কুপিয়ে আহত করা প্রবাসীদেরকেই ‘মিথ্যা মামলা’ দিয়ে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে। লক্ষ্মীপুরে ঘটেছে এমন ঘটনা। দুই প্রবাসীকে কোপানোর ঘটনায় দায়ের করা মামলায় জামিনে বেরিয়ে নুর উদ্দিন নামক ওই ব্যক্তি এই কান্ড ঘটিয়েছেন। অভিযুক্ত নুর উদ্দিন সদর উপজেলার লাহারকান্দি ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক।
এ ঘটনায় গ্রেফতার এড়াতে এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ভুক্তভোগী ওই দুই প্রবাসী। স্থানীয়রা বলছেন, দায়েরকৃত মামলার ঘটনাস্থল ও সময় সবই কাল্পনিক। আর পুলিশ বলছে, এ বিষয়ে তদন্ত চলছে, প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনসহ জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।
জানা যায়, গেল বছরের ৩০ জুলাই মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে সৌদি প্রবাসী জসিম উদ্দিন ও কাতার প্রবাসী আফসার উদ্দিন আসিফকে প্রকাশ্যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করে স্থানীয় যুবলীগ নেতা নূরউদ্দিন। ওই দিন দুপুরে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ শেষে লক্ষ্মীপুর শহরে নিজ বাসায় ফেরার পথে সদর উপজেলার লাহারকান্দি ইউনিয়নের চাঁদখালী গ্রামের আবদুল জাব্বার মার্কেটের সামনে এঘটনা ঘটায় ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা নুর উদ্দিন। ঘটনার পর পরই স্থানীয়রা ঘটনাস্থল থেকে ওই দুই প্রবাসীকে মূমুর্ষূ অবস্থায় উদ্ধার করে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে পাঠায়। অবস্থার অবনতিতে তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে পাঠান চিকিৎসক। এঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
পরে ৬ আগস্ট এঘটনায় আহত প্রবাসী জসিম উদ্দিনের বাবা শাহ আলম বাদী হয়ে নুর উদ্দিনসহ ৪ জনকে আসামি করে লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর আদালতে আত্মসমর্পণ করলে আদালত নুর উদ্দিনের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠায়। দীর্ঘ তিন মাস কারাভোগের পর ১২ জুন জামিনে বের হয়ে আসেন নুরউদ্দিন।
এদিকে গত ৩ জুলাই লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের লাহারকান্দি’র বকুলের দোকান সংলগ্ন এলাকায় যুবলীগ নেতা নুর উদ্দিনের মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে তাকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করা হয়েছে উল্লেখ করে ৫ জুলাই তিনজনের নামে নুর উদ্দিনের বাবা আবুল কালাম লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় প্রবাসী জসিম উদ্দিন, আফসার উদ্দিন আসিফ ও স্থানীয় নির্মাণ শ্রমিক রাশেদকে আসামি করা হয়।
প্রবাসী জসিমের বাবা শাহ আলম বলেন, ‘জামিনে এসেই নুরউদ্দিন তার বাবাকে বাদী করে আমার ছেলে জসিম উদ্দিনকে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা দিয়ে বাড়ি ছাড়া করে রেখেছেন। ওই মামলায় নুর উদ্দিন তার নিজের আপন ভাই ও শ্যালককে সাক্ষী হিসেবে রেখেছে। আমার সৌদি ফেরৎ ছেলে ছুটিতে বাড়ি এসেছিল। সে সেখানে ড্রাইভিং করতো। ভালোই রোজগার ছিল তার। কিন্তু নুরউদ্দিনের কোপানোর কারণে তার আর সৌদি যাওয়া হলো না।’
এদিকে লক্ষ্মীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু বকর ছিদ্দিক জানান, যুবলীগ নেতা নুর উদ্দিনের দায়েরকৃত মামলার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানার অফিসার ইনচার্জকে খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। মামলার বিষয়বস্তুর কোনো সত্যতা না পাওয়া গেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।
স্থানীয়দের আশা তদন্তের মাধ্যামে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করে জড়িতদের বিরুদ্ধে পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post