হিজাব পরিধান করে ভাইভা বোর্ডে যাওয়ায় একজন শিক্ষার্থীকে হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. নাসিরউদ্দীন মুন্সীর বিরুদ্ধে। এ সময় তিনি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে পূর্ণ হিজাব পালন করতে সৌদি আরবের মতো দেশে যাওয়ারও পরামর্শ দেন। বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) বিভাগে চলমান মাস্টার্সের ভাইভা বোর্ডে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্যমতে, ‘ভাইভা চলাকালীন সময়ে একপর্যায়ে ড. নাসিরুদ্দীন মুন্সী ভুক্তভোগী ছাত্রীকে বলেন, কেন তুমি হিজাব পরো? কেন তুমি প্রেজেন্টেবল না? তোমার মন মানসিকতা এমন নিচু কেন?’
এ সময় হিজাব নিয়ে বাড়াবাড়ি করাতে অপর একজন শিক্ষক প্রতিবাদ জানিয়ে বোর্ড থেকে বের হয়ে যান। পরবর্তীতে বুঝিয়ে সেই শিক্ষককে বোর্ডে ফিরিয়ে এনে ভাইভা শেষ করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও বলেন, আমি তোমার অভিভাবক হিসেবে বলছি। তোমার যা পোশাক, তাতে তো লোকে তোমাকে জঙ্গিও ভাবতে পারে। ইসলাম তো ফ্লেক্সিবল এ ক্ষেত্রে। তুমি যদি এ রকমই থাকতে চাও, তাহলে তোমার সৌদি আরবের মতো দেশগুলোতে যাওয়া উচিৎ। কিন্তু আজকাল সৌদির মেয়েরাও তো মুখ বের করে রাখে। হিজাব পরলে তো তুমি জঙ্গিও হতে পারো।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অধ্যাপক ড. নাসিরউদ্দীন মুন্সী বলেন, কয়েকজন শিক্ষার্থী হিজাব পড়ে ভাইভা দিতে এসেছে। আমি তাদেরকে বললাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম রয়েছে ভাইভাবোর্ডে হিজাব খুলবা কিনা? তারা হিজাব খুলতে ইচ্ছুক হয়নি। আমি তাদের একজনকে বললাম বিসিএস বা অন্যান্য চাকরির ভাইবা বোর্ডে হিজাব খুলতে হবে। ধর্মীয় ব্যাপারটা আরো লিবারেল। মসজিদে নববীতেও মুহাম্মদ (স.) বিধর্মীদেরকে নিয়ে মিটিং করেছেন, এসব বিষয় ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার। পরে আমরা হিজাব না খোলা অবস্থায় তার ভাইভা নেই। এরপর একজন হিজাব পরিহিতা একজন শিক্ষিকা আসেন, ওনাকে দেখিয়ে বলি দেখো ওনাকে কত সুন্দর লাগতেছে। হিজাব পরিশীলিত বিষয়, এটা পরলে জঙ্গি হবে কেন বলবো? একজন শিক্ষার্থী শুধু চোখ দেখিয়ে আসে তখনতো আমরা চিনতে পারি না। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মেও আছে ভাইভা বোর্ডে মুখ দেখাতে হবে।
তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আমি খোলামেলা শব্দ বলেছি কিন্তু তারা উলঙ্গ হিসেবে ব্যবহার করেছে। তাদের কাছে শব্দের ব্যবহারে খোলামেলাই উলঙ্গ মনে হতে পারে। পরে আমাদের নিজেদের মধ্যে একজন সহকর্মী বলে ‘এটা তার পার্সোনাল ব্যাপার’। আমি বলেছি এটা অবশ্যই ব্যক্তিগত বিষয়, কিন্তু আমাকে তো বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম মানতে হবে। পরে তিনি আবার চলে এসেছেন। আমি ২৮ বছরের শিক্ষকতা জীবনে এমন হয় নাই। তারা আমার সন্তানের মতো। নিশ্চয়ই তাদের কোনো মোটিভ আছে। আমাকে ইচ্ছাকৃতভাবে বাজেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
এই সমস্যার পুনরাবৃত্তি রোধে বিশ্ববিদ্যালয়কে দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হিজাব পরিধান করে ভাইভা দেয়া অ্যালাউ করুক আমার কোনো আপত্তি নাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম আমাদেরকে জটিলতায় ফেলছে, তাদের কাছে আমাদের স্বচ্ছ থাকতে হয় ফলে দায়বদ্ধতা থেকে হিজাব খোলার কথা আমাদেরকে বলতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই নিয়ম একটা বিতর্ক ইস্যুর সৃষ্টি করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন কোনো নিয়ম থাকার দরকার নেই, এরকম নিয়ম বরং আমাদের বিপদে ফেলছে।
ঘটনা প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অসাম্প্রদায়িক ও সহনশীল জায়গা, আমরা প্রতিটি দর্শন, মূল্যবোধকে শ্রদ্ধা করি। এ ধরনের রূঢ় কথা একবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। তবে আমার সন্দেহ যারা অভিযোগ করেছে তাদেরকে কেউ উসস্কানি দিচ্ছে বিধায় এ বিষয়টি প্রতিনিয়ত ঘটতেছে। যারা হিজাব পরিধান করবে তারা পরিধান করুক তবে যখন যে নিয়ম আছে তা মানতে হবে। পরিচয় শনাক্তকরণে অন্যারা যে নিয়ম মানছে তা সবাইকেই মানতে হবে।
শিক্ষার্থীদের দাবি অনুসারে পরিচয় শনাক্তকরণে বিকল্প ব্যবস্থা নিবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিকল্প নয়, পরিচয় শনাক্তকরণে সারা পৃথিবীব্যাপী এখন যে নিয়ম আছে সেটাই উত্তম। এর আগেও গত মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ওয়াহিদুজ্জামান চাঁনের বিরুদ্ধে হিজাব পরিধান করায় নারী শিক্ষার্থীকে হেনস্তার অভিযোগ আসে। যার পরিপ্রেক্ষিতে ৩০ আগস্ট বিক্ষোভ সমাবেশ ও উপাচার্য বরাবর সাতদফা সংবলিত স্মারকলিপি প্রদান করে ঢাবি শিক্ষার্থীরা।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post