ইসলামে ফজিলত লাভের উদ্দেশ্যে কেবল তিনটি মসজিদে ভ্রমণ করার অনুমোদন আছে। যার প্রথমটি সৌদি আরবের মক্কার মসজিদুল হারাম বা কাবা শরিফ। দ্বিতীয়টি জেরুজালেমের মসজিদ আল আকসা বা বায়তুল মুকাদ্দাস যেটি ইসলামের প্রথম কিবলা মসজিদ। তৃতীয়টি হলো মদিনার মসজিদে নববি যাকে মদিনাতুন নবীও বলা হয়।
মদিনার প্রাণকেন্দ্র হলো ‘মসজিদে নববি’। মসজিদে নববির ভেতরে একটা জায়গা আছে, তার নাম রিয়াজুল জান্নাত। রিয়াজুল জান্নাত বলতে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সময়ে তৈরি করা মসজিদকে বোঝায়। যেটি মূলত মিম্বর ও হুজরাহর মধ্যবর্তী স্থান। মসজিদে নববিতে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর রওজা মোবারক এবং তাঁর জমানার মূল মিম্বরের মধ্যবর্তী স্থানকে নবীজি বেহেশতের বাগানসমূহের একটি বাগান বলেছেন। এটাই রিয়াজুল জান্নাত। এই রিয়াজুল জান্নাতে প্রবেশের জন্য অ্যাপে নিবন্ধন করতে হয়। এখানে প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে ১১.৩০, দুপুর ১টা থেকে বেলা ৩টা, রাত ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত নারীরা প্রবেশ করতে পারেন।
এই জায়গাটিতে সবুজ এবং সাদা রঙের কার্পেট বিছানো আছে। মসজিদের অন্য কার্পেটগুলো যেহেতু লাল রঙের তাই ভিন্ন রঙের কার্পেট দেখে রিয়াজুল জান্নাতের সীমানা বুঝতে অসুবিধা হয় না। এ স্থানে নামাজ পড়া অতি উত্তম।
রিয়াজুল জান্নাত বা বেহেশতের বাগান সম্পর্কে কয়েকটি ব্যাখ্যা আছে। ইবনে হাজাম (রা.) বলেন, রিয়াজুল জান্নাতকে জান্নাতের বাগান বলা হয়েছে রূপকভাবে। ওলামায়ে কেরামরা রূপক অর্থে ব্যবহার করেছেন। তাঁদের মতে, এখানে জিকির করলে রহমত ও সৌভাগ্য লাভ করা যায়।
নুরুদ্দিন সামহুদির বর্ণনামতে, আল্লাহ এই স্থানটুকু হুবহু বেহেশতে স্থানান্তর করবেন। তাই এই অংশ অন্যান্য জমিনের মতো নয়। পবিত্র স্থান সম্পর্কে জানিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্য হলো আমরা যেন ইবাদতের মাধ্যমে তা আবাদ রাখি।
রিয়াজুল জান্নাতের ভেতরে কয়েকটি স্তম্ভ রয়েছে, সেগুলোকে রহমতের স্তম্ভ বলে। রাসুল (সা.)-এর তৈরি মসজিদে খেজুরগাছের খুঁটিগুলোর স্থানে উসমানি সুলতান আবদুল মাজিদ পাকা স্তম্ভ নির্মাণ করেন। এগুলোর গায়ে মর্মর পাথর বসানো এবং স্বর্ণের কারুকাজ করা।
স্তম্ভগুলোর একটি ‘উস্তুওয়ানা সারির’। এখানে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইতিকাফ করতেন এবং রাতে আরামের জন্য তাঁর বিছানা এখানে স্থাপন করা হতো। এ স্তম্ভটি হুজরা শরিফের পশ্চিম পাশে জালি মোবারকের সঙ্গে রয়েছে। ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, সেখানে তাঁর জন্য খেজুরপাতার তৈরি মাদুর এবং একটি বালিশ রাখা হতো। বুখারি শরিফে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) মধ্যস্থতার জন্য এই স্তম্ভের কাছে বিছানা পেতে বসতেন।
আরেকটি স্তম্ভ ‘উস্তুওয়ানা আয়েশা’। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘আমার মসজিদে এমন একটি জায়গা রয়েছে, লোকজন যদি সেখানে নামাজ পড়ার ফজিলত জানত, তাহলে সেখানে স্থান পাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করত।’ স্থানটি চিহ্নিত করার জন্য সাহাবায়ে কেরাম চেষ্টা করতেন। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ইন্তেকালের পর হজরত আয়েশা (রা.) তাঁর ভাগনে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রা.)–কে সে জায়গাটি চিনিয়ে দেন। এটিই সেই স্তম্ভ। এর অবস্থান উস্তুওয়ানা উফুদের পশ্চিম পাশে রওজায়ে জান্নাতের ভেতর।
আরও দেখুনঃ
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post