ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নারীবিদ্বেষ থেকে পাঁচ নারীকে কুপিয়ে জখম করেছেন স্থানীয় এক যুবক। এর মধ্যে এক নারী মারা গেছেন। তাদের বাঁচাতে গিয়ে আরও তিন পুরুষ হামলার শিকার হয়েছেন। অভিযুক্ত ওই যুবকের নাম সিহাব। তিনি বিভিন্ন সময় পুরুষদের নামাজ-রোজার বিষয়েও ‘সবক’ দিতেন।
এইচএসসি পাসের পর সিহাব মাদরাসায় পড়াশোনা করেন। বছর চারেক আগে মাদরাসা থেকে আসার পর নারীদের প্রতি অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকেন। তিনি এলাকায় নার বিদ্বেষী যুবক হিসেবেই পরিচিত।
গতকাল বুধবার সকাল ১১টার দিকে পৌর এলাকার ভাদুঘরের সাবর বাড়ি রেলগেট এলাকায় এই হামলার ঘটনা ঘটে। এলাকার লোকজন ঘাতক সিহাব মিয়াকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। এ সময় পুলিশের কাছেও সে নারীবিদ্বেষী কথাবার্তা বলে। এখন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে পুলিশ পাহারায় তার চিকিৎসা চলছে। সেখানেও তাকে বিড়বিড় করে কথা বলতে শোনা যায়।
হামলার সময় ব্যবহৃত দাটি পানিতে ফেলে দেওয়া হয়েছে বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। এবিষয়ে থানায় কোনো মামলা হয়নি।
নিহত নারী আরজুদা বেগম ভাদুঘর এলাকার প্রয়াত আলী আকবরের স্ত্রী। আহত হয়েছেন সাজু বেগম, নয়ন মণি, মোখলেস মিয়া, ওমর আলী, খালেদা বেগম, রাবেয়া বেগম । এ ছাড়া তার হামলা থেকে বাঁচতে গিয়ে খাদিজা আক্তার নামে এক নারী আহত হন। ঘাতক সিহাব ভাদুঘর এলাকার জামাল মিয়ার ছেলে।
এলাকাবাসী, পুলিশ ও ভুক্তভোগী পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত তিন থেকে চার বছর ধরেই সিহাব মিয়া অস্বাভাবিক আচরণ করত। বিশেষ করে নারীদের দেখলেই গালমন্দ করত। নারীরা ধর্মীয় আইন না মেনে কেন ঘরের বাইরে, তারা কেন সাজগোজ করে- এসব নিয়ে কথা বলত। আবার নারীসহ পুরুষদেরকেও সে খুব সুন্দরভাবে নামাজ-রোজার ব্যত্যয় না ঘটানোসহ ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার অনুরোধ করত।
ঘটনার সূত্রপাত গত মঙ্গলবার। নারীবিদ্বেষী কথা বলা ও একে-ওকে মারধরের জের ধরে আরজুদা বেগমের ছেলে নাজির হোসেন ওই দিন সিহাবের মা লাকী বেগমের কাছে বিচার দেন। লাকী বেগম এ বিষয়ে কথা বললে খেপে যায় সিহাব। একপর্যায়ে তার মাকে ধাওয়া করে পাশের বাড়িতে দিয়ে আসে।
বুধবার সকালে প্রতিবেশী গৃহবধূ খাদিজা বেগমকে ঘরের বাইরে দেখে ঢিল ছোড়ে। খাদিজা ভয়ে ঘরে চলে যান। কিছুক্ষণ পর সিহাব ছাদে বসে একটি দা ধার দেয়। এর একটু পরেই খাদিজাদের বাড়িতে হামলা চালায় সিহাব। এ সময় বাইরে বের হয়ে খাদিজাকে কুপিয়ে আহত করে। এরপর সে বাইরে বের হয়ে নারীদের দেখা মাত্রই কোপাতে থাকে। মোখলেছ ও ওমর আলী নামে দুই ব্যক্তি এ কাজে বাধা দিলে তাদেরও কোপায় সিহাব।
খাদিজা জানায়, নারীদের প্রতিই সিহাবের যত ক্ষোভ ছিল। তার ভয়ে বাড়ির আশপাশের ১০-১৫ ঘরের নারীরা আতঙ্কে থাকত। সে বের হলেই দরজা আটকে বসে থাকত। বুধবারের ঘটনার জন্য সিহাবের মাকেও দায়ী করে খাদিজা। কারণ দা ধার দেওয়ার সময় সিহাবের মা-ও তার সামনে ছিল।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি থাকা অষ্টম শ্রেণির মাদরাসাছাত্রী নয়ন মণি জানায়, ‘তুই বাইরে কেন’ এ কথা বলেই কোপাতে থাকে সিহাব। পাশে থাকা আমার এক ভাবিকেও তখন সে কোপাতে যায়। তবে কয়েকজন পুরুষ সামনে থাকলেও তাদের কিছু করেনি সে। তবে বাধা দিতে গিয়ে মোখলেছ নামে এক ব্যক্তি আহত হন।
আরজুদা বেগমের ছেলে নাজির হোসেন বলেন, ‘আমার চোখের সামনেই মাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। মা বাসার সামনে বসে ছিলেন। একটু দূরেই আমি ঘাস কাটছিলাম। দূর থেকে দেখি হুট করে এসে মাকে কোপানো শুরু করেছে সিহাব।’
তিনি অভিযোগ করেন, সিহাব নারীদের দেখতে পারত না। প্রায়ই সে নারীদের গালমন্দ করত। একবার পুলিশ গিয়ে তাকে ধরেও আনে। পরিবারের কাছে বিচার দিয়েও কোনো লাভ হয়নি। বরং তারা উল্টো বলত সিহাবকে পাগল বানিয়ে পাবনা পাঠানোর ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
এলাকার দুই মুরব্বি অভিযোগ করেন, মাদরাসা থেকে আসার পরই সিহাব এমন আচরণ করত। তবে সে যখন ধর্মীয় বিষয়ে পুরুষদের উপদেশ দিত তখন মনে হতো সে খুবই ভালো মানুষ। তার এমন ঘটনার পর এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেক নারী দৌড়ে গিয়ে প্রাণে রক্ষা পান।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. এমরানুল ইসলাম গনমাধ্যমকে বলেন, ‘ঘাতক সিহাব নারীবিদ্বেষী বলে এলাকার মানুষজন জানতে পেরেছি। গ্রেপ্তারের পরও সে নারীবিদ্বেষী কথা বলতে থাকে। এ বিষয়ে মামলা হলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post