প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ তায়ালা হাজারের বেশি মুজিজা দিয়েছিলেন। এর মধ্যে অন্যতম একটি ছিল তার হাতের ইশারায় চাঁদ দুইভাগ হয়ে যাওয়ার ঘটনা। তাফসিরে মাআরিফুল কোরআনের বর্ণনা অনুযায়ী চাঁদ দ্বিখন্ডিত বা দুইভাগ হওয়ার ঘটনাটি ঘটেছিলো মক্কার মিনা প্রান্তরে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুওয়ত পাওয়ার নবম বছরে ।
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহুদি এবং মক্কার মুশরিকদের ইসলামের পথে আহ্বান করছিলেন। মুশরিকরা নবীজির আহ্বানে কোনোভাবে সাড়া দেয়নি, উল্টো ইসলামের আহ্বানকে বাধাগ্রস্ত করার সবধরনের পন্থা অবলম্বন করেছিলো।
ইহুদিদের পরামর্শ
এ সময় ইহুদি পণ্ডিতেরা কোরায়েশ নেতাদের একটা বিস্ময়কর কৌশল শিখিয়ে দিল। তারা বলল, মুহাম্মদ জাদুকর কি-না, যাচাইয়ের একটা উত্তম পন্থা হলো, জাদুর প্রভাব শুধু পৃথিবীতেই সীমাবদ্ধ থাকে। আসমানে এর কোন প্রতিক্রিয়া হয় না। তাই তোমরা মুহাম্মাদকে বল, সে চাঁদকে দুই ভাগ করুক।
সম্ভবত, হজরত মূসা আলাইহিস সালামের লাঠির সাহায্যে নদী দুই ভাগ হওয়ার মুজিজা থেকেই চাঁদ দুই ভাগ করার চিন্তাটি ইহুদীদের মাথায় এসে থাকবে। অথচ নদী দুই ভাগ করার থেকে চাঁদ দুই ভাগ করা বেশি কঠিন বিষয়। কারণ, নদী পৃথিবীতে অবস্থিত এবং চাঁদ আকাশে।
কোরায়েশ নেতাদের অদ্ভুত দাবি
কোরায়েশ নেতারা এটা শুনে খুশীতে বাগবাগ হয়ে গেল এই ভেবে যে, এবার নির্ঘাত মুহাম্মাদ কুপোকাৎ হবে। তারা দল বেঁধে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গিয়ে এক জোসনা রাতে বললো, আপনি সত্য নবী হয়ে থাকলে এই চাঁদকে দুই ভাগ করে দেখান।
নবীজির মুজিজা
কোরায়েশ নেতাদের দাবি শুনে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করলেন, এরপর হাতের ইশারায় চাঁদকে দুই ভাগ করে দেখালেন।
মুহূর্তের মধ্যে চাঁদ ভাগ হয়ে পূর্ব ও পশ্চিমে ছিটকে পড়ল। দুই টুকরার মাঝখানে ‘হেরা’ পাহাড় আড়াল হয়ে গেল। এরপর আবার দুই টুকরা এসে এক সঙ্গে যুক্ত হলো।
কোরায়েশদের সত্য অস্বীকার
এসময় আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপস্থিত সবাইকে বললেন, দেখ এবং সাক্ষ্য দাও। চোখের সামনে এই মুজেজা দেখার পর কোনো জ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তির পক্ষে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওতকে অস্বীকার করার উপায় ছিলো না, কিন্তু এরপরও মুশরিকরা ঈমান আনলো না। তারা এ ঘটনাকেও জাদু বলতে লাগলো।
তারা বললো, মুহাম্মদ সারা বিশ্বের মানুষকে জাদু করতে পারবে না। তাই বিভিন্ন স্থান থেকে এই অঞ্চলে আগত লোকদের জন্য অপেক্ষা কর। তারা কি বলে শুনে নাও।
এরপর বিভিন্ন স্থান থেকে আগন্তুককদেরকে তারা জিজ্ঞাসাবাদ করল। তারা সবাই চাঁদকে দুই ভাগ অবস্থায় দেখেছে বলে স্বীকার করল। বহিরাগত মুসাফিরদের সাক্ষ্যের পরও মুশরিকেরা নিজেদের জেদ ও অহংকারের কারণে ঈমান আনলো না।
কোরআনে মুশরিকদের দ্বিচারিতার বর্ণনা
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে আল্লাহ তায়ালা সূরা কামার নাজিল করেন এবং সেখানে কাফেরদের এই দ্বিচারিতা সম্পর্কে বলেছেন,
وَإِن يَّرَوْا آيَةً يُعْرِضُوا وَيَقُولُوا سِحْرٌ مُّسْتَمِرٌّ، وَكَذَّبُوا وَاتَّبَعُوا أَهْوَاءَهُمْ وَكُلُّ أَمْرٍ مُّسْتَقِرٌّ
‘তারা যদি কোন নিদর্শন (যেমন চাঁদ দুই ভাগ করা) দেখে, তবে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে যে, ‘এটা তো চলমান জাদু’। তারা মিথ্যারোপ করে এবং নিজেদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে। অথচ প্রত্যেক কাজের ফলাফল (কিয়ামতের দিন) স্থিরীকৃত হবে (সূরা কামার (৫৪) আয়াত, ২-৩)। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতে চাঁদ দুই ভাগের ঘটনা সংঘটিত হওয়ার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন হজরত আলী, আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ, জুবায়ের ইবনু মুত্বইম রা. প্রমুখ ছাহাবিরা।
তারা ছাড়াও সাহাবিদের বড় একটি দল এই ঘটনা সম্পর্কিত হাদিস বর্ণনা করেছেন। বর্ণনাকারী সাহাবিদের মধ্যে অন্যতম হলেন- আবদুল্লাহ ইবনে ওমর, ইবনে আব্বাস ও আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post