার পর থেকেই ভাইরাসটির লাগাম টেনে ধরতে সব ধরনের উদ্যোগ নেয় আরব রাষ্ট্র ওমান। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে দেশটিতে প্রথম রোগী শনাক্তের পর থেকেই কড়া বিধিনিষেধ আরোপ আর সঠিক পরিকল্পনায় কাজ করছে দেশটির সুপ্রিম কমিটি। সুত্রে বলছে, এখন পিক টাইম চললেও তা আগস্টে হয়তো থাকবেনা। খুব শীঘ্রই ওমান স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।
আরও দেখুনঃ প্রবাস টাইম নিয়ে যা বললেন ওমানের রাষ্ট্রদূত
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post