বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্যে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ঘোষিত এই ভিসা নীতিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে মনে করা যে কোনো বাংলাদেশি নাগরিকের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে। বুধবার (২৪ মে) তার অফিসিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে এ বার্তা দেওয়া হয়।
নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপির কারণে অতি সম্প্রতি আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়ার কিছু ব্যক্তির ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। নাইজেরিয়ায় এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনের এক মাস পর মার্কিন প্রশাসন জানায়, কারচুপির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এমন বিধিনিষেধ আরোপ এবং এর প্রভাব কী কী হবে সেটি জানিয়েছেন কয়েকজন বিশেষজ্ঞ।
তাদেরই একজন নাইজেরিয়ার ট্রাভেল এজেন্সি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুসান আকাপোরায়ে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সাধারণ মানুষকে ভিসা পেতে সহায়তা করা এই নারী জানিয়েছেন, যাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তারা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ভিসা পাবেন না।
তিনি বলেছেন, ‘যদি ওই ব্যক্তি আগে ভিসা না পেয়ে থাকেন এবং তিনি ভিসার আবেদন করতে চান, কিন্তু ওই ব্যক্তি যদি নির্বাচনে কারচুপির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হিসেবে অভিযুক্ত হন, তাহলে উক্ত ব্যক্তির ভিসার আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হবে।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘নিষেধাজ্ঞা পাওয়ার আগেই যিনি ভিসা পেয়েছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ক্ষেত্রে বাঁধার সম্মুখীন হবেন। তিনি হয়তবা প্রবেশই করতে পারবেন না কারণ তিনি আসা মাত্রই তার ভিসা বাতিল করে দেওয়া হবে।’
ট্রাভেল ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এই নারী বিশেষজ্ঞ আরও বলেছেন, ‘যারা নির্বাচনে কারচুপি করেছেন এবং তাদের যদি চিহ্নিত করা যায়, তাহলে তাদের সবার নাম ও ছবি যুক্তরাষ্ট্রের সব সীমান্ত বা ভিসা অফিসগুলোতে থাকবে।’
তবে সে-ই আদেওয়ালে নামে অপর এক বিশেষজ্ঞ বলেছেন, ‘ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া মানেই তা তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে এমনটি নয়। যদিও নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্তদের আটকানোই এটির প্রধান লক্ষ্য।’
তিনি জানিয়েছেন, ভিসা বিধিনিষেধ পাওয়া ব্যক্তিরা বিশেষ সুবিধা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে পারেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে যদি তারা প্রবেশের সুযোগ পেয়েও থাকেন তাহলে অনেক কঠিন প্রক্রিয়ার মধ্যে যেতে হবে। উদাহরণস্বরূপ— ‘একটি কূটনৈতিক ভিসা বা পাসপোর্টকে সাধারণ ভিসায় নামিয়ে ফেলা হতে পারে এবং বিশেষ সুবিধা যেমন, পতি-পত্নীর ওয়ার্কিং স্ট্যাটাস প্রত্যাহার করা হতে পারে।’
অপরদিকে বৈশ্বিক রেসিডেন্সি ও নাগরিকত্ব বিশেষজ্ঞ স্টিভ ইদুহ বলেছেন, ‘যখন কোনো দেশ কোনো ব্যক্তি বা দলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তখন তারা ওই দেশে আসতে পারেন না।’ তিনি জানিয়েছেন, কিছুক্ষেত্রে বিধিনিষেধ ব্যক্তি পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকে এবং কিছুক্ষেত্রে অফিসিয়াল কাজের ক্ষেত্রেও বিধিনিষেধ থাকে।
তিনি বলেছেন, ‘নিষেধাজ্ঞা দেওয়া দেশগুলো নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্তদের ব্যক্তি পর্যায়ে প্রবেশে বাধা দিতে পারে। কিন্তু তারা যদি কোনো দেশের প্রতিনিধি হয়, তাহলে ওই বিধিনিষেধ বা নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করা হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে ওই প্রতিনিধির কাজ ও বিধিনিষেধের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘কিছু ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা এবং কিছু ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। নিষেধাজ্ঞা মানে হলো তারা একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য উক্ত দেশে প্রবেশ করতে পারবেন না। অপরদিকে বিধিনিষেধ মানে হলো ব্যক্তি পর্যায়ে বাধা আরোপ করা।’
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post